Apan Desh | আপন দেশ

বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় ১১ প্রাণহানি

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:২০, ৩ মে ২০২৪

বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় ১১ প্রাণহানি

প্রতীকী ছবি

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃহস্পতিবার (২ মে) ভোর থেকে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। এদিন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটে বৃষ্টিসহ বজ্রবৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃষ্টি আস্তে আস্তে রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ খবরে পুরান ঢাকায় বৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার আকাশ গুড়গুড় শব্দ করছিল। 

এদিকে বৃহস্পতিবারের বৃষ্টির সময় দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে নারীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চার, রাঙামাটিতে তিন, কক্সবাজারে দুই এবং খাগড়াছড়ি ও সিলেটে একজন করে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- 

কুমিল্লা: জেলার চান্দিনা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও দেবিদ্বার উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বিকাল ও সন্ধ্যায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি জানিয়েছেন। 

নিহতরা হলেন- কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সূর্যনগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম (৫০), চান্দিনার কিছমত শ্রীমন্তপুর গ্রামের দৌলতুর রহমান (৪৭), বুড়িচংয়ের পাঁচোড়া নোয়াপাড়া গ্রামে আলম হোসেন (৩৫) এবং দেবিদ্বারের ধামতী গ্রামের মোখলেসুর রহমান (৫৮)।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, আমরা বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি। সঠিক সংখ্যা জানতে আরও সময় লাগবে। জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার দুই ইউনিয়নে বৃষ্টি থেকে লবণ রক্ষা করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই চাষির মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্লাদিয়া এলাকার জমির হোসেনের ছেলে মো. দিদার হোসেন (২৫) এবং রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে আরাফাতুর রহমান (১৩)।

স্থানীয়দের বরাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, ভোর থেকে পেকুয়ায় থেমে থেমে বজ্রপাতসহ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে মাঠে থাকা লবণ পলিথিনে ঢেকে রাখতে যান দিদার হোসেনসহ পরিবারের আরও দুই-তিন জন। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান দিদার। 

তিনি বলেন, প্রায় একই সময়ে রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টি থেকে লবণ রক্ষা করতে গিয়ে করতে গিয়েছিল কিশোর আরাফাতুর রহমান। তিনিও একইভাবে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের মরদেহ স্বজনরা বাড়ি নিয়ে গেছে বলেও জানান পেকুয়ার ইউএনও।

আরও পড়ুন <> সোনার দাম কমলো ১ হাজার ৮৭৮ টাকা

রাঙামাটি: রাঙামাটির সদর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে; এ সময় আরও অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। 

নিহতরা হলেন, শহরের সিলেটি পাড়ার বাসিন্দা মো. নজির (৫০) এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপাকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বাহারজান বেগম (৫৫) এবং সাজেকের লংথিয়ান পাড়ার তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭)।

রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যাসমিন চাকমা বলেন, ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক এলাকার লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার বলেন, অনেক দিন পর সকালে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়। এতে রূপাকারী ইউনিয়নে বাহারজান নামে একজন এবং সাজেকে তনিবালা ত্রিপুরা নামের আরেক নারী নিহত হন।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়ার সময় বজ্রপাতে সাতজন আহত হয়েছেন। 

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক শওকত আকবর বলেন, সকালে শহরের সিলেটি পাড়া থেকে নজিরকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িক মাটিরাঙ্গা উপজেলায় বৃষ্টির মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ইয়াছিন আরাফাত উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে। 

স্বজনদের বরাতে বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, বৃষ্টির সময় উঠানের পাশেই আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।  
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী বলেন, নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। 

সিলেট: সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বোরো ধান কাটাতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে; এ সময় আরও দুইজন গুরুত্বর আহত হয়েছেন। 

নিহত বাবুল আহমদ (৪৮) উপজেলার দক্ষিণ কুয়রেরমাটি গ্রামের বাসিন্দা। আহতরা হলেন, নিহত বাবুলের ভাতিজা ফাহিম আহমদ (১৭) ও মানিকপুর গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (২০)।

স্থানীয়দের বরাতে কানাইঘাট থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুম বলেন, দুপুরে ভাতিজা ফাহিম আহমদ ও প্রদীপ বিশ্বাসকে নিয়ে বাবুল আহমদ স্হানীয় শফিক হাওয়রে বর্গা জমিতে বোরো ধান কাটতে যান। এ সময় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে তারা গুরুতর আহত হন। 

পরে তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বাবুল আহমদকে মৃত ঘোষণা করেন। 

মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে; আহতদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ওসি।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়