Apan Desh | আপন দেশ

কারাবন্দি জবির খাদিজার প্রশ্ন ‘আমার জামিন কবে অইব মা?’

অনিক রহমান

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৩০ জুন ২০২৩

আপডেট: ০০:২১, ১ জুলাই ২০২৩

কারাবন্দি জবির খাদিজার প্রশ্ন ‘আমার জামিন কবে অইব মা?’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা

এই যে ঈদ গেল। কোরবানি দিইছি, কিন্তু খাইতে পারি না মেয়ে ছারা। গলা দিয়া নামে না। দুইড্যা ঈদ গেল আমার মেয়ে ছারা। এইটারে কি ঈদ বলে? এর মতো কষ্ট আর কি আছে? সন্তান জীবিত আছে কিন্তু আমার পাশে নাই। কোরবানির মাংস পৌঁছাতে পারলেও নিজ হাতে খাওয়াতে পারলাম না।

শুক্রবার (৩০ জুন) ঈদের পরদিন কারাফটকের সামনে এমন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ফাতেমা খাতুন। 

ফাতেমা খাতুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরার মা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মাস ধরে কারাবন্দি খাদিজা। মেয়েকে দেখতে কারাগারে এসেছিলেন ফাতেমা খাতুন।

আক্ষেপ করে ফাতেমা বলেন, মানুষ চুরি করে, ডাকাতি করে, খুন করে, আরও কত জঘন্য কাজ করে জামিন পায়, কিন্তু আমার মেয়েটার জামিন হচ্ছে না। একের পর এক শুনানি পেছাচ্ছে।’

আরও পড়ুন <<>>> ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৫ বছরে মামলা ৭ হাজার ১টি

খাদিজার মা বলেন, ‘প্রতি ঈদে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার মেয়ে সালামি চাইতো। আমি বকা দিতাম। কিন্তু এখন আমারে আর মা বলেই ডাকতে পারে না। এই মেয়েকে নিয়েই আমার আশা ভরসা। দশ মাস কারাগারে খাদিজা। একটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থী, ভার্সিটিতে পড়ছে। সে কতই বা জানবে। ভুল করে হয়তো কিছু কথা বলেছে তাই বলে দশ মাস জেলে থাকবে? মানুষ চুরি করে, ডাকাতি করে, খুন করে, আরও কত জঘন্য কাজ করে জামিন পায়, কিন্তু আমার মেয়েটার জামিন হচ্ছে না। একের পর এক শুনানি পেছাচ্ছে।’

আরও পড়ুন <> সাড়ে ৫ ঘণ্টা কারাবাসের পর মুক্ত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি

ক্ষোভ প্রকাশ করে খাদিজার মা বলেন, ‘আমরা তো রাজনীতি করি না। ওর বাপ বিদেশে কাজ করে, সেই টাকা দিয়ে চলি। তাইলে জামিন হয় না কেন? আমরা কেমন তা চারপাশে শুনলেই জানতে পারবেন। আমার মেয়ে আমারে আজ (শুক্রবার) জিগায়, মা আমার জামিন করে অইব? আমি ওর এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারিনি। আমি এক অসহায় মা। দশ মাস মেয়ে ছাড়া আমি।’

খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযেযাগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২২ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। এক মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম এবং অন্যটির বাদী কলাবাগান থানার এসআই আরিফ হোসেন। দুই বাদীই দায়িত্ব পালনকালে মুঠোফোনে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর (অব.) দেলোয়ারের ভিডিও দেখতে পান। তারপর দুজনই নিজ নিজ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।

আরও পড়ুন <> ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না: আইনমন্ত্রী

খাদিজার জাতীয় পরিচয়পত্র ও একাডেমিক কাগজপত্রে বয়স ১৭ বছর কিন্তু তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পুলিশ দুটি মামলা করা হয়। এর দুই বছর পর মামলার অভিযোগপত্র তৈরি হলে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই থেকে কারাগারে খাদিজা।

বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। এখন আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ