Apan Desh | আপন দেশ

ইচ্ছাপূরণে স্ত্রীকে অনার্স পাস করালেন রিকশাচালক

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

ইচ্ছাপূরণে স্ত্রীকে অনার্স পাস করালেন রিকশাচালক

ফাইল ছবি

বিমল শব্দকর (৩০) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দরিদ্র রিকশাচালক। কৃষক পুলীন শব্দকরের দুই ছেলের মাঝে বিমল দ্বিতীয়। তার বড় ভাইও রিকশাচালক।

টাকার অভাবে ২০০৭ সালে এসএসসির ফরম পূরণ করতে পারেননি বিমল। তারপর তিনি কুমিল্লায় প্রাণ আরএফএল কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মীর চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৭ সালে জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয় গ্রামে সমিতা শব্দকরকে (২৬) বিয়ে করেন। তাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

লেখাপড়া জানা স্ত্রী বিয়ে করায় নিজের উচ্চশিক্ষার আগ্রহ পূরণ করতে চান বিমল শব্দকর। স্বল্প বেতনে সংসার ও স্ত্রীর লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারায় নিরাপত্তা কর্মীর কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে রিকশা চালানো শুরু করেন বিমল। রিকশা ভাড়া, পরিবারের খরচ চালিয়ে বাড়তি আয় দিয়ে স্ত্রীর নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যান বিমল।

বিয়ের পর স্ত্রী সমিতা শব্দকরকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অর্থনীতি (অনার্স) বিষয়ে ভর্তি করান।

বিমল শব্দকর জানান, স্ত্রীর অর্থনীতি (অনার্স) ফাইনাল পরীক্ষার সময় তার বাচ্চার বয়স চার মাস। এ সময় ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে বাবা হিসেবে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ছেলের পাশে ছিলেন বিমল। পরীক্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হাসপাতালে ছেলের পাশে ছিলেন। যাতে স্ত্রীর পরীক্ষায় কোনো সমস্যা না হয়। এভাবে তিনি স্ত্রীকে সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালোভাবে অর্থনীতিতে সম্মান পাস করেছেন। এখন আশায় রয়েছেন একটি চাকরির।

বিমল বলেন, আমি পড়ালেখায় ভালো ছিলাম কিন্তু আর্থিক সমস্যায় আর পড়া হয়নি। পড়ালেখা করার জন্য এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারিনি।

আরও পড়ুন <> সরাইলে বিলের জমির মাটি অবৈধভাবে বিক্রি

তিনি জানান, উচ্চশিক্ষা অর্জন না করতে পারলেও নিজের ইচ্ছা স্ত্রীর মাধ্যমে পূরণ করলেন। এখন স্ত্রীর একটি চাকরির সুযোগ হলে দুজনে মিলে ভালোভাবে সংসার চালাবেন ও সন্তানকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেবেন।

স্ত্রী সমিতা শব্দকর জানান, অর্থনীতিতে সম্মান পাস করার পর, কম্পিউটার সাক্ষরতা কর্মসূচির কোর্স সফলভাবে শেষ করেছেন। তবে কোনো চাকরির সুযোগ হয়নি। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরির পরীক্ষা দিলেও কোনো চাকরির সুযোগ হয়নি। তার এখন সরকারি বা বেসরকারি একটি চাকরি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এত কষ্ট করে আমার স্বামী আমায় পড়াশোনা করিয়েছেন, যদি একটা চাকরি পাই সেটি আমার স্বামীকে উপহার দিতে পারব।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়