Apan Desh | আপন দেশ

বিশ্ব নদী দিবস আজ

দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১০০৮: নদী রক্ষা কমিশন

রায়হান উল্লাহ

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১১:১৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১০০৮: নদী রক্ষা কমিশন

ফাইল ছবি

আজ রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব নদী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘রাইটস অব রিভার'। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি।

নদ-নদী ও প্রাকৃতিক খাল রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছে। কমিশন আজ রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের মোট নদ-নদীর সংখ্যা প্রকাশ করবে। জানা যায়, দেশে মোট নদ-নদী এক হাজার আটটি। আর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার।

অন্য এক তথ্যে জানা গেছে, গত ৫০ বছরে দেশের নদ-নদীর সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় থাকা মোট ৩৮৩টি নদীর অনেকগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন। এমন অবস্থায় নদী রক্ষায় সরকারসহ দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান নদী নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের। 

আজ বিশ্ব নদী দিবস পালনে  সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। নদী রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রোববার বিশ্বব্যাপী নদী দিবস পালিত হয়ে আসছে। 

তবে দিবসটি হুট করেই আসেনি। এর পেছনেও রয়েছে নদীর প্রতি মমতার  গল্প। দিবসটির সূচনা হয়েছিল আশির দশকে, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যে। ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নদীপ্রেমিক এক তরুণশিক্ষক মার্ক অ্যাঞ্জেলো তার কিছু ছাত্রছাত্রী ও বন্ধুদের নিয়ে একটি নদীতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। নদীটি বৈঠা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ছিল। সেই নদীতে ফেলা ময়লাগুলো মার্ক অ্যাঞ্জেলোরা পরিষ্কার করেন। তখনো তারা জানতেন না, এটি ইতিহাস তৈরি হতে যাচ্ছে।

এদিকে শিগগিরই নদ-নদীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে নদী রক্ষা কমিশনের। একই সঙ্গে নদীর সংজ্ঞাও চূড়ান্ত করতে চায়। নদী রক্ষা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারলে এসব নদী বাঁচানো ও সুরক্ষার পথ কিছুটা হলেও সুগম হবে। তারা আরও জানান, আরও কিছু নদ-নদীর তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় থাকা কিছু নদীর বিষয়ে আপত্তিও রয়েছে। ওইসব আপত্তি নিষ্পত্তি হলে নদীর সংখ্যা আরও কিছু বাড়বে।

জানা গেছে, এর আগে ১০ আগস্ট দেশের সব নদ-নদীর একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল নদী রক্ষা কমিশন। ওই তালিকায় নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ৯০৭টি। তালিকার ওপর মতামত ও আপত্তি আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয় কমিশন।
দেশে নদ-নদীর তালিকা নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১১ সালে তাদের এক প্রকাশনায় উল্লেখ করেছে, নদ-নদীর সংখ্যা ৪০৫। নদী গবেষকদের কেউ কেউ দাবি করেন, দেশে নদীর সংখ্যা হাজারের বেশি।

দেশে নদী নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করে। আর নৌপথ নিয়ে কাজ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলো। তাদের কারও কাছেই নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে গবেষণা নেই। এর মধ্যেই নদীর এ তালিকা তৈরি করেছে নদী রক্ষা কমিশন।

আরও পড়ুন <> ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ চিন্তিত নয়, আল-জাজিরাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের সব নদ-নদীর অভিভাবক, নদীর সঠিক সংখ্যা ঠিক করার দায়িত্বও তাদের। এই রায়ে আদালত দেশের সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসাবেও উল্লেখ করেছেন। ওই এখতিয়ার বলেই নদী রক্ষা কমিশন এ তালিকা তৈরি করেছে।

জানা গেছে, দূষণ ও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের পাশাপাশি অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ, আবাসন, সেতু, কালভার্ট ও স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ছোটবড় অনেক নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। 

নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে দেশে ২২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ থাকলেও বাস্তবে নৌযান চলাচল উপযোগী নৌপথের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্যমতে, দেশে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারে এমন নৌপথের দৈর্ঘ্য নিয়ে শুষ্ক মৌসুমে চার হাজার ৮০০ কিলোমিটার। আর বর্ষা মৌসুমে সাত হাজার ৬০০ কিলোমিটারে।

এদিকে আজ বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নৌপরিবহন অধিদফতর ও সংস্থার উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ ছাড়া, জাতীয় নদী কমিশনের উদ্যোগে রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা' এক শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মারগুব মোর্শেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বিভিন্ন জেলায় এবং ‘রিভারাইন পিপল' রংপুর ও পাবনায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, আমাদের সামনে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-নদী দখল ও দূষণ। নদী দূষণ হলে নৌপর্যটনের বিকাশ ঘটবে না। আর দখলের কারণে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বন্দর এলাকায় নদী দখল হলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে বন্দর সীমানার বাইরে দখল হলে সেখানে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। যদি নদীর ফোরশোরে (তীরভূমি) স্থাপনা নির্মাণে আমাদের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক হতো তখন আমরা বিষয়টি নজর রাখতে পারতাম।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নদীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সিএস রেকর্ডে যেগুলো নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো মরে গেলেও ওই জায়গা নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। অনেক স্থানে নদী দখল করা হয়েছে। কোথাও প্রাকৃতিকভাবে নদী গতিপথ পরিবর্তন করে মরে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একই নদী বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। আবার কোথাও একাধিক জেলায় একই নামে রয়েছে। সেখানে আমরা ওই জেলা ও নদীর নাম মিলিয়ে নামকরণ করেছি। ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদীর তালিকার কাজ থামবে না। এটি চলমান প্রক্রিয়া।

১৯৮০ সাল থেকে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববারকে বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালনের সূচনা করে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করে আসছে বেসরকারি সংস্থা ‘রিভারাইন পিপল'।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়