ছবি : সংগৃহীত
তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য। এ খাতে মোট আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে এ পণ্যটি থেকে।
বিপরীতে একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান রফতানি বাজার। মোট রফতানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ আসে দেশটি থেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশটিতে পোশাক রফতানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান এবং নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাজারে রফতানি কমে আসার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে উদ্যোক্তাদের। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের রফতানি খাতের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়ন এবং শ্রম অধিকার রক্ষার ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা আগামী দিনে রফতানিতে প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে রফতানিকারকদের উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে নীতি সুদহার বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি নিয়ে শঙ্কা এবং অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো উঠে আসছে বেশ কয়েক মাস ধরে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার কথা উল্লেখ করে গত বছরের মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার রক্ষায় নতুন নীতি-কাঠামো ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে এটি।
ওই ঘোষণায় বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে।
গত ১৬ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত প্রেসিডেন্সিয়াল স্মারক সইয়ের ঠিক চার দিন পর ২০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে মনে করলে নিষেধাজ্ঞা নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন অনেকে।
আরও পড়ুন <> আলু-পেঁয়াজে স্বস্তি, আগের দামেই মাছ-মাংস-ডিম
তবে রফতানি কমে আসার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমে আসা অবশ্যই উদ্বেগের। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমে আসার কারণেই চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের সার্বিক রফতানি হয়তো ঋণাত্মক ধারায় নেমে যেতে পারে। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন তিনি।
তাহলে রফতানি কমছে কেন– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা কমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা নীতির মধ্যে নীতি সুদহার বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি কমেছে। একই কারণে অন্যান্য দেশের রফতানিও কমেছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৬৭৯ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯০৪ কোটি ডলার। অন্যদিকে দেশটিতে প্রধান রফতানিকারক দেশ চীনের রফতানি কমেছে ২৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ভিয়েতনামের রফতানি কমেছে ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ। মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২৪১ কোটি ডলার। ২০২২ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল নয় হাজার ৩৩১ কোটি ডলার।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।