Apan Desh | আপন দেশ

পেঁয়াজ-আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্বীকার কৃষিমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ৮ অক্টোবর ২০২৩

পেঁয়াজ-আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্বীকার কৃষিমন্ত্রীর

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সরকার পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেঁধে দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না বলে স্বীকার করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আলুর দামও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এ নিয়ে সমালোচনা করেন, আমরা মেনে নেব। কারণ, এটা আমাদের দুর্বল দিক। কিন্তু আমাদের সবল দিকগুলোও দয়া করে মিডিয়াতে তুলে ধরবেন।

রোববার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব বিবেচনায় এ বছর চাল উৎপাদন, বিতরণ এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা একটা ভালো অবস্থায় রয়েছি। আমি সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি, এ ব্যাপারগুলোও যেন গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মোটেই হাল ছেড়ে দেইনি। আমরা এখনো যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। উৎপাদনের পার্টটা হলো আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজার মনিটর করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরও আমি দায়িত্ব এড়াতে পারি না। কেবিনেট সিস্টেমে সব মন্ত্রী এটার জয়েন্ট রেনপনসিবিলিটি, সব সময়ই এটা।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছে। তারা ঠিকমত সরবরাহ করছে না, এটা বড় অন্তরায়। নানাভাবে আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ লেভেলে তাদের চাপ সৃষ্টি করলে সাপ্লাই-ই দেয় না, বন্ধ করে চলে যায়। এ ধরনের কিছু ব্যাপার রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

জুলাই থেকে এ পর্যন্ত এই মরা কার্তিকেও চাল আমদানি করতে হয়নি জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এদিক দিয়ে আমরা খুব একটা ভালো অবস্থায় আছি। গত বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের যে টার্গেট নির্ধারণ করেছিলাম সেটি অর্জিত হয়েও দুই লাখ টন বেশি সংগ্রহ করতে পেরেছি। এ মুহূর্তে বাজারে চালের দামে নিম্নমুখী ট্রেন্ড রয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বাজারে চালের দাম কম, সরকারি দাম বেশি, যে জন্য মিলাররা আমাদের চাল দেয়ার জন্য খুবই আগ্রহী। এখনো তারা চাল দিতে চাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন তার ৬৫-৭০ ভাগই খরচ হয় চাল কিনতে। অর্থাৎ ৭০ ভাগই খরচ হয় চাল কেনার জন্য। কাজেই চালটা কিন্তু খাদ্যের প্রথম ও প্রধান উপাদান। পেঁয়াজের দাম, আলুর দাম কতটুকু সেটা আমি ওইভাবে বলতে চাই না। তবে চাল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যূনতম যে খাবারটা সেটা কিন্তু কিনতে পারছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আমাদের দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়, কিন্তু পেঁয়াজ খুবই পচনশীল পণ্য। এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়াজ তোলা হয়, তারপর দুই মাসের বেশি থাকে না। পেঁয়াজ পচে যায়, শুকিয়ে যায়। এজন্য পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের সমস্যা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। গত বছর যথেষ্ট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল, চাষিরা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা, রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এবার পরিস্থিতি উল্টো। উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগে কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও আড়তদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা করছে। এতো লাভ করা উচিত না। ২০ টাকা খরচ হয় না, বিক্রি করছে ৪০-৫০ টাকায়।

পেঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন প্রযুক্তি আনা হয়েছে জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, ওভাবে পেঁয়াজ রাখলে ৫ শতাংশও পচে না। এ প্রযুক্তি যদি আমরা নিয়ে যেতে পারি আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। নতুন জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন, হেক্টরপ্রতি ৪০-৫০ টন উৎপাদন হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশে পেঁয়াজেরও কোনো সমস্যা থাকবে না।

কৃষিমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির অনমতি না দেয়ার কারণ হিসেবে বলেন, আমরা চেয়েছি গত বছর কৃষকরা দাম পায়নি এ বছর তারা দাম পাক, এটা আমাদের নীতি ছিল। আপনারা সমালোচনা করেন, আমি সেটা মাথা পেতে নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন। সেজন্য সাময়িক একটু কষ্ট হয়েছে, মানুষ বেশি দামে কিনেছে, কিন্তু চাষিদের আমরা উৎসাহিত করছি, স্থানীয়ভাবে আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করব। আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল ভারত থেকে আমরা কেন আমদানি করছি না। কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি। আমরা চেয়েছি যে বাজারে দাম যা আছে থাক, আমাদের কৃষকরা উপকৃত হোক, যেন সামনের বছরও তারা পেঁয়াজ চাষ করে।

তিনি আরও বলেন, শীতকাল আসছে, পর্যাপ্ত সবজি হবে। সব সবজির দামই কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশি। আরও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি আছে। এসব বিবেচনায় এ মুহূর্তে সবজি ও অনেক খাদ্যপণ্যের দাম বেশি।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আপন দেশ/এমএমজেড

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়