Apan Desh | আপন দেশ

‘গণমাধ্যম স্বাধীন, অপপ্রচার করলে ব্যবস্থা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৩, ২ মে ২০২৪

আপডেট: ২০:১২, ২ মে ২০২৪

‘গণমাধ্যম স্বাধীন, অপপ্রচার করলে ব্যবস্থা’

ছবি: আপন দেশ

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছে নেই। তবে যারা সরকারের উন্নয়নের অপপ্রচার করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। 

বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে ধানমন্ডিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে 'বর্তমান বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা' শীর্ষক সভায় প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

আলোচনা সভার আয়োজক ছিলেন- মাইডাস সেন্টারে  ইউনেস্কো, টিআইবি এবং আর্টিকেল নাইন্টিন। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। 

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, রামপাল নিয়ে অনেক মিথ্যাচার হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যা হচ্ছে, ভারত নিয়ে মিথ্যাচার। রিপোর্টিংয়ের সততা থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই, তবে মিথ্যাচারকে নয়। সরকারের কার্যক্রম নিয়ে যেকোনো সমালোচনা যে কেউ করতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে যখন ধারাবাহিক মিথ্যাচার করা হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে।

তিনি বলেন, সরকারের সমালোচনা করা সমস্যা নয়। সত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে যেকোন সমালোচনা করলে সেটা সরকার স্বাগত জানায়। যখন পরিকল্পিতভবে অপতথ্যের প্রচার করা হয়, দেশের উন্নয়ন থামানোর জন্য সাংবাদিকতার অপব্যবহার করা হয়, অপতথ্য প্রচারের জন্য পরিবেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেটিই সমস্যা তৈরি করে। এক্ষেত্রে অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা বন্ধে সরকার, পেশাদার গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে অংশীদার হয়ে কাজ করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের সর্বস্তরে অপতথ্যের অস্তিত্ব বিরাজ করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবই কার্যকর, যখন এর ব্যবহার করা হয়। অপতথ্যের বিস্তৃতির মাধ্যমে যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার করা হয়, তখন এটি অত্যন্ত নেতিবাচক হয়। এটি সমাজে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে নেতিবাচকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জনগণের ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে আমাদেরক সতর্ক থাকতে হবে। অপতথ্য প্রতিরোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আমাদের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের মাধ্যমে এ বিষয়গুলোর সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। আমরা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করেছি, জীবন উৎসর্গ করেছি এবং একটি দেশ তৈরি করেছি।

গণমাধ্যমের সঠিক ব্যবহারের গুরুত্ব আরোপ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলবো তখন সেটা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে হতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যাতে কোন গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অপব্যবহার না হয়। যখনই আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করবো, তা যেনো গণমাধ্যমের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়, অপব্যবহারের ক্ষেত্রে নয়।

গণমাধ্যমের বিকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত পনেরো বছরে গণমাধ্যমের বিস্তৃতির জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যমের দ্রুততার সঙ্গে বিকাশ হয়েছে। সরকারের যদি গণমাধ্যম্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে থাকতো তাহলে সরকার গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চাইতো না। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকারের একটি উদাহরণ।

তিনি বলেন, সরকার জলবায়ু ও পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে একশো বছরের পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তার ২১০০ সালে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী না হলেও, বাংলাদেশ এর অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে, তাই যারা এর বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদেরকে সরকার মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই। তাই পরিবেশ সুরক্ষা পক্ষে প্রতিবেদন বা সাংবাদিকতা সরকার অবশ্যই স্বাগত জানাবে। কারণ ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী আগামী একশো বছরে দীর্ঘমেয়াদে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা, ভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ নিয়ে সরকার কাজ করছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার আমরা পরিবেশের সুরক্ষা দিতে চাই। যারা এর বাইরে অন্য কিছু করবে তাদের ব্যাপারে সাংবাদিকরা সঠিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সেটাকে সরকার স্বাগত জানাবে। কারণ এটি পরিবেশের ব্যাপারে সরকারের কেন্দ্রীয় অঙ্গীকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সরকার শুধু উন্নয়নে বিশ্বাস করে না বরং টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করে, যা পরিবেশগত সুরক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে। 

তিনি বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে মৌলিক সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যে কোনো ধরনের সমালোচনা সব সময় স্বাগত জানাবে এবং দেশের যেকোনো প্রান্তের প্রতিবেদক বা সাংবাদিককে সুরক্ষা দেবে। সত্য ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে এমনকি সরকারের সমালোচনা করলেও সেটি সরকার প্রশংসা করবে ও স্বাগত জানাবে।

প্যানেল আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও অফিস প্রধান সুজান ভাইজ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক। প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন আর্টিকেল নাইন্টিন-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম।

প্যানেল আলোচনার পূর্বে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন করেন দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান শামসুদ্দিন ইলিয়াস এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক উসরাত ফাহমিদা।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়