ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক নারী নিহত হয়েছেন। বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পথে মারা যান তিনি।
নিহত পোশাকশ্রমিকের নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০)। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চর নাটিপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের স্ত্রী। কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
এর আগে গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে করা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রাসেল হাওলাদার (২৬) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। রাসেল ঝালকাঠি সদর উপজেলার খাগুটিয়া
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আজ বিক্ষোভে নামেন।
সকাল ৭টার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। দুপুর ১২টা ও সাড়ে ১২টার দিকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুলিবিদ্ধ জামাল উদ্দিন বলেন, আমি ইসলাম ইসলাম গার্মেন্টসে চাকরি করি। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে আমি গুলিবিদ্ধ হই। পরে প্রথমে উদ্ধার করে আমাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছি।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজন ঢাকা মেডিক্যালে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ইসলাম গার্মেন্টসের আঞ্জুয়ারা খাতুন নামে এক নারীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ জামাল উদ্দিনের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুন<<>> পুলিশের গুলিতে গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত
ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রস্তাব করে মজুরি বোর্ড। পরে মজুরি বোর্ড ঘোষিত বেতন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন <> সর্বনিম্ন মজুরি প্রত্যাখ্যান: গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
বুধবার সকাল থেকে কোনাবাড়ি এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস ও বেস্টঅল সোয়েটারসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করলে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল ৮টার দিকে কয়েকশ শ্রমিক কাশিমপুরের জরুন মোড়ের সামনে একত্রিত হয়ে হাতে ইট এবং লাঠি সোঁটা নিয়ে মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেটের হয়ে হাতিমারার দিকে এগিয়ে যান।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হলেও শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ারশেল ছুড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। আমরা তাদের ঘোষণা দিয়েছিলাম আপনারা নিজেদের জায়গায় থাকেন, আপনাদের ফ্যাক্টরিতে ঢোকেন, কাজ পছন্দ না হলে কাজ বন্ধ রাখেন কিন্তু অন্য কোনো কারখানায় ভাঙচুর করতে যাবেন না। অন্য কোনো কারখানার শ্রমিকদের নামাতে যাবেন না। কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা না শুনে অন্য কারখানার শ্রমিকদের নামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। তাদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ী পপুলার, কোনাবাড়ী ক্লিনিক ও গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।
আপন দেশ/আরএ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।