Apan Desh | আপন দেশ

গঙ্গা চুক্তির নবীকরণে মমতাই ফ্যাক্টর

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ৬ মে ২০২৩

আপডেট: ১৯:১৫, ৬ মে ২০২৩

গঙ্গা চুক্তির নবীকরণে মমতাই ফ্যাক্টর

ফাইল ছবি

তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে ঢাকা, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। ঢাকা-দিল্লির মধ্যে বিদ্যমান ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গাচুক্তির কার্যকাল শেষ হবে তিন বছর পরেই। নানা জটিলতায় তিস্তার পানি চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এরই মধ্যে গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে আলোচনা শুরুর শুরু। ঠিক আগ মুহূর্তে বেঁকে বসেছেন, শর্ত দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। দিল্লিকে আন্তঃ রাজনীতির প্যাঁচে ফেলার কারণে গঙ্গাচুক্তির নবায়ন অনিশ্চয়তায় পড়বে নিশ্চিত-এমন ধারণা বিশ্লেষকদের।

বৃহস্পতিবার বিকালে মালদায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মমতা সোজাসাপ্টা বলেছেন, বাংলাদেশকে ভালোবাসি, শেখ হাসিনাকেও ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি। তাদের পানি দিতে আপত্তি নেই তবে দিল্লিকেও বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।

গঙ্গাচুক্তির কাছাকাছি এসে মমতা ব্যানার্জির শর্তমূলক মন্তব্য ঢাকা ও দিল্লির কূটনীতিকদের নতুন করে ভাবিয়ে তোলেছে। ইতোমধ্যে মমতার পুরো বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করতে কলকাতার শাখা দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা। 

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়ার সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। চুক্তি নবায়নের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, ফারাক্কা নিয়ে তত বেশি সরব হতে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। কারণ, আগেরবার চুক্তির সময় ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন এইচ ডি দেবেগৌড়ার সরকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতিবসুকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। বছর তিনেক পরে সেই চুক্তির নবীকরণ হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের যে চুক্তি হবে তাতে সঙ্গে থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। 

মালদহে প্রশাসনিক বৈঠকেও ফারাক্কা চুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন মমতা বলেন, এটি কেন্দ্রের সরকারের অধীনস্থ একটি বিষয়। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের বিষয়টিও কেন্দ্রের। তারা ড্রেজিং পর্যন্ত করেনি। ফলে মানুষের খুব অসুবিধা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি করেছিল, আমরা তাদের জল দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকার তখন লিখিতভাবে চুক্তি করেছিল, পরিবর্তে আমাদের টাকা দেয়া হবে এবং সেটা আমাদের ফারাক্কাকে ভালো রাখবার জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা সেই ৭০০ কোটি টাকা পাইনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গঙ্গা নদীর ভাঙন ১০০ বছর ধরে চলছে। সবাই ক্ষমতায় এসেছে, চলেও গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধে কেউ কিছুই করেনি। অথচ গঙ্গার ভাঙন বিষয়টি কেন্দ্রের সরকারের অধীনে, আমার অধীনে নয়। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পটিও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে।

বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লিকে শর্ত দেয়া এবং বাংলাদেশ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত পছন্দ করার গড় হিসেবটা মিলছে না। মমতা ব্যানার্জি সত্যিই তিনি ঢাকাকে পানি দিতে চান, নাকি ঢাকাকে পানি দেয়ার নাম করে দিল্লির কাছ থেকে পাওনা টাকা তুলতে চান; তা এখনো পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে মমতার এমন বেঁকে বসা ভারতের আন্তঃরাজনীতিতে কোনো কৌশল কাজ করে কিনা- সেদিকটিও নজরে রেখেছেন কূটনীতিকরা।

দিল্লি-ঢাকার সরকারি সূত্র বিষয়টি নিয়ে আপাতত মন্তব্য করছে না। তবে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তারা কাজ করছেন এমন তথ্য মিলেছে। 

পানি ও নদী বিষয়ক গবেষক ড. আইনুন নিশাত আপন দেশ’কে বলেন, গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছে ঢাকা-দিল্লি। সে সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার (দিল্লি) পশ্চিমবঙ্গ (কলকাতা) সরকারকে কি বলেছিল অথবা মমতা ব্যানার্জি কি বলেছেন সেটি বাংলাদেশের দেখার বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা মনে করি, ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের ন্যায্যদাবি অনুযায়ী পানি পাওয়া উচিত। 

তিনি বলেন, গঙ্গাচুক্তির আগে মমতা ব্যানার্জির এমন মন্তব্য নিশ্চয় চুক্তি নবীকরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ