দেশে আলু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব

মাটির সাথে কৃষকের আত্মিক সম্পর্ক হাজার বছরের। ফসলের ডগায় ডগায় অর্থের যে মানচিত্র তা বেশ দৃঢ় ও দৃশ্যমান। ভাতের পর দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশক্তির উৎস আলু। গবেষণা বলছে, দেশে আলু উৎপাদনে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। উৎপাদন বেড়েছে ১৭-১৮ গুণ। মাথাপিছু আলু খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে ৬-৭ গুণ। সেই সঙ্গে আলুর বহুমুখী বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছে। 

প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। উৎপাদিত এ খাদ্যপণ্যটি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও কাতারে রফতানি হচ্ছে। যা থেকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয় এসেছে ৩৩০ কোটি টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে গড় আলুর চাহিদা ৮০-৯০ লাখ টন।

আরও পড়ুন>> প্রথমবার বিদেশে ‘চাইনিজ বাঁধাকপি’

দেশে আলুর ভরা মৌসুম নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস। এই কৃষকের হাত ধরে গণিতের মতো সুশৃঙ্খল আর সনাতন থেকে বাণিজ্যক কৃষি এখন বেশ আধুনিক। আর কিছু দিন যাওয়ার পর ঘরে উঠবে আলুর ফলন। আরও পরিধি বাড়বে আলু প্রক্রিয়াজাত চিপস, বিস্কুট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ নানা খাদ্যজাত পণ্যের। সঙ্গে বড় হবে সুনীল অর্থনীতির আকার।

অন্যদিকে বাজারে এই আলু দিয়ে উৎপাদিত নানা পণ্যের চাহিদাও বেশ রয়েছে। বিক্রেতারা বলেন, আলুর চিপসের বাজার আছে। অনেকেই এই চিপস পছন্দ করেন এবং খাচ্ছেন।

ক্রেতারা বলেন, ‘আলুর সব ধরনের ব্যবহার আছে। আর আলুজাত পণ্যের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।’

কৃষকরা বলেন, এবার শীত আর আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় আলুর উৎপাদন বাড়বে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, অন্য জেলার মতো এই জেলায় উচ্চফলনশীল জাতের আলু চাষের কারণে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ হবে।

এরই মধ্যে রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলতি বছরের প্রথম মাসেই আলু উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। এই ধারাবাহিকতা পূরণে বিগত ২০২২-২৩ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১২ লাখ মেট্রিক টন। আর অর্জিত হয় ১১০ লাখ মেট্রিক টন আলু। চলতি বছর ২০২৪ এ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১২৩ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতকরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এই উৎপাদিত আলুর বহুমুখী বাজার তৈরি হয়েছে। আর ভালো মানের বীজ ও জাত সম্প্রসারণ হওয়ায় মোট উৎপাদনও বেড়েছে।

আলু এখন বাণিজ্যের নানা খাতে আশার আলো দেখাচ্ছে। দেশের মানুষ বছরে মাথাপিছু ২২ কেজি আলু খায়। সেক্ষেত্রে আলু থেকে তৈরি নানা পণ্য উৎপাদন আর বাজারের আকার বড় করা গেলে এই পণ্যটি প্রধান অর্থকরী ফসলের তালিকার শীর্ষে উঠে আসবে।

আপন দেশ/এসএমএ