Apan Desh | আপন দেশ

‘বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের টেস্ট কেস’

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৫:৪১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

‘বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের টেস্ট কেস’

ছবি: সংগৃহীত

সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশ ইস্যুতে অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ওপর অব্যাহত দৃষ্টি রাখবে ওয়াশিংটন। ঢাকা এখনো মূল্যায়নভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে টেস্ট কেস হিসেবে রয়ে গেছে। বলেছেন উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

অনলাইন সংবাদম্যাধম দ্য ফরেন পলিসিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক লেখায় এসব কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

কুগেলম্যান লেখেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন এজেন্ডায় এ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পায় জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, রোহিঙ্গা সংকট ও শ্রম অধিকার। প্রতিনিধিরা সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং বিরোধী শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

কথার সুর এবং বার্তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্পষ্ট একটি পটপরিবর্তনের মধ্যে হয়েছে এ সফর। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে শক্তিশালী বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে আছে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং প্রকাশ্যে সমালোচনা। 

অনুষ্ঠিত ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যা-ই হোক, ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়কে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তাতে অধিকার বা গণতন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

মার্কিন প্রতিনিধিদের সফরের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ কর্মকর্তারা নতুন করে পথ চলা শুরুর ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, নির্বাচন এখন একটি অতীতের বিষয়। উভয়পক্ষের মধ্যে বার্তা বিনিময় ছিল উষ্ণ, এবং কার্যকর। এতে অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করা নিয়ে প্রচুর রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। এ চিত্র গত এপ্রিলের পুরো বিপরীত। ওই সময় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। বলেছিলেন, তারা শাসকগোষ্ঠী পরিবর্তন করতে চায়।

এ পরিবর্তনের কারণ কী? একটি সম্ভাব্যতা হতে পারে, ঢাকাকে অভিযুক্ত করার রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রাখতে চায় ওয়াশিংটন। বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা যতই প্রকাশ্যে মত দেন, ততই তারা এতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েন। উদাহরণ হিসেবে, গত নভেম্বরে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ইঙ্গিত করে সহিংস হুমকির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন দূতাবাস।

আরও পড়ুন>> ‘মিয়ানমারের গুলি আমাদের গায়ে লাগা ভালো লক্ষণ নয়’

এক্ষেত্রে কৌশলগত ভূমিকাও বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। বার বার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে চাপ দেয়ায় তাতে চীন, রাশিয়া উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। তারা এটাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করতে থাকে। এ চাপে হতাশ হয়ে পড়ে ভারত। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিতও। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা কার্যকরভাবে ঢাকায় সুবিধা দিয়েছে মস্কো এবং বেইজিংকে। আর দিল্লিকে দিয়েছে পীড়া।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগে ভূ-রাজনীতি ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারে যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র এসব স্পর্শকাতর ইস্যুতে ঢাকার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়া নিশ্চিত করতে চায়। উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতায় ক্রমবর্ধমানভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি। অন্য যেকোন কূটনৈতিক মাথাব্যথা কমিয়ে আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের পরিবর্তন যতটা তীক্ষ্ণ বলে মনে হচ্ছে, আসলে ততটা তীক্ষ্ণ তা নয়। নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও সম্পর্ক এরই মধ্যে গভীর হয়েছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার চিঠিতে কিছু ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার মধ্যে বাণিজ্য-প্রতিরক্ষা-জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার বিষয়ক ইস্যু রয়েছে।

মার্কিন দূতাবাস বিবৃতিতে বলেছে, এ সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আফরিন আখতার। এ সময় তিনি জেলে থাকা বিরোধী দলের হাজারো নেতাকর্মীর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ঢাকা এখনো ওয়াশিংটনের মূল্যায়নভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে টেস্ট কেস হিসেবে রয়ে গেছে। তবে এ নিয়ে বর্তমানে কম কঠোর অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারি চাপ নয়, সম্পর্কের সুর এবং বার্তা জোরালোভাবে ইতিবাচক ও কার্যকর মনে হচ্ছে। আপাতত যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে- কৌশলগত গুরুত্ব হলো বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি মসৃণ সম্পর্ক বজায় রাখা।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ