Apan Desh | আপন দেশ

জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

‘ভাই কোটায়’ ছাত্রলীগ সম্পাদক আকাশ

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৫:৪৪, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ভাই কোটায়’ ছাত্রলীগ সম্পাদক আকাশ

ছবি: সংগৃহীত

নিয়মিত ছাত্র নন। সক্রিয় নন রাজনীতিতেও। তবুও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের পদ পেয়েছেন আরাফাত ইসলাম আকাশ। পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর রাব্বিউল ইসলাম সীমান্তের আপন খালাতো ভাই সে। গঠনতন্ত্র অমান্য করে তাকে পদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, গত ৯ মার্চ সম্মেলন ছাড়াই এডওয়ার্ড সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির ঘোষণা দেয় জেলা ছাত্রলীগ। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তা প্রকাশ করা হয়। সভাপতি করা হয় জুবায়ের বিশ্বাস অন্তুকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয় আরাফাত ইসলাম আকাশকে। মোট ২৪ সদস্যের কমিটি দেয়া হয়।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জুবায়ের বিশ্বাস অন্তুসহ কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী বিভিন্ন ইউনিটে ছাত্রলীগের পদে দায়িত্ব পালন করেছে। তবে ক্যাম্পাস রাজনীতিকে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না আকাশ। বরং জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও আছে। 

২০২২ সালের নভেম্বরে সীমান্ত জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পায়। এরপরই তার সঙ্গে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আসা যাওয়া শুরু হয় আকাশের। স্বজনপ্রীতি করেই আকাশকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে, এমন দাবি পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের।

জানা যায়, আরাফাত ইসলাম আকাশ বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি পাস করেন। ২০২৩ সালেই ডিসেম্বর মাসে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ডিগ্রী প্রাইভেট কোর্সে ভর্তি হন। গত ৯ মার্চ গঠিত কমিটিতে তাকে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়।

আরও পড়ুন>> বিতর্কেরমুখে ভাঙ্গুড়া ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

তবে এ কোর্সের শিক্ষার্থীরা কলেজের নিয়মিত ছাত্র নয় বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুব সরফরাজ। তিনি বলেন, প্রাইভেট কোর্সের শিক্ষার্থীরা কলেজের নিয়মিত বা অনিয়মিত কোন ক্যাটগরিতেই পড়েন না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ক্যাটাগরি। তারা কলেজের নিয়মিত সুযোগ সুবিধা পাবেন না। কলেজের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অধিকারও তাদের নেই। কলেজের পরিচয় ব্যবহার করে সরকারি সুবিধাদি পাওয়ারও তাদের সুযোগ নেই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আরাফাত ইসলাম আকাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে কলেজের পাস কোর্সের ছাত্র দাবি করেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। অতীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়লেও বর্তমানে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবগত। এগুলো সমাধান হয়ে গেছে।

ছাত্রদলের সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে আকাশ বলেন, যাদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তারা আমার স্কুলের বড়ভাই। স্কুলের রিইউনিয়নে অনেকের সঙ্গে ছবিটি তোলা। ওই সময় বড় ভাইয়েরা কে কোন দলের কোন পদে ছিল সেটাও আমার জানা ছিল না। ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

এ বিষয়ে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসেন বলেন, আরাফাত ইসলাম আকাশকে আমরা চিনি না। ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতেও তাকে কখনো দেখিনি। উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো প্রাইভেট ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েই সে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বুনে গেল। কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বাদ রেখে কে কেন এ ধরনের একটি অভিজ্ঞতাশূন্য ছেলেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালো, সেটি একটি প্রশ্ন। নেতৃত্বে যোগ্যদেরই নির্বাচন করা উচিত।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর রাব্বিউল ইসলাম সীমান্তকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, কমিটি গঠনের সময় আকাশ নিজেকে কলেজের নিয়মিত ছাত্র বলেই জানিয়েছে। তথ্য গোপন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ কনক বলেন, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে গঠনতন্ত্রে নিয়মিত ছাত্রত্বের বিধান রয়েছে। এডওয়ার্ড কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা কাম্য নয়। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের পরামর্শ নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। গঠনতন্ত্র অমান্য করে স্বজনপ্রীতির প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাড. আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রই নয়, তাকে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো অনিয়মতান্ত্রিক। যদি বিষয়টি সত্য হয়, তবে নিঃসন্দেহে এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও গৌরব ক্ষুণ্ন হবে। আশা করি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

আপন দেশ/আরএন/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ