Apan Desh | আপন দেশ

দেশ-জাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি কামনা

আখেরি মোনাজাতে শেষ প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১০:১০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আখেরি মোনাজাতে শেষ প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা

ছবি : সংগৃহীত

দেশ ও জাতির কল্যাণ, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য, সমৃদ্ধি এবং ঈমানি জিন্দেগি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতে সমবেত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কণ্ঠে ‘ইয়া আল্লাহু’ আর‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় টঙ্গীর তুরাগতীরসহ আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা।

ঢাকার কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের সকাল ৯টার দিকে আখেরি মোনাজাত শুরু করেন। ২৩ মিনিটের আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজতের আশায় দুই হাত তুলে অনুনয়-বিনয় করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ মানুষ।

রোববার ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক সাহেব। এরপর কিছু সময় নসিহতমূলক কথা বলেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা সাহেব।

এর আগে আনুমানিক সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে আয়োজন কমিটির পক্ষ থেকে ইজতেমার মিডিয়া বিষয়ক সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানিয়েছিলেন। এর আগে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি এসেছেন ইজতেমা ময়দানে।

আখেরি মোনাজাতে মাওলানা জুবায়ের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি এ উম্মতকে রক্ষা করুন। আমাদের ইমানকে শক্ত করুন। আপনি আমাদের মাফ করে দিন। কোটি কোটি টাকা যেন আমাদের ইমানকে কেড়ে নিতে না পারে, আমাদের ইমানকে যেন নষ্ট করতে না পারে, আপনি আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।’

এর আগে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ছাড়াও আশপাশের জেলার মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আশপাশের মহাসড়ক-সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সব সড়ক দিয়ে রোববার ভোর থেকে মুসল্লিরা হেঁটে দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসেন। ময়দানের চারদিক দিয়েই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসেন।

অনেক মুসল্লি মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলিতে অবস্থান নেন। পুরনো খবরের কাগজ, পাটি ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি, কলকারখানা-অফিস, দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকায় যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষের কাফেলা। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।

ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের যাতায়াত সহজ করতে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ১০টা থেকে গাজীপুরের তিনটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। মোনাজাত শেষে আজ দুপুর ২টার পর সড়কগুলো আবার খুলে দেয়া হবে।

সড়ক তিনটি হলো ঢাকা— ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া মোড় থেকে টঙ্গীর মন্নুগেট সড়ক।

আরও পড়ুন <> বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলছে

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব সড়কে ইজতেমার মুসল্লি বহনকারী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলতে পারবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনীয় গাড়ি যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যমকর্মী বা বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

আরও চার মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় আরও চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ জনে। এর মধ্যে ইজতেমা ময়দানে মারা যান ১৪ জন, ময়দানে আসার পথে একজন পুলিশ সদস্যসহ মৃত্যু হয় ছয়জনের। 

ইজতেমা ময়দানে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার সানোয়ার হোসেন (৬০), চট্টগ্রামের আলম (৫৬),  নরসিংদীর শাহনেওয়াজ (৬০) সিরাজগঞ্জের আল মাহমুদ(৭০), শেরপুরের নওশের আলী (৬৫), ভোলার আ. কাদের (৫৫) ও নেত্রকোনা সদরের কালিয়াঝুড়ি এলাকার হোসেন আহম্মদের ছেলে স্বাধীন (৪৫), নেত্রকোনা থানার কুমারী বাজার গ্রামের আবদুস সাত্তার (৭০), একই জেলার বুড়িঝুড়ি গ্রামের স্বল্পদুগিয়া গ্রামের এখলাস মিয়া (৬৮), ভোলার শাহ আলম (৬০), জামালপুরের পাকুল্লা গ্রামের মতিউর রহমান (৬০), টঙ্গীর আ. জব্বার (৫৫)। আরেক জনের পরিচয় জানা যায়নি।

ময়দানে আসার সময় মারা যাওয়া ছয়জন হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০), ইজতেমায় আসার পথে বাসচাপায় পুলিশ সদস্য হাসান উজ্জামান (৩০) মারা যান, শেরপুরের আমেলা খাতুন (৬০), ঢাকার মিরপুর সাড়ে এগারোর বাসিন্দা মোবাশ্বের আহমেদ (৬৮)। আর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এই ইজতেমা ময়দানে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব । একইভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়