Apan Desh | আপন দেশ

চাকরি না মেলায় সাইদুল এখন কমলাচাষি

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

চাকরি না মেলায় সাইদুল এখন কমলাচাষি

ছবি : সংগৃহীত

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় কমলা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষক সাইদুল ইসলাম। তার বাগানের কমলা বিদেশ থেকে আমদানি করা কমলার মতোই রসাল, সুমিষ্ট এবং আকারেও বড়। এ কারণে হাটবাজারে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে এর বেশ চাহিদা। বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক সাইদুল।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমদানি করা কমলার দাম তুলনামূলক বেশি। তা ছাড়া স্বাদে, গুণে ও মানের দিক থেকে সাইদুলের বাগানের কমলা প্রায় একই রকম। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কমলা সংগ্রহ করতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন তার বাগানে। আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। অল্প পরিশ্রমে ফলন বেশি ও ভালো দামে বেচাকেনা হওয়ায় এলাকার অন্য কৃষকেরাও কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে পরিবহন, বিপণন ও সঠিক দাম নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

গত বুধবার দুপুরে উপজেলার আগ্রাদ্বীগুণ ইউনিয়নের হযরতপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আমবাগানের পাশে সারিবদ্ধভাবে গড়ে উঠেছে সাইদুলের কমলার বাগান। বাগানজুড়ে সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছিল কাঁচা-পাকা কমলা। দেশের মাটিতে কমলা চাষের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিসরে ১৫ থেকে ২০ জন কৃষক মালটা ও কমলার বাগান করেছেন। এতে করে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

কমলাচাষি সাইদুল বলেন, ২০১২ সালে নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ছুটেছেন পাঁচ বছর। চাকরি না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। স্থানীয় বাগানিদের পরামর্শ ও উপজেলা কৃষি অফিসের প্রদর্শনী থেকে কমলা চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। এরপর ২০২০ সালের এপ্রিলে ৪০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ১৩০টি দার্জিলিং জাতের কমলার চারা রোপণ করেন। এরপর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ১০০ শতাংশ জমিতে আরও ৪৬০টি একই জাতের চারা রোপণ করেন।

আরও পড়ুন <> সরিষার হলুদ ফুলে কৃষকের মুখে হাসি

সাইদুল ইসলাম আরও বলেন, আকার ভেদে প্রতিটি গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি কমলা নামিয়েছেন। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার ৬০০ টাকায় ২০ মণ কমলা বিক্রি করেছেন। চলতি বছরে ২৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাইদুলের। হাটবাজারে ভালো দাম পেলে এ বছর বাগান থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। এতে করে পরিবারের খরচ মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আর জুবায়ের বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি সাইপ্রাসজাতীয় ফসল চাষের উপযোগী। কমলা চাষে কৃষক সাইদুল ইসলামকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও উদ্বুদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকে কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিদেশ থেকে মালটা ও কমলা আমদানি করতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় হচ্ছে। এ কারণে কমলার আমদানি বন্ধ করার মধ্য দিয়ে আমাদের নিজেদের মালটা ও কমলায় আমরা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।’

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়