Apan Desh | আপন দেশ

মাছের দাম চড়া, পেঁয়াজ-সবজিতে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ৯ জুন ২০২৩

আপডেট: ১১:৫০, ৯ জুন ২০২৩

মাছের দাম চড়া, পেঁয়াজ-সবজিতে স্বস্তি

ফাইল ছবি

আমদানি শুরু হওয়ায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে ধীরে ধীরে। স্বস্তি এসেছে সব ধরনের সবজির দামেও। ব্রয়লার মুরগির দামও খানিক কমেছে। তবে মাছের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া চিনির দাম ক্রেতার কাছে ‘তেতো’ লাগছে। বাজারে কোথাও কোথাও প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

শুক্রবার (৯ জুন) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল, মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, মীরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলি, যাত্রাবাড়িসহ একাধিক এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। 

সরেজমিন দেখা যায়, কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা কমে এখন ৬০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পটল ও ঢেঁড়সের কেজি ৫০ টাকার মধ্যে এসেছে। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দামও অনেক বাজারে কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। তবে মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মাছের সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। 

রামপুরা বাজারে খুচরাপর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও কম। ভারতীয় এ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম কমলেও বাজারে আদার দাম কমছে না। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম বেশি। মসলার বাজারে আরও কিছু পণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী। জিরার কেজি ৯০০ টাকা। মাসখানেক আগেও জিরার কেজি ছিল ৬০০ টাকা।

বড় বাজারগুলোতে খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনি বিক্রি করছেন ১৩৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ মুদি দোকানে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যেখানে সরকার খুচরাপর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ১২৫ টাকা নিধার্রণ করে দিয়েছে।

এদিকে, চিনি নিয়ে খোদ খুচরা বিক্রেতারাই উষ্মা প্রকাশ করেন। গত রমজানে ২৫০ টাকায় ঠেকেছিল ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর তা কিছুটা কমে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। শুক্রবার অনেক বাজারে তার চেয়েও ১০ টাকা কমে, অর্থাৎ ২১০-২২০ টাকা দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লারের সঙ্গে সোনালি জাতের মুরগির দামও কমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ৩০০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামে তেমন কমেনি। বড় বাজারে ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

কয়েকমাস চড়া সবজির বাজার কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় এসেছে। গ্রীষ্মকালীন বেশিরভাগ সবজি এখন ৫০ টাকার মধ্যে। সজনে, কাকরোল, বরবটি, কচুর লতিসহ কয়েক ধরনের সবজি এখনো ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দামে পরিবর্তন দেখা যায়নি। ৪০ টাকার আশপাশে আটকে আছে আলুর কেজি, যা বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

মাছের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বাজারে ‘সস্তা মাছ’ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙাসের দামও বেড়েছে। এ দুই ধরনের মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ মাছের দামও গত সপ্তাহের চেয়ে এখন কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া পাবদা, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন-মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

মগবাজারে মুদি দোকানি আলম মিয়া বলেন, ভারতের পেঁয়াজ আসায় প্রতিদিন দাম কমছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকারও বেশি কমে গেছে। আমদানি বেশি হলে দাম হয়তো আগের মতো হবে। ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে কিনতে পারবেন ভোক্তারা।

মালিবাগের মিয়া স্টোরের ম্যানেজার খায়রুল আলম বলেন, কোম্পানি চিনি দেয় না। পাইকারি বাজার থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অথচ চিনির দাম নিয়ে ক্রেতারা আমাদের কথা শোনান।

শ্যামলী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা কাওসার মিয়া বলেন, খোলা চিনি কেনা পড়ে বেশি দামে। এখনো চিনির বাজার স্বাভাবিক হয়নি। প্যাকেটজাত চিনি পাই না দোকানে, রাখিও না।

মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, আমি খোলা চিনি এখন আর বিক্রি করি না। কেনা দাম বেশি হয়ে যায়। তাই এখন দুয়েক কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করি। প্যাকেট চিনি আমার কেনা পড়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। বিক্রি করি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

খিলগাঁও রেলগেট মাছের বাজারের বিক্রেতা আবু হানিফ মিয়া বলেন, কয়েকদিন লোডশেডিংয়ে বরফের দাম বেড়েছে। এ কারণে সব ধরনের মাছ কেজিতে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টায় থাকেন। এবারো তাই করলেন। সংকট দেখিয়ে দেখিয়ে ভোক্তার পকেট ফাঁকা করলেন। এক্ষেত্রে সরকারকে বাজার ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। সরকারকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।

আপন দেশ/আরএ
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ