Apan Desh | আপন দেশ

সীমান্তে আতঙ্ক কাটেনি, উখিয়ায় অজ্ঞাত মরদেহ

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সীমান্তে আতঙ্ক কাটেনি, উখিয়ায় অজ্ঞাত মরদেহ

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের একটি এলাকা, ফাইল ছবি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে আতঙ্কে দিন কাটছে কক্সবাজার ও বান্দরবানবাসীর। কক্সবাজারের টেকনাফের জিম্বংখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে থেমে থেমে রাত আড়াইটা পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে টেকনাফের গোটা সীমান্ত এলাকা। 

স্থানীয় লোকজন বলেন, বিজিবির জিম্বংখালী বিওপির বিপরীতে অন্তত দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের জিবিং অং এবং হারিংগাচরের মারিক্কমপাড়া এলাকায় এসব বিস্ফোরণ হয়। 

তবে জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত শান্ত ছিল। গোলার শব্দবিহীন রাত পার করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

অন্যদিকে রহমতের বিল এলাকায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ ধারণা করছে মরদেহটি কোনো রোহিঙ্গা ব্যক্তির হতে পারে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন। 

এদিকে আপাত শান্ত হয়ে এসেছে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত। কিন্তু লোকজনের মধ্যে এক অজানা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। তাদের আশঙ্কা, সীমান্তের ওপারে আবারো বিমান হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হবে। 

এর ছাপও রয়েছে সীমান্ত এলাকায়। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল বেড়েছে, দোকানপাটও খোলা রয়েছে। কিন্তু যারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে কাছে-দূরের আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, ‘শান্ত’ পরিস্থিতিতে তারা ফিরতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।যদিও, বাড়ির গবাদি-পশু ও মালসামানা দেখভাল করার জন্য কেউ কেউ ঘরে ফিরছেন। তবে সেই সংখ্যা খু্ব বেশি না।

এদিকে বৃহস্পতিবার আর নতুন করে মিয়ানমার থেকে যুদ্ধ ছেড়ে কেউ পালিয়ে আসেনি। বরং তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পালিয়ে আসা যেসব বিজিপি সদস্যদের রাখা হয়েছিল তাদের টেকনাফের হ্নীলা উপকূল এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন <> সীমান্তে গোলাগুলি কমলেও আতঙ্ক কাটছে না

পরে বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশের আলোচনার প্রেক্ষাপটে তাদেরকে কক্সবাজার থেকে গভীর সমুদ্রপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উনচিপ্রাং এলাকার রাশেদুল ইসলাম বলেন, একের পর এক গুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের কারণে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে। পরিবারের সদস্যরা খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

গত শনিবার রাত তিনটা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিজিপির তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখল করতে আক্রমণ শুরু করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি। রোববার বিকালে সেটির দখল নিয়ে আরেকটু দক্ষিণ-পশ্চিমে ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলে আক্রমণ করে তারা। রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দুপক্ষের সংঘর্ষ চলে। এই সংঘর্ষে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, শুল্ক ও বিভিন্ন সংস্থার ৩৩০ জন।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত দখলের পর পাশের চাকমাকাটা ও কোয়াংচিমন সীমান্ত চৌকিও দখলে নেয় আরকান আর্মি। এসব সীমান্ত চৌকির দখলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় কাঁপছে বাংলাদেশের সীমান্ত। মিয়ানমারে মর্টার শেল নিক্ষেপে নাইক্ষ্যংছড়িতে দুজন নিহত ও অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং সীমান্তের ওপারে রাতে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। এতে সীমান্তের পাশের গ্রামগুলো কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে ৩০টি পরিবার সীমান্তের ঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন।

হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, হ্নীলার কাস্টমস সীমান্তে ব্যাপক মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আশপাশের গ্রামগুলো কেঁপে ওঠে।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উখিয়ার সীমান্ত শান্ত রয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকায় গত রাতে একটি মরদেহ পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। রাতে হওয়ায় সেখানে পুলিশ যায়নি।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজও সীমান্ত পরিস্থিতি শান্তের কথা বলেন। তিনি বলেন, অনেক দিন পর মানুষ শান্তিতে ঘুমিয়েছে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ