ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনিক পাল নিখোঁজ হয়েছেন। গত ৩ জুলাই ইন্ডিয়ানা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। মেধাবী এ শিক্ষকের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ক্রমশ রহস্য দানা বাঁধছে।
স্থানীয় পুলিশের দাবি, অনিক নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে তারা অনিকের মরদেহ কিংবা কোনো ক্লুর খোঁজ দিতে পারেননি। পুলিশের এ দাবি মানছেন না অনিক পালের পরিবার ও প্রবাসীরা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা চেয়েছেন।
দারিদ্র্য জয় করে এগিয়ে যাওয়া অনিক পাল তুখোড় মেধাবী ছিলেন। পরিবারে আছেন দুই বোন আর মা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৬ সেই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কোভিডের মধ্যেই ২০২১ সালের আগস্টে পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পান তিনি।
ঢাকায় বেড়ে উঠা অনিক নিখোঁজ হওয়ার মাত্র ২৫ দিন আগে বাংলাদেশ থেকে পার্ডুতে ফিরেছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তির জীবনে কী ঘটেছে বুঝতে পারছেন না স্বজনরা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য ইক্সোপনেন্ট’ খবরে পুলিশ বলছে, অনিক পাল স্থানীয় জন টি মেয়ারস ব্রিজ থেকে ওয়াব্যাস নদীতে রাত আড়াইটার দিকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। পরের দিন সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নদীতে খোঁজাখুঁজির পর তার কোনো হদিস মেলেনি।
সবশেষ গত ১১ জুলাই পুলিশের কর্মকর্তা ব্রায়ান লও স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আর অনিকের অনুসন্ধান করবেন না। অনিকের পরিবারের দাবি, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর তারা অনিকের সন্ধান চেয়ে পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা চাইলেও সন্তোষজনক কোনো তথ্য তারা পাচ্ছেন না। স্থানীয় পুলিশ অনিকের সন্ধান না দিয়ে তদন্ত শেষ করেছে।
অনিকের বড় বোন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি জানান, একমাত্র ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে তারা অনেকটা পাগলপ্রায়। অনিক আত্মহত্যা করতে যাবেন কেন সেটিই বুঝতে পারছেন না বড় বোন।
অনিকের বোনের ভাষ্য, বিষয়টি জানার পর আমরা তিনদিন পর যখন অনিকের ল্যাবের সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন তিনি আমাকে বলেছেন, অনিকের নিখোঁজের বিষয়টি তিনি অবগত নন। কিন্তু কেন তিনি জানবেন না, যে তার এক ছাত্র নিখোঁজ হয়েছে? যেখানে নিখোঁজের পর পুলিশ সার্চ করা শুরু করেছে, সেখানে অনিকের শিক্ষককে কি তারা অবহিত করেননি? নাকি তিনি কোন কিছু চেপে যাচ্ছেন?
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পুলিশের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা অনিকের সন্ধান দিতে পারেনি। কিন্তু কেন এমন হবে? ওই নদীতে যে অনিকই ঝাঁপ দিয়েছেন, তা পুলিশ কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছে? তারা তো আমাদের কাছ থেকে অনিকের কোনো ছবিই নেননি। এমনকি অনিককে যে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তার চিত্র আমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়নি। অনিক যদি আত্মহত্যাও করে, তাহলে তার মরদেহের সন্ধান আমাদের দিন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে একজন মেধাবী তরুণ নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে তার সন্ধানই মিলবে না, তা কী করে হয়?
অনিকের সন্ধানে সহযোগিতার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসকে লিখিতভাবে জানানোর পরও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অনিকের পরিবার অভিযোগ করেছে।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।