Apan Desh | আপন দেশ

কণ্ঠশিল্পী মমতাজের ডক্টরেট প্রসঙ্গে

রফিক সুলায়মান

প্রকাশিত: ১২:০৫, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

কণ্ঠশিল্পী মমতাজের ডক্টরেট প্রসঙ্গে

ছবি : আপন দেশ

গত ১০ এপ্রিল ভারতের তামিলনাড়ুর ‘গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি’ বাংলাদেশের জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাম্রপত্রে উল্লেখ করেন, বিশ্বের প্রথম কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবামের রেকর্ড, সুদীর্ঘ ৩০ বছর বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা ও সমাজসেবা ছাড়াও নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রেখে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।

এতে জ্বলুনির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, বাংদেশের প্রথাগত ও তথাগত সুশীলদের। তারা বিশ্ববিদ্যালয়টির নাড়ী-নক্ষত্র খুঁজে বের করার দাবি করে জানিয়েছেন যে, এটি কোনো ইউনিভার্সিটিই নয়। নেই কোনো ক্লাসরুম। সেখান থেকে গ্রাজুয়েট হওয়া যায় না। কিছু অনলাইন কোর্স করানো হয় মাত্র।

বাংলা লোক গানে মমতাজের যে অবদান তাতে অনিবার্যভাবেই দেশীয় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম একটি সম্মাননা তিনি অনেক আগেই পেতে পারতেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মমতাজের প্রতি আগ্রহী নয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি এবং শিক্ষার্থী মমতাজের গাওয়া গান শোনে না। মমতাজ ‘যারা থাকে ওধারে’ তাদের শিল্পী। যারা রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে জমিতে কামলা দেন, শস্য উৎপাদনে যুক্ত যারা, যাদের কৃপায় আমরা দালান-কোঠায় থাকি- তিনি তাদের শিল্পী। বাংলাভাষী কোটি কোটি গানপাগলের শিল্পী তিনি। টিভিতে মমতাজের গান বাজলে যেসব পরিবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে তিনি সেসব পোড় খাওয়া পরিবারের শিল্পী।

আরও পড়ুন <> মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যে তিনজন লেখক- তারা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কাজী নজরুল ইসলাম। প্রথাগত শিক্ষায় এই তিনজনের মধ্যে মাঝের জন এগিয়ে। তিনি এন্ট্রান্স পাশ। অথচ তারা সবাই অনারারি ডিলিট। বিখ্যাত অভিনেতা বেন আফ্লেক, মেরিল স্ট্রিপ, ডেনজেল ওয়াশিংটন, গায়ক লায়োনেল রিচি, বক্সার আলী প্রমুখকে মার্কিন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। এগুলো নিয়ে সেখানকার সাংবাদিকেরা কোসো নেগেটিভ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। এক অভিনেতা তো তার বক্তৃতায় বলেই ফেলেছিলেন, আমার পক্ষে গ্রাজুয়েট হওয়াই সম্ভব ছিল না, অথচ আজ আমি ডক্টরেট!

আর জাস্টিন টিম্বারলেক বলেছিলেন, No Dream is too big!!! Keep chasing!!! Trust me… I’m a DOCTOR! মানছি যে মমতাজের হাতে স্কুল-কলেজের সনদ নেই। গ্রাজুয়েশন নেই তার। তিনি এক বাউলকন্যা মাত্র। কিন্তু এটি ভোলাও ঠিক নয় যে তার শিক্ষক দার্শনিক মাতাল রাজ্জাক! যিনি নিজেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়। মাতাল রাজ্জাক যে পর্যায়ের দর্শন-জ্ঞান আমাদের সামনে রেখে গেছেন সেগুলো মৌলিক জ্ঞান। মমতাজ পড়েছেন কোরআন শরীফ, হাদিস, ইজমা কিয়াস, সিহাসিত্তা, বেদ, রামায়ণ, লোকসাহিত্য, বাংলার লোকায়ত দর্শন, মনীষিদের জীবনী। আর নিত্য জ্ঞান আহরণ করছেন পৃথিবীর পাঠশালা থেকে। এভাবেই তিনি জ্ঞানের অন্য স্তরে পৌঁছেছেন।

অনারারি ডিলিট পাওয়ার মূল ক্রাইটেরিয়া হলো সমাজ, সংস্কৃতি ও জাতির প্রতি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা। আমার মনে হয় গায়িকা মমতাজ এটি ভালোমতোই রেখেছেন। গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটিকে ধন্যবাদ, আমাদের রত্ন মমতাজকে স্বীকৃতি দেওয়ায়। রাজনীতির মমতাজ নিয়ে আমার আগ্রহ নেই, কিন্তু মাটির সুরের মমতাজ আমাদের দেশের একটি অন্যতম চরিত্র।

লেখক : সংস্কৃতিবান ও শিল্প-সমালোচক।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়