Apan Desh | আপন দেশ

‘এইটুকুই বললাম, আর কিছু না - - -’

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২০ জুন ২০২৩

আপডেট: ১৮:০৭, ২০ জুন ২০২৩

‘এইটুকুই বললাম, আর কিছু না - - -’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মো. সরোয়ার হোসেন

‘ঘটনা হইছে, এইটা এমন একটা চেয়ার সবাইরে খুশি করা যায় না। যারে একটু খুশি করতে পারি না তারই একটু চু...... (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ ব্যবহার করেন) ওঠে। এইটুকুই বললাম, আর কিছু না...।’ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত কিছু গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে এভাবেই উত্তর দেন  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মো. সরোয়ার হোসেন। তিনি বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) ক্যাডারের কর্মকর্তা। 

অভিযোগ রয়েছে, এসোসিয়েট মেম্বার অফ ইন্সটিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (এএমআইই) ডিগ্রি সম্পন্ন করার পূর্বেই মো. সরোয়ার হোসেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি নিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশ গেজেটে উল্লেখ আছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি লাভ করতে হলে অবশ্যই এএমআইই ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে। মো. সরোয়ার হোসেন পদোন্নতি লাভ করার পর এই ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আমি এএমআইই পাশ করেছি ১৯৮৮ সালে এবং চাকরি নিয়েছি ১৯৮৯ সালে। তাহলে কিভাবে আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হওয়ার পর এএমআইই ডিগ্রী নিলাম! আপনি কি মনে করছেন এটি ছেলেখেলা? আমার এই চেয়ারটায় বসতে গেলে তিনটা মন্ত্রণালয়, তারপর এই ফাইলটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়। এইটা ছেলেখেলা? যে এইটা আমি এইটা লুকাইয়া ইয়ে করতে পারবো, আমি এইটা না সেইটা। আমি অমুক পাস করি নাই, অমুক পাস করছি। এতো? এনএসআই, ডিজিএফআই রিপোর্ট নিয়া তারপর এই চেয়ারে বসা।’

জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকৌশলী সাইফুর রহমান অবসরে গেলে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) যোগদান করেন মো. সরোয়ার হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব (পানি সরবরাহ-১) মো. মুস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। যার স্মারক নম্বর- ৪৬.০০.০০০০.০৮৩.০১২.০১১.২১-৮৪১, তাং ২৯/১২/২০২২ ইং।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদফতরের একাধিক প্রকৌশলী জানান, ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে মো. সরোয়ার হোসেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ৫ম গ্রেডে পদোন্নতি লাভ করেন। এর ৬ মাসের মাথায় ২৬ জুলাই ২০১৮ তিনি ৪র্থ গ্রেড হিসেবে তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

অভিযোগে রয়েছে, প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে বসার পরই মো. সরোয়ার হোসেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধিকাংশ কাজ কোনো না কোনো কৌশলে তার পছন্দের তিনজন ঠিকাদারকে দিচ্ছেন। যাদের নামের আদ্যাক্ষর হচ্ছে, ‘’, ‘’ এবং ‘’। তাদের সঙ্গে রয়েছে সখ্যতা ও বিনিময়।ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনিই।

এছাড়া ক্লিন ইমেজের অনেক কর্মকর্তা থাকলেও চরম বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম সুমনকে বিশেষ উদ্দেশ্যে অধিদফতরের সংস্থাপন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে বসানো হয়। ইতোপূর্বে ফয়জুল ইসলাম সুমন নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠে। এমনকি অধিদফতরের কর্মচারি লীগের প্রায় সকল সংগঠনের নেতা-কর্মিদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও কর্মবিরতি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী তাকে ওই দায়িত্বে থেকে সরাতে বাধ্য হন।

‘হরিলুট প্রকল্প’ খ্যাত প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (পিইডিপি-৩) প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাজের সময়সীমা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান যেমন কোনো বিধি-বিধানের ধার ধারেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: সরেয়ার হোসেনও একই পথ অনুসরন করছেন। পিইডিপি-৩ প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্টে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রধান প্রকৌশলী সারোয়ারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদকে। পিইডিপি-৩ প্রকল্প ছাড়াও প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদ অপর একটি প্রকল্পের পিডিসহ মোট পাঁচটি দায়িত্বে আছেন। অর্থাৎ তিনি বর্তমানে ছয়টি দায়িত্ব পালন করছেন বলেও অভিযোগ।

দক্ষ অনেক কর্মকর্তা থাকলেও একজন কর্মকর্তাকে ছয়টি প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়ায় প্রধান প্রকৌশলীর মতলব নিয়ে নানা কথা চাউর রয়েছে।

একাধিক সূত্রের দাবি প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদ সজ্জন কর্মকর্তা। যার ফলে তাকে ব্যবহার করে মনখুশি সবকিছু বাগিয়ে নিচ্ছেন মো: সরোয়ার হোসেন। অধিদফতরে যতই দক্ষ হোক প্রধান প্রকৌশলীর ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন ছাড়া কোনো কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন না- এমন অভিযোগ উঠেছে।

মতামত জানতে প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদ-এর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পের পিডি প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম আপন দেশকে বলেন, ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা অথবা চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বললে আমি তথ্য দিতে পারব,  অথবা এ প্রকল্পের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না-এমনটাই বলতে হবে।

প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, যা-ই করেন আপনারা ভালো করে জেনেশুনে করবেন। কেউ একটা লিখিত কিছু পাঠাইয়া দিল ওইটা দেখে আপনারা যদি একটা কিছু করে ফেলান- এটা ঠিক না।

স্থানীয় সরকার সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম এ ব্যাপারে বলেন, অনিয়ম-দূর্নীতির সঙ্গে যে বা যারাই সম্পৃক্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপন দেশ/এবি /আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ