আদালতে কাঁদলেন পরীমণি

ঢাকা: শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ঢাকাইয়া সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি। সোমবার (২৪ জুলাই) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক শাহিনা হক সিদ্দিকার আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।

এদিন দুপুর সোয়া একটার দিকে এজলাসের কাঠগড়ায় ওঠেন তিনি। এসময় ঘটনার কিছু বিবরণ দিয়ে পরীমনি আর কথা বলতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।

তখন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শহীদ হোসেন বিচারকের উদ্দেশে বলেন, এই জনাকীর্ণ আদালতে পরীমনি হয়তো সেদিনকার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে পারছেন না। আইনে এই ধরনের মামলায় ক্যামেরার ট্রায়ালের (রুদ্ধদ্বার এজলাসে বিচার) বিধান রয়েছে।

বিচারক পরীমনি উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন, ক্যামেরা ট্রায়ালে সব ঘটনা খুলে বলবেন, তাহলে অবশ্যই মামলার বিচার ক্যামেরা ট্রায়ালে হবে। আপনার সাক্ষ্যগ্রহণকালে আপনার আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ছাড়া আর কেউ সেখানে থাকবেন না। আপনি কি ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিতে চান?’

তখন পরীমনি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সেদিনকার ঘটনা মনে পড়লে আমি আজও ট্রমাটাইজ (মানসিক আঘাতগ্রস্ত) হয়ে যাই...।’

পরীমনি এ কথা বলে আবার কাঁদতে থাকেন। তখন তাঁর আইনজীবী মুজিবর রহমান বলেন, ‘মাননীয় আদালত, পরীমনি ক্যামেরা ট্রায়ালে সব ঘটনা খুলে বলবেন।’
পরীমনিও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ক্যামেরা ট্রায়ালে আমি সাক্ষ্য দেব।’

আদালত তখন পরীমনিকে বলেন, ‘ক্যামেরা ট্রায়ালে বিচার হবে।’ এরপর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।

>>> আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা মিনুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা খারিজ

পরীমনি যখন আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী। মামলার অপর আসামি শাহ শহিদুল আলমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আদালতে ছিলেন। শহিদুল আজ আদালতে আসতে না পারায় তাঁর পক্ষে সময় চাওয়া হয়।

এর আগে ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে পরীমণি তার স্বামী রাজকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন। এসময় আসামি অমি ও শহিদুল হাজিরা দেন। তবে অসুস্থ থাকায় সময়ের আবেদন করেন নাসির উদ্দিন। দুই আসামির উপস্থিতিতে পরীমণির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর আদালত পরীমণির আংশিক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

একই বছরের ১৯ এপ্রিল নাসির ও অমির পক্ষে তাদের আইনজীবী এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, অব্যাহতির আবেদনের বিরোধিতা করেন বাদীপক্ষ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। এরপর ১৮ মে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

২০২১ সালের ১৪ জুন ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে এবং চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে সাভার থানায় মামলা করেন পরীমণি। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন আদালতে নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিন।

আপন দেশ/এমএমজেড