Apan Desh | আপন দেশ

অমিয় চক্রবর্তীর বিখ্যাত চারটি কবিতা

অমিয় চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ১১:০০, ৪ মে ২০২৪

অমিয় চক্রবর্তীর বিখ্যাত চারটি কবিতা

প্রতীকী ছবি

রাত্রি

অতন্দ্রিলা, ঘুমোওনি জানি তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে বলি, শোনো, সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায় —সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি— কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন, আলাদা নিশ্বাসে—এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁই কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা— অতন্দ্রিলা, হঠাত্ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না, দেখি তুমি নেই।

বৃষ্টি

কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলধারে। ফাল্গুন বিকেলে বৃষ্টি নামে। শহরের পথে দ্রুত অন্ধকার। লুটোয় পাথরে জল, হাওয়া তমস্বিনী; আকাশে বিদ্যুৎজ্বলা বর্শা হানে ইন্দ্রমেঘ; কালো দিন গলির রাস্তায়। কেঁদেও পাবে না তাকে অজস্র বর্ষার জলধারে। নিবিষ্ট ক্রান্তির স্বর ঝরঝর বুকে অবারিত। চকিত গলির প্রান্তে লাল আভা দুরন্ত সিঁদুরে পরায় মূহুর্ত টিপ, নিভে যায় চোখে কম্পিত নগরশীর্ষে বাড়ির জটিল বোবা রেখা। বিরাম স্তম্ভিত লগ্ন ভেঙে আবার ঘনায় জল। বলে নাম, বলে নাম, অবিশ্রাম ঘুরে-ঘুরে হাওয়া খুঁজেও পাবে না যাকে বর্ষায় অজস্র জলধারে। আদিম বর্ষণ জল, হাওয়া, পৃথিবীর। মত্ত দিন, মুগ্ধ ক্ষণ, প্রথম ঝঙ্কার অবিরহ, সেই সৃষ্টিক্ষণ স্রোত:স্বনা মৃত্তিকার সত্তা স্মৃতিহীনা প্রশস্ত প্রচীর নামে নিবিড় সন্ধ্যায়, এক আর্দ্র চৈতন্যের স্তব্ধ তটে। ভেসে মুছে ধুয়ে ঢাকা সৃষ্টির আকাশে দৃষ্টিলোক। কী বিহ্বল মাটি গাছ, দাঁড়ানো মানুষ দরজায় গুহার আঁধারে চিত্র, ঝড়ে উতরোল বারে-বারে পাওয়া, হাওয়া, হারানো নিরন্ত ফিরে-ফিরে- ঘনমেঘলীন কেঁদেও পাবে না যাকে বর্ষায় অজস্র জলধারে।

পিঁপড়ে

আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক কেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা— স্তব্ধ শুধু চলায় কথা বলা— আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তার ঐ ভুবন ভ’রে রাখুক, আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মাখুক। ভয় করে তাই আজ সরিয়ে দিতে কাউকে, ওকে চাইনে দুঃখ দিতে। কে জানে প্রাণ আনলো কেন ওর পরিচয় কিছু, গাছের তলায় হাওয়ার ভোরে কোথায় চলে নিচু— আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে সেই অতলে ডাকুক। মাটির বুকে যারাই আছি এই দুদিনের ঘরে তার স্মরণে সবাইকে আজ ঘিরেছে আদরে।

সাবেকি

গেলো গুরুচরণ কামার, দোকানটা তার মামার, হাতুড়ি আর হাপর ধারের (জানা ছিল আমার) দেহটা নিজস্ব। রাম নাম সত্ হ্যায় গৌর বসাকের প’ড়ে রইল ভরন্ত খেত খামার। রাম নাম সত্ হ্যায়। দু-চার পিপে জমিয়ে নস্য হঠাত্ ভোরে হ’লো অদৃশ্য— ধরনটা তার খ্যাপারই— হরেকৃষ্ণ ব্যাপারি। রাম নাম সত্ হ্যায় ছাই মেখে চোখ শূণ্যে থুয়ে, পেরেকের খাট তাতে শুয়ে পলাতক সেই বিধুর স্বামী আরো অপার্থিবের গামী রাম নাম সত্ হ্যায় রান্না রেঁধেকান্না কেঁদে, সকলের প্রাণে প্রাণে বেঁধে দিদি ঠাকরুন গেলেন চ’লে— খিড়কি দুয়োর শূণ্যে খোলে! রাম নাম সত্ হ্যায় আমরা কাজে রই নিযুক্ত, কেউ কেরানি কেউ অভুক্ত, লাঙল চালাই কলম ঠেলি, যখন তখন শুনে ফেলি রাম নাম সত্ হ্যায় শুনবো না আর যখন কানে বাজবে তবু এই এখানে রাম নাম সত্ হ্যায়।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়