Apan Desh | আপন দেশ

আগেও একাধিকবার প্লেনে ওঠার চেষ্টা করেছে জুনায়েদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১১:১৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আগেও একাধিকবার প্লেনে ওঠার চেষ্টা করেছে জুনায়েদ

ফাইল ছবি

হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট, টিকিট ও বোর্ডিং কার্ড ছাড়াই জুনায়েদ মোল্লা নামের ১০-১২ বছরের একটি শিশু কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও প্লেনে চড়ার চেষ্টা করেছে সে। এবার কৌশল পাল্টে বিমানবন্দরে ঢোকে শিশুটি। 

এ ঘটনায় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি বিভাগের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। যে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এ ঘটনা ঘটে, সেই কুয়েত এয়ারলাইন্সকে শোকজ করা হয়েছে। 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ছেলেটি ব্রোকেন ফ্যামেলির, মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সে মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছে। ছেলেটিকে মেনে নেয়নি তারা। তবে সে খুবই ইন্টিলিজেন্ট। সে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকেছে। অন্য যাত্রীকে বাবা-মা পরিচয় দিয়ে সে ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটির লোকদের ফাঁকি দিয়েছে। দূরে থাকা নারীকে মা বলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়েছে। সিকিউরিটির লোকজনও সহজ-সরলভাবে তাকে ছেড়ে দিয়েছে। ইমিগ্রেশনে আরেক পরিবারের মাঝখানে ঢুকে কাউন্টারের নিচে লুকিয়ে থেকে পরে সুযোগ বুঝে পার হয়েছে। 

তিনি বলেন, যেভাবেই পার হোক, এটি মেনে নেয়া অসম্ভব। কারণ, আন্তর্জাতিক যাত্রী হিসেবে একজন শিশুকেও পাসপোর্ট দেখিয়ে পার হতে হয়। এমনকি যে কোনো প্রাণী পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে।

তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, ছেলেটি গোপালগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। পাঁচ দিন আগে সে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। তবে বাসা থেকে পালানো এটি তার প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল সে। পরে নিজে নিজেই বাড়িতে ফিরে যেত। তাই এবার পালানোর পর বাবা-মা আর পুলিশে খবর দেননি।

তদন্ত সূত্র জানায়, শিশুটি জানিয়েছে, একান্ত কৌতূহলবশত প্লেনে উঠেছে। তিন মাসে চারবার বাড়ি থেকে পালিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে যায় সে। এর আগেও প্লেনে চড়তে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। এবার কৌশল পাল্টে বিমানবন্দরে ঢোকে শিশুটি। একটি পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে মিশে যায় সে। তাই কেউ ধরতে পারেনি যে ছেলেটি সেখানে একা কিংবা তার কাছে কোনো পাসপোর্ট বা বোর্ডিং পাশ নেই।

শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা জানান, তার ভাতিজা জোনায়েদ মোল্লা খুবই দুরন্ত। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে সে কয়েকবার পালিয়ে আসে। পরে তাকে মাদ্রাসা থেকে এনে স্কুলে ভর্তি করা হয়। তবু সে মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে।

ইউসুফ মোল্লা বলেন, জোনায়েদের বিমানে উঠে পড়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না। সম্প্রতি বিমানবন্দর থানা থেকে আমাকে ফোন করা হলে বিষয়টি জানতে পারি। এরপর তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সে বাড়িতেই আছে।

তার সঙ্গে এভসেক ও বিমানবন্দর থানা পুলিশ একাধিকবার কথা বললেও এর চেয়ে বেশি তথ্য পায়নি তারা।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিয়া বলেন, আগে মাদ্রাসায় পড়লেও বর্তমানে শিশুটি পড়াশোনা করছে না। পরিবার জানে সে বাড়ি থেকে বের হলেও কয়েকদিন পর আবার ফিরে আসবে, তাই পুলিশে জানায়নি। যেহেতু ঘটনাটি একজন শিশু ঘটিয়েছে, আমরা শিশুদের ওইভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি না। তবে সে জানিয়েছে, বিমান দেখতে বিমানবন্দরে এসেছে, লোকজনের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে প্লেনে উঠেছে।

এর আগে গত সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে উঠে পড়ে জোনায়েদ মোল্লা।

বিমানটি উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেয়ার আগ মুহূর্তে জানা যায়, সে ওই ফ্লাইটের যাত্রী নয়। পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়া বিমানে উঠে পড়েছিল সে। পরে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়