Apan Desh | আপন দেশ

গরুর চামড়া পানির দরে, ছাগলেরটা ফেলেছে ডাষ্টবিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ৩০ জুন ২০২৩

আপডেট: ০০:৫৭, ৩০ জুন ২০২৩

গরুর চামড়া পানির দরে, ছাগলেরটা ফেলেছে ডাষ্টবিনে

ছবি: সংগৃহীত

দেশের বাজার সকল পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনটি দ্বিগুণ কোনো পণ্যের দাম তার চেয়েও বেশি। কিন্তু বাড়েনি মানুষের শ্রমের দাম আর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। কোরবানিদাতা নিজে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে দিয়েছেন মসজিদ বা এতিমখানায়। আর সেখান থেকে কিনেছেন মৌসুমী ব্যবসায়িরা। 

গত বছরের মতো এবাররও পানির দামে বিক্রি হয়েছে পশুর চামড়া। তবে সরাসরি ট্যানারীতে নিয়ে গেলে শতকরা ৩/৫ টাকা বাড়তি দিয়েছেন ক্রেতারা। সেটাকাও চলে গেছেছ রিকশা বা ভ্যান ভাড়ায়।

এদিকে গত কয়েক বছরের মতো এবারও ছাগল ও খাসির চামড়ার কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ক্রেতা না পেয়ে অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় এসব চামড়া রেখে যান। তবে ক্রেতা না থাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা লোকজনও এসব চামড়া ফেলে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন <> ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার সর্বোচ্চ দাম ৫৫, ঢাকার বাইরে ৪৮ টাকা: বাণিজ্যমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অভিন্ন চিত্র মিলেছে চামড়া কেনাবেচা এবং ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার। 

রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই এলাকার আড়তগুলো আকারভেদে ৭০০ থেকে হাজার টাকা দরে প্রতি পিস চামড়া কিনছে। গত বছর এই দর ছিল ৬০০-৮০০ টাকা। ঢাকার এলাকাভিত্তিক মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে অবশ্য ট্যানারি মালিকরা বা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে লবণ ছাড়া কাঁচা সংগ্রহ করছেন। তবে সরাসরি ট্যানারিতে পৌঁছে দিলে চামড়া প্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়েছেন।

ঢাকার খিলগাঁও, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ছোট চামড়ার দাম দিচ্ছেন ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। তবে চামড়ার আকার কিছুটা বড় হলে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিচ্ছেন তারা।

সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন জানিয়ে ঢাকার পোস্তা এলাকার মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক আবু তাহের এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকার এ বছর প্রতি বর্গফুট চামড়ার নির্ধারণ করেছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। আমরা এ দরে চামড়া কিনছি। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি পিস চামড়ার দর গড়ে ১০০ টাকা বেশি দিচ্ছি।

মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, আমি আকারভেদে প্রতি পিস চামড়া ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে কিনছি। গত বছর দর ছিল ৬৪০ থেকে ৯০০ টাকা।

পোস্তায় একটু বেশি দর মিললেও বিভিন্ন এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে চামড়া সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে প্রতি পিস চামড়ার দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দিছেন ট্যানারি মালিকরা।

খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মিসবাহুল উলুম মাদ্রাসার খাদেম মোহাম্মদ শামীম জানান, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০০ টাকা দরে তিনি ২৮০ পিস চামড়া বিক্রি করেছেন। গত বছর এ চামড়া গড়ে ৬৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন।

খিলগাঁও চৌরাস্তা জামে মসজিদ ও মাদ্রাসার এক খাদেম জানান, এবার তারা ৭৫০ টাকা দরে চামড়া বিক্রি করছেন। একই এলাকার তিলপাপাড়ার মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রতি পিস চামড়া ৭৭০ টাকা এবং খিলগাঁও রেলগেট এলাকার মোহাম্মদিয়া হাফিজিয়া উলুম মাদ্রাসা ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। ট্যানারি মালিকরা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ চামড়া সংগ্রহ করেছে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবিএস ট্যানারির পক্ষে চামড়া সংগ্রহ করছিলেন নুরুল হক। জানান, গত বছরের তুলনায় দাম বাড়েনি। তবে যেসব মসজিদ ও মাদ্রাসা এলাকাভিত্তিক মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া বিক্রি করছে তারা ভালো দাম পাচ্ছে না। গোপীবাগ জামে মসজিদ কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে চামড়া কেনার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার বেশি দাম দিচ্ছে না।

বাসাবো এলাকার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন জানান, তিনি ছোট চামড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা দরে কিনেছেন। চামড়ার আকার খুব বড় হলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি দাম দিলে তার পোষাবে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করার পর সহসাই দাম পাওয়া যায় না। এজন্য এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত ঘুরতে হয়।

একই কথা জানান খিলগাঁওয়ের মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম। এক লাখ টাকা দামে কেনা কোরবানির গরুর চামড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, শুরুতে ১৫০ টাকা দাম বলেছিল। বলে কয়ে ৩০০ টাকা পেলাম।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ঢাকায় বেশিরভাগ কোরবানিদাতা মসজিদ বা মাদ্রাসায় চামড়া দান করে দিয়েছেন।

চাঁদপুরের মেহেদী হাসান জানান, গ্রামে এক লাখ ৪২ হাজার টাকা দামে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীর কাছে ওই চামড়া বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ১০০ টাকা।

তিনি বলেন, বাজারে নিয়ে চামড়া বিক্রি করলে হয়তো দেড়শ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু রিকশা বা ভ্যানভাড়া বাবদ ১০০ টাকা চলে যাবে। এজন্য অনেকে মসজিদ বা মাদ্রাসায় চামড়া দান করে দেন।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ