Apan Desh | আপন দেশ

রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ফেসবুক

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:২২, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ফেসবুক

ছবি: আপন দেশ

নির্বাচনের পূর্বে ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। রাজনৈতিক এই উত্তেজনাকর মুহূর্তে জনমত প্রভাবিত করতে ফেসবুককে ব্যবহার করছে উভয় দলই। নানা কনটেন্ট তৈরি করে তা নিজের ফেসবুক প্রোফাইল, গ্রুপ ও পেজের মাধ্যমে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণা দলে মোট ১০ গবেষক ছিলেন।

এতে বলা হয়, ফেসবুকে অনুসারীর সংখ্যায় এবং কৌশলগত দিক থেকে বিএনপির থেকে এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। ওই গবেষণাটি করতে মোট পাঁচ লাখ ফেসবুক পোস্ট সংগ্রহ করা হয়। এসব পোস্টের অনুসারী ছিলেন ১ কোটি ৪৪ লাখ ব্যবহারকারী। পোস্টে এনগেজমেন্টের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭৫ লাখ। গবেষকেরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬০০টির বেশি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ যাচাই করেন। তারা গভীরভাবে বিশ্লেষণের জন্য এমন সব পেজ ও গ্রুপ বাছাই করা হয়েছিল, যেগুলোর ন্যূনতম ৫০০ অনুসারী আছে।

প্রতিবেদনের প্রথমেই জানিয়ে দেয়া হয় যে, বাংলাদেশে মাসে ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। বিরোধী দল বিএনপি নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছে। তাদের অনেক শীর্ষ নেতা অসুস্থ, নির্বাসিত বা কারারুদ্ধ। 

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ নেতাকর্মীর প্রায় অর্ধেকই অসংখ্য মামলায় জর্জরিত।

সাম্প্রতিক হিসাব বলছে, বাংলাদেশের ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং তাদের বড় একটি অংশই ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব ব্যবহার করেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ফেসবুক। বিএনপি ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অফিশিয়াল, ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ চালু করে, যেই পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ নেয় ২০১৩ সালে। তবে বিএনপির চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অত্যাধুনিক উপায়-উপকরণ পাচ্ছেন। ২০২১ সালে দলটি ১ লাখ ‘সাইবার যোদ্ধাকে’ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য স্থির করেছিল। এবার নির্বাচনে দলটির প্রচার দল ২ কোটি সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন>> ইসির মামলার প্রস্তুতি, তালিকায় ২০২ প্রার্থী

গবেষকেরা দেখেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সম্পর্কিত নতুন পেজ তৈরি বেড়েছে নির্বাচনের আগে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। ওই সময়টা রাজনৈতিকভাবে বেশ উত্তাল ছিল। ২০১৩-১৪ সময়ে রাজনৈতিক দলভিত্তিক তীব্র অনলাইন–যুদ্ধ হয়। এটাই সম্ভবত দুই পক্ষের ফেসবুক পেজ বাড়াতে ভূমিকা রেখেছিল। ২০১৭ ও ২০২২ সালে বিএনপিপন্থী পেজ তৈরি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের আগে পেজ তৈরি বাড়ে। আওয়ামী লীগপন্থী পেজ তৈরিতে বড় উল্লম্ফন দেখা যায় ২০২০ সালে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা দৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রতিটি দলের নাম থাকা শীর্ষ ২৬০টি করে পেজ ও ৭০টি করে গ্রুপ থেকে তথ্য-উপাত্ত নেন। এক্ষেত্রে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সক্রিয় পেজ ও গ্রুপগুলো তারা বিবেচনায় নেন। গবেষণার সময়কালে প্রতি মাসে অন্তত একটি কনটেন্ট শেয়ার করা হয়েছে, এমন পেজকে ‘সক্রিয়’ ধরা হয়েছে। 

গবেষকেরা অনুসারীর সংখ্যা ও সর্বোচ্চ সক্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ ২০টি করে পেজের কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন, এক বছরে দলের নাম দিয়ে ১৩৫টি সক্রিয় পেজ থাকলেও আওয়ামী লীগের মাত্র দুটি পেজ বেশি তৎপর ছিল। এই দুটি পেজ থেকেই দলটির বেশির ভাগ কনটেন্ট প্রচার করা হয়। পেজ দুটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ ও ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’। ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ পেজের অনুসারী ৩৪ লাখ। বিশ্লেষণের সময়কালে পেজটি প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কনটেন্ট শেয়ার করে। আওয়ামী লীগ প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় কনটেন্ট শেয়ার করেছে। গত বছর প্রতিদিন প্রতি ২৪ ঘণ্টায় পেজটি কমপক্ষে ২৫টি কনটেন্ট শেয়ার করেছে।

একইভাবে ১৫৮টি সক্রিয় পেজ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি বেশির ভাগ কনটেন্ট ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ ও ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’—এই দুটি পেজ বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ পেজের অনুসারী ২৫ লাখ। এটি গত বছর আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল পেজের দ্বিগুণের বেশি, প্রায় ২০ হাজার পোস্ট শেয়ার করেছে।

নির্বাচনী উত্তেজনার মধ্যে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ ও ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’ পেজ ছাড়াও ‘বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ’ ও ‘আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল’ পেজও সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। এই দুটি পেজেও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পোস্ট দেয়া হয়েছে। এনগেজমেন্টের দিক থেকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ দলের অন্যান্য পেজের চেয়ে এগিয়ে। এই পেজে এক বছরে পোস্টগুলোতে ৬৬ লাখ ‘লাইক’ পড়েছে। মন্তব্য ও শেয়ারের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য বজায় রেখেছে পেজটি। এক বছরে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’ পেজের পোস্টগুলোতে ‘লাইক’ পড়েছে ১১ লাখ। আওয়ামী লীগের পক্ষের অন্যান্য পেজের প্রতিটি এক বছরে এক লাখের কম ‘লাইক’ পেয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া ও অফিশিয়াল পেজগুলো ধারাবাহিকভাবে বেশি পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল। এমনও দেখা গেছে, ‘নাটোর জেলা বিএনপি’ দলটির অফিশিয়াল পেজকে পোস্টের সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপির ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যান্য ছোট পেজ, যেমন ‘মাই বিএনপি’ ও ‘লিডার আসছে বিএনপি’ ঘন ঘন পোস্ট করা শুরু করে। ২০২৩ সালের জুন থেকে বিএনপির পেজগুলোতে পোস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। 

আওয়ামী লীগের পেজগুলোর তুলনামূলক গ্রুপগুলো ভালো তৎপরতা দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগের গ্রুপগুলোতে গত বছরের ডিসেম্বরে পোস্ট ছিল ১২ হাজার। কিন্তু গত মাসে (নভেম্বর) পোস্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার। 

বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র ১৯ শতাংশ পেজ, ভেরিফায়েড প্রোফাইল বা গ্রুপে বাংলা বা ইংরেজিতে ‘আওয়ামী লীগ’ লেখা ছিল। অন্যদিকে বিএনপির সর্বাধিক শেয়ার করা লিংকের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৬৪ শতাংশ।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ:

কালশী ট্রাফিক বক্সে আগুন দিয়েছে আন্দোলনরত অটোরিকশা চালকরা বিএনপি নেতা ইশরাক কারাগারে মিরপুরে পুলিশ-অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ভ্যাট বসলে মেট্রোরেলের সুনাম নষ্ট হবে: ওবায়দুল কাদের বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন কেএনএ সদস্য নিহত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের উদ্যোক্তা হতে বললেন গুরুত্বপূর্ণ সফরে ঢাকায় আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং রাজধানীর আগারগাঁও ও মিরপুর ১০ নম্বরে অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথে তালা পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী ঢাকাসহ ১০ অঞ্চলের উপর দিয়ে ৬০ কিমি বেগে বজ্রবৃষ্টির শঙ্কা জো বাইডেনের ‘ড্রাগ টেস্ট’ করতে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি হারাল ডিসি ইউনাইটেডকে