Apan Desh | আপন দেশ

চিকিৎসক হবেন তিন যমজ

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

চিকিৎসক হবেন তিন যমজ

ছবি : সংগৃহীত

মাফিউল হাসান, শাফিউল হাসান ও রাফিউল ইসলাম; বাবাহারা তিন যমজ ভাই। বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ির এ তিন সহোদর সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। 

মাফিউল ২০২৩ সালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। শাফিউল চলতি বছর দিনাজপুর সরকারি এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ ও রাফিউল নোয়াখালী সরকারি আব্দুল মালেক মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

শাফিউল ও রাফিউল ভর্তিসংক্রান্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাবাহারা তিন যমজের অভাবনীয় সাফল্যের গল্প এখন সবার মুখে মুখে। 

ধুনট উপজেলার শেষ সীমানায় বাঙ্গালী নদীর পশ্চিমতীরের বথুয়াবাড়ি গ্রামে। গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে চলে গেছে ধুনট-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক। নদীর কলতানে মুখর, ছায়া সুনিবিড় নিভৃত গ্রামটিতে বাস করতেন গোলাম মোস্তফা। স্থানীয় মাঠপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ শিক্ষকের চার ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। শিক্ষকতার পাশাপাশি চাষবাস করেই কোনোমতে চলত তার পরিবার।

গ্রামের আর দশটি পরিবারের চেয়ে স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার পরিবার ছিল অনেকটাই আলাদা। সন্তানদের শিক্ষিত করতে মোস্তফা তাদের প্রতি ছিলেন বিশেষ মনোযোগী। বড় ছেলে মাহমুদ হাসান, মেয়ে মৌসুমী আকতার ও তিন যমজ ছেলে– মাফিউল, শাফিউল ও রাফিউলকে লেখাপড়া করাতে গোলাম মোস্তফার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দশম শ্রেণি পাস স্ত্রী আর্জিনা বেগমেরও অবদান কম নয়। ১২ বছর বয়সী মাহমুদ হাসান, নয় বছর বয়সী মেয়ে মৌসুমী আকতারসহ ছয় বছরের তিন যমজ শিশুসন্তান রেখে স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর মারা যান।

আরও পড়ুন <> চবির সেই শিক্ষক চাকরিচ্যুত

পরিবারের প্রধান উপার্জন করা স্কুলশিক্ষকটি মারা যাওয়ার পর পরিবারের ভরণপোষণসহ সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়ে যান স্ত্রী আর্জিনা বেগম। আর্জিনা বেগম সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেও সন্তানদের মানুষ করতে তিনি ঘুরে দাঁড়ান। স্বামীর জমিজমা বন্ধক রেখে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হন। বড় ছেলে মাহমুদ হাসান এইচএসসি পাস করার পর মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। মাহমুদ হাসানের চিকিৎসা, মেয়ে মৌসুমী আকতারসহ যমজ তিন ছেলের মেধার কাছে হার মেনে তিনি বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া নিজের তিন বিঘা জমিও বিক্রি করতে দ্বিধা করেননি। মেয়ে মৌসুমী বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে বাংলায় সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

সন্তানরা জানান, মা আর্জিনা বেগমের শত কষ্ট থাকলেও তাদের লেখাপড়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটতে দেননি। যতটুকু পেরেছেন, ততটুকু দিয়েই করেছেন।

মাফিউল, শাফিউল ও রাফিউল বলেন, ‘আমরা তিন ভাই মায়ের দুঃখ-কষ্টের দেয়া টাকা নষ্ট করিনি। মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলাম। তাই আজ মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। আমরা লেখাপড়া শেষ করে মানবিক ডাক্তার হয়ে যেন সমাজের অবহেলিত মানুষের সেবা করতে পারি, দেশবাসীর কাছে সেই দোয়া কামনা করি।’

আর্জিনা বেগম বলেন, ‘পিতৃহারা আমার যমজ তিন সন্তানের সাফল্যে শুধু আমিই খুশিতে আত্মহারা হইনি, প্রতিদিন বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মীরা আমার বাড়িতে আসছেন এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলে খবর প্রচার করছেন। আমার সন্তানদের সাফল্যের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতেই গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। তবে এখানেই শেষ নয়; আমি তাদের মানবিক ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাব।’ 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ