Apan Desh | আপন দেশ

জেলেদের কার্ড আছে সেবা নেই, দিন কাটে অনাহার-অর্ধাহারে 

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১৫, ২৪ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ২০:২৯, ২৪ জুলাই ২০২৩

জেলেদের কার্ড আছে সেবা নেই, দিন কাটে অনাহার-অর্ধাহারে 

ছবি : আপন দেশ

বাগেরহাট: এক যুগের বেশি সময় ধরে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন সুনিলা বিশ্বাস (৪২)। স্বামী মারা যাওয়ার পরে সংসার চালাতে নদীই তার একমাত্র ভরসা। জালে মাছ উঠলে ঘরে উনুন জ্বলে না হলে অর্ধাহারে- অনাহারেই দিন কাটে মা-ছেলের। ২০১৪ সালে একটি জেলে কার্ড পেলেও আজ অবধি কার্ডের বিপরীতে কোনো সরকারি সেবা পাননি তিনি।

তবে এমন দৃশ্য শুধু বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বারুইপাড়া এলাকার সুনিলা বিশ্বাসের পরিবারেই নয়। জেলার সদর, রামপাল, ও কচুয়া এই তিন উপজেলার অন্তত দেড় হাজার জেলে পাননা কোনো সহায়তা।  

সুনিলা বিশ্বাস বলেন, রোদ, ঝড় বৃষ্টি, অমাবশ্যা পূর্নিমা  মাথায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে দাউদ খালি নদীতে জাল ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখন মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা করছে সরকার তো কি খাবো এখন? গত ২০১৪ সালে সরকারি সহোযোগিতার একটি জেলে সহায়তা কার্ড পাই তবে গত ৯ বছরে সহায়তা হিসেবে এখনো মেলেনি এ জেলে কার্ডের সহোযোগিতা।  পাই না কোন সরকারি সেবাও আর বিধাব কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা খালি আশ্বাস দেয় এই ভাবে পার হয়েছে এক যুগের বেশী সময়। তা ও পেলাম না। 

তার মত আরও বেশ কয়েকজন নারী এই নদীতে জাল ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে অবরোধ চলাকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও তাদের খোঁজ রাখে না সংশ্লিষ্ট কোন দফতর।

প্রতি বছর সাগরে ৬৫ দিন এবং সুন্দরবন উপকূলের নদ নদীতে ১০৪ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারনে বেকার থাকেন জেলে পরিবারগুলো। এই সময় সরকারি খাদ্য সহায়তা না পাওয়ায় সংসার চলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। 

অবরোধকালীন সময়ে বেকার অনেকে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে মহাজনদের দাদোন ও সুদের কারণে ঋণে জর্জরিত হচ্ছেন। 

মৎস বিভাগ সূত্রে জানাযায়, জেলায় নিবন্ধিত জেলে সংখ্যা ৩৯হাজার ৬শ২৭ জন। যার মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে সংখ্যা ১২ হাজার। আর খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন ৯ হাজার। এছাড়া সুন্দরবনের উপর সরাসরি  নির্ভরশীল নদী খালে মাছ ধরা ৬ থেকে ৮ হাজার জেলে খাদ্য সহায়তা পায়নি।

রামপালের লক্ষ্মণ পাল বলেন, জন্মের পর থেকেই  বৈধভাবে জঙ্গলে মাছ ধরি। সরকার এখন জঙ্গলে যাওয়া বন্ধ করে দিছে। দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতি কারণে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে কেউ খবর নেয় না। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া করাইতে পারছিনা। সরকার থেকে একটা জেলে কার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনদিন এ কার্ড  থেকে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পেলাম না।  অনেক জেলেরা শুনছি পায়েছে। আমার অপরাধ টা কি? আমরা ও তো জেলে? আমরা কেন পাবো না?

চাকশ্রী এলাকার জেলে আব্দুল সত্তার বলেন, নদীতে মাছ ধরতে দেয়না। ছেলে মেয়ে ৪জন নিজেরা দুইজন কয়ডা চাল পেতাম তাও পাইনা। শাক পাতা তুলে খেয়ে না খেয়ে দিন যায়। 

শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী এলাকার রশীদ মোল্লা বলেন, ছেলে-মেয়ের স্কুলের খরচ যোগাতে পারিনা। আমাদের মেম্বার এর কাছে শুনেছি এবার চাল আসেনি। নদীতে জাল ধরতে দেয় না, চালও পাইনা। আড়ৎদার ও মহাজনদের থেকে দাদোন নিয়ে কোন মতে চলছি।

কচুয়া উপজেলার বগা এলাকার জেলে রহিম উদ্দিন বলে, এই কাজ করে ছেলে মেয়ের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সংসারের সব চলে। সরকার এখন নদী থেকে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা করছে। তা হলে এখন বাঁচবো কি করে। একটা জেলে কার্ড আছে শুধু নামে পাইনি এখন পযন্ত কিছু। সমিতির কিস্তি বা দিব কি করে।

বাইতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির আবদুল্লাহ বলেন, আমার ইউনিয়নে ৩০০ জনের অধিক নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। কিন্তু উপজেলা থেকে আমার ইউনিয়নে ২০ জন জেলে কে ২ মন করে মোট ৪০ মন ভিজিএফ চাল দেয়ার তালিকা নেয়া হয়। সে অনুসারে বিতরণ করা হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত জেলেদের ভিজিএফ চালের বরাদ্দ আসেনি। চাল আসলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী বন্টন করব।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু জেলে ৩০০ আর বারাদ্দ আসে ২০ জনের তাই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে থাকি, যেন সকল জেলে সরকারের এই সহায়তা পান।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৩৯ হাজার ৬২৭ জন জেলে রয়েছে। ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এই তিনটি উপজেলায় ৯ হাজার জেলেরা খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকে। এর বাইরে সদর, কচুয়া ও রামপাল উপজেলায় দেড় হাজার জেলে আছে যারা এখনো এই মানবিক সহায়তা পায়নি। তাদের এবং সুন্দরবন নির্ভরশীল ৬ হাজার জেলের তালিকা কর্তৃপক্ষ নিকট পাঠানো হয়েছে। আশা করি তারা সহযোগিতা পাবেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এই তিনটি উপজেলায় ৯ হাজার জেলেরা খাদ্য সহায়তা পেয়েছে। বাকি রামপাল, কচুয়া ও বাগেরহাট সদরের জেলেরা জেলে কার্ডের সেবা এখনো পাইনি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ