Apan Desh | আপন দেশ

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১৯ মে ২০২৩

আপডেট: ১৪:১৮, ১৯ মে ২০২৩

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই

ফাইল ছবি

নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের দামে। রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি—উভয় বাজারেই দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁতে চলেছে। আকারে তুলনামূলক ছোট ও ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকার দরে।

এক মাস আগে অর্থাৎ ঈদের আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। ১৫ দিন আগেও দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।

শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় মূল্য বৃদ্ধির এ চিত্র। পেঁয়াজের এই মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ দোষারোপ করছেন ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, মাছ-মাংস ও মুদি দোকানের জিনিসপত্রের দাম রয়েছে মোটামুটি আগের মতোই।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রুহুল আমিন। শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল সকাল বাজার করতে গেছেন মালিবাগ বাজারে। বাজারে যা কিনেছেন সবই কিনেছেন বাড়তি দামে, তবে এর মধ্যেও পেঁয়াজ তাকে অবাক করেছে। রুহুল জানান, ১৫ দিন আগেও তিনি ৫৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছেন, সেই পেঁয়াজ আজ তিনি কিনলেন ৮০ টাকায়। তিনি প্রশ্ন রাখেন- বাজার মনিটরিংয়ের যাদের দায়িত্ব তারা আসলে কী করছে?

একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের কাজ করেন রহিম মিয়া। বাড়ির মালিকের যাবতীয় বাজার তিনিই করেন। তিনি বলেন, আজকে পেঁয়াজ কিনলাম ৮৪ টাকা কেজি।  চার-পাঁচদিন আগে কিনেছি ৭০ টাকা কেজিতে। দাম বেড়েই চলছে। 

মালিবাগ বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম বলেন, যা শুনেছি তাতে দেশে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁজারের মজুত রয়েছে। সরবরাহও আছে, তবে অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সে কারণে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের কাঁধে এই বাড়তি দামের জুলুম পড়েছে। আসলে যারা বাজার মনিটরিং করেন তাদের ব্যাপকভাবে তৎপর হয়ে এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকার মুদির দোকানী সুমন আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনা পড়ছে, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আজ বাজার চলছে ৮০ টাকায়। যখন কেনা দাম কম পড়বে তখন আমরাও কম দামে বিক্রি করব। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পর থেকে আমাদের মতো ছোট দোকানেও পেঁয়াজ বিক্রি কমেছে। আগে যদি কোনো ক্রেতা দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতেন, এখন তারা এক কেজি করে কিনছেন। তাই আমরাও তুলনামূলক কম পেঁয়াজ আনছি বাজার থেকে।

আজকের বাজারে আলু ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০-৯৫ টাকা, আদা ২৬০-৩২০ টাকা ও  রসুন ১৬০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই।  পেঁপে ৮০ টাকা, বেগুন  ৮০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ৭০-১২০ টাকা,  টমেটো ৪০-৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা,  চাল কুমড়া ৬০ টাকা,  ঢেঁড়স ৬০-৮০ টাকা, পটল ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা,  ধুন্দল ৮০ টাকা, সজনে ১৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১৬০ টাকা, লাউ ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি।

ইলিশ মাছ ১৭০০-২০০০, রুই মাছ ৩০০-৪০০, কাতল মাছ ৪৫০-৫০০, কালিবাউশ মাছ ৫০০-৫৫০, চিংড়ি মাছ ৭০০-৯০০, কাঁচকি মাছ  ৫০০, টেংরা মাছ ৭০০, পাবদা মাছ ৪০০ টাকা কেজি। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯৮-২১৫, দেশি মুরগি ৬৮০, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি।

এ ছাড়া মুদি দোকান ঘুরে জানা যায় চিনি, তেল ডালের মতো দ্রব্যাদির দাম। এসব পণ্যের দাম আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। মুসরের ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১৩০ টাকা, খোলা আটা ৫৭ টাকা, খোলা ময়দা ৬৩ টাকা,  সয়াবিন তেল (প্যাকেট) ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৮৮ টাকা ও খোলা সরিষার তেল ২৫০ টাকা লিটার। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্চ থেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে, ফলে দাম বেড়েছে। উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর গত মাস পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ মাসে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দুই লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসাবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবু এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজিতে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। 

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, বৃহস্পতিবারও খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার একই দাম চলছে বাজারে।

টিসিবির সহকারী কার্যনির্বাহী (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই এই দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। যা বর্তমানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির বাজার পর্যালোচনার তথ্য মতে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত বছর এই সময় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৮ থেকে ৫০ টাকায় অর্থাৎ এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা জানান, বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বুধবার ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা। আর এক সপ্তাহ আগে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তার দাবি, সরকার দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিলে দাম কেজিতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমে যাবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এক মাসের মধ্যে  পেঁয়াজের এমন দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুক্রবার রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা লক্ষ্য রাখছি। আপাতত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। যদি দু-একদিনের মধ্যে দাম না কমে তাহলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়