Apan Desh | আপন দেশ

মৃত মানুষের নামে মামলা করল রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৩ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৩:২১, ২৩ আগস্ট ২০২৩

মৃত মানুষের নামে মামলা করল রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

ফাইল ছবি

রাজশাহীতে মৃত নারীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না করেই আরডিএ’র পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয়েছে বলে মৃতের স্বজনেরা দাবি করেছেন।

দিলারা খাতুন নামে ওই নারী মারা গেছেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর আরডিএ’র পক্ষ থেকে মৃত দিলারাসহ তার এক ভাই ও এক বোনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর। পরে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আরডিএ’র পক্ষ থেকে মৃত দিলারাসহ তার এক ভাই ও এক বোনকে আসামি করে মামলা করা হয় চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিলে। তবে আরডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগ যাচাই করেই মামলা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর মহল্লায় চন্ডিপুর মৌজার আরএস ১০০৬ দাগে পৌনে তিন কাঠা জমির মালিক হলেন তিন সহোদর। তারা হলেন- মিজানুল ইসলাম, ইসমত আরা ও রেবেকা সুলতানা। এই তিন সহোদরের মধ্যে মিজানুল দুই দশমিক ২১ শতাংশ, ইসমত আরা শূন্য দশমিক শূন্য আট শতাংশ ও রেবেকা সুলতানা শূন্য দশমিক ১৫৯ শতাংশের মালিক। এভাবে তারা বণ্টননামা দলিল করে নিয়েছেন।

এই তিন সহোদরের আরেক বোন দিলারা খাতুন মারা গেছেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তাকেও আরেক স্থানে জমির ভাগ বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দিলারা খাতুন বাদে বাকি তিন সহোদর ১০০৬ দাগের পৌনে তিন কাঠা জমিতে যৌথভাবে পাঁচ তলার ছাদ স্যাটারিং পর্যন্ত ইমারত (ভবন) নির্মাণ করেছেন। এজন্য তারা আগেই আরডিএ’র কাছ থেকে এনওসি গ্রহণ, নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় সব শর্তাদি পূরণ করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তবে পাঁচ তলার ছাদ স্যাটারিং পর্যন্ত ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশিষ্ট কাজ বন্ধ করে দেয় আরডিএ। পরবর্তীতে মামলা করা হয়।

মামলায় জীবিত তিন সহোদরের মধ্যে আসামি করা হয়েছে মিজানুল ইসলাম ও ইসমত আরাকে। আর জীবিত আরেক সহোদর রেবেকা সুলতানা আসামি হননি। মামলার ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে মারা যাওয়া বোন দিলারা খাতুনকে। অথচ এই জমির মালিক না হওয়া সত্বেও এবং ভবন নির্মাণের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও মৃত দিলারা খাতুনকে আসামি করার কারণ কী বা কীভাবে তাকে আসামি করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলাটির বাদী হয়েছেন আরডিএর ইমারত পরিদর্শক আরিফুল হক।

মিজানুল ইসলাম বলেন, ভবন নির্মাণ কাজের জন্য আরডিএ’র কাছ থেকে এনওসি গ্রহণ, নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় সব শর্তাদিই পূরণ করেই আমরা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।

আর আরডিএ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা অনুমোদিত নকশা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং অনুমোদনের ১৩ নম্বর শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। তাই অবৈধ নির্মাণ অপসারণ না করায় ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইমারত নির্মাণ কমিটির ৮৪তম সভায় মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আরডিএ কর্তৃপক্ষ মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং চলতি ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।

আরও পড়ুন <> ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধে কর্মহীন ৬ হাজার শ্রমিক

তবে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন পরবর্তীকালে আইন লঙ্ঘন করলে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আরডিএ কর্তৃপক্ষ শরীফুল ইসলাম নামে একজন অভিযোগকারীর অভিযোগ যাচাই না করেই মৃত নারীকে আসামি করে মামলা দায়ের পরিকল্পিত নাকি অনিচ্ছাকৃত ভুল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃত নারীর স্বজনেরাসহ অনেকে।

মামলা করার আগে আরডিএ’র পক্ষ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাবও দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তাদের জবাব সন্তোজনক মনে করেনি আরডিএ। ফলে পরবর্তীতে মামলা করা হয়।

অন্যদিকে অভিযোগকারী শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরডিএ’র কাছে পাল্টা অভিযোগ করেছেন ভবন নির্মাণকারী তিন সহোদরের একজন মিজানুল ইসলাম। ভবন নির্মাণের অনুমোদন না থাকা, প্লান ছাড়া ভবন নির্মাণসহ আরও কিছু কারণ দেখিয়ে এই অভিযোগ করেন মিজানুল ইসলাম। তবে মিজানুল ইসলামের দাবি, শরীফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আরডিএ’র পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে করে প্রতীয়মান হয় যে, আরডিএ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে মামলা দায়ের করেছে। আর শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়া আরডিএর এক ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ বলে মনে করছেন মিজানুল ইসলাম।

আরডিএর ইমরারত পরিদর্শক আরিফুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে মামলার বাদী করেছে। আমি কিছু বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে জানতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

জানতে চাইলে আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিলারা খাতুন নামে যে নারী মারা গেছেন সেটি আমাদের জানা নেই। যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার স্বজনেরা কেন আমাদেরকে জানাননি। তিনি বলেন, তাদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে জানালে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়