Apan Desh | আপন দেশ

নানা ভাবনায় এগুচ্ছে দুই দল

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:১২, ৪ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ২১:৪৬, ৪ আগস্ট ২০২৩

নানা ভাবনায় এগুচ্ছে দুই দল

ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত কাছাকাছি আসছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে।  তারা উভয়ই অস্তিত্ব রক্ষার এক দফার আন্দোলন করছে।

বিএনপির আন্দোলন অস্তিত্ব রক্ষার। আওয়ামী লীগের আন্দোলন টিকে থাকার।

দল দুটির একাধিক সূত্র বলছে, রাজপথের আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে প্রথম পর্বের পরীক্ষা শেষ হয়েছে; যা প্রত্যক্ষ করেছে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক মহল। বলা হচ্ছে, এটি ছিল একদফা আন্দোলনের ওয়ার্মআপ পরীক্ষা। প্রথমপর্বের আন্দোলনের ফলাফলের ভিত্তিতে বিএনপি তাদের দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন কর্মসূচি দেবে। বিএনপির কর্মসূচি শুরু হলে যথারীতি আওয়ামী লীগও জনগণের জানমাল সুরক্ষার নামে আবারো পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে।

সাম্প্রতিক বড় শো-ডাউনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপ তৈরি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। আর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীধের বিশ্লেষণ, তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশলের কাছে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, গত ২৯ জুলাইয়ের বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। আর বিএনপির দৃষ্টিতে ক্ষমতাসীনরা যে বিরোধীদের আন্দোলন ভয় পায় এবং দমন-পীড়ন চালায় তা প্রমাণীত হয়েছে অবস্থান কর্মসূচিতে। এমনকি বহির্বিশ্বের কাছেও তা স্পষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন <<>> বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার: মির্জা ফখরুল

জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। এর মধ্যে দুই পক্ষই রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজ নিজ কৌশলে জয়ী হতে চাইছে। এ রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া শঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও ভীতিকে কতটা বিবেচনায় নিচ্ছে দুই দল— সেই প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষ এবং সুশীল সমাজ থেকে। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, গত শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে দলটির এক দফার আন্দোলন হোঁচট খেয়েছে। এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের আরও উজ্জীবিত করেছে।

ঢাকায় মহাসমাবেশে বড় জমায়েত করার পরদিনই (২৯ জুলাই) বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিতি ছিল নগণ্য। এই অবস্থান কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতার অভাবসহ নানা ঘাটতির বিষয়ে দলটির ভেতরেও নানা আলোচনা চলছে। এরপর দলটি এক দফার আন্দোলনের নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়নি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই ঢাকাকেন্দ্রিক অবস্থান ও ঘেরাওয়ের মতো টানা কর্মসূচি নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। নেতা-কর্মীরাও সেভাবে প্রস্তুত ছিলেন। নতুন কৌশল গ্রহণ করার কারণে কিছুটা ছেদ পড়েছে।

রাজপথে অবস্থান বা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিতে সরকার কতটা কঠোর হতে পারে অথবা পরিস্থিতি কী হতে পারে—এ বিষয়ে টেষ্ট করতেই অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করা।  ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি সফল হয়নি সেটা অস্বীকার করা যাবে না, তবে সরকারের পুরনো চরিত্র উন্মোচন করা গেছে বলে নেতাদের ধারণা।

এদিকে সরকার কৌশলে বিএনপিকে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে ব্যস্ত রাখতে চাইছে। বিএনপির অনেক নেতার মতে, এ জন্যই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, দলটি এখন এক দফার আন্দোলনের নতুন যে কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে, তাতে গণমিছিল, মিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচি থাকতে পারে। কেন্দ্র এবং জেলা-মহানগরে সমানতালে চলবে কর্মসূচি।

অন্যদিকে অবস্থান-ঘেরাওয়ের মতো টানা কর্মসূচিতে যেতে দলটির নেতারা কিছুটা সময় নিতে চাইছেন। এই সময়ে গণমিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচি দিয়ে একদিকে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, অন্যদিকে নেতা-কর্মীদের আবার উজ্জীবিত করার কৌশল নিয়েছে দলটি। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মূল্যায়ন হচ্ছে, সর্বশেষ অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্র, তরুণ, যুবক এবং পেশাজীবীদের সেভাবে নামানো সম্ভব হয়নি। সে জন্য চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে কিছুটা সময় নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুবসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি।

আরও পড়ুন <<>> বিবেকের চাপ অনুভব করছি, বিদেশি নয়: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাজপথে বিএনপি শক্তি দেখানোর চেষ্টা করলে তাদের কঠোরভাবে জবাব দেয়া হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেমন মাঠে থাকবেন, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর ভূমিকায় থাকবে।

ক্ষমতাসীনদের কঠোর অবস্থান নেয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় ‘সতর্ক পাহারার’ নামে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তারা ছিলেন মারমুখী। পুলিশও ছিল কঠোর ভূমিকায়।

এ রকম পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষ থেকেই কোনো আলোচনা বা সমাধানের কোনো উদ্যোগ কার্যত দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একে অপরকে রাজপথেই হারাতে চাইছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা এবং কৌশলের অংশ হিসেবেই জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। তিনি জানান, এরকম সমাবেশের জন্য দলের ভেতর থেকেই নেতা-কর্মীর চাপ আছে। আমরা এখানে ইলেকশনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। শান্তি সমাবেশ বা শোভাযাত্রা এগুলোর ভেতর দিয়েই রাজনৈতিকভাবে দল এবং সরকারের কর্মকাণ্ড আমরা তুলে ধরছি। এটি নির্বাচনের কৌশল। এটি কারো বিরুদ্ধে না, কাউকে ঠেকানোর জন্যও না।

আরও পড়ুন <<>> তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো: পিটার হাস

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুখ খান বলেন, বিএনপি আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তারা সুযোগ পেলেই আগুন-সন্ত্রাসে যুক্ত হয়। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি কীভাবে এগোয়, সেটি নজরে রেখেই আমরা কৌশল নিচ্ছি।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আমরা আবার অল্প সময়ের মধ্যে মাঠে আসব। আমাদের দাবি একটাই, এই সরকারের পদত্যাগ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের সঙ্গে কথা বলছি। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যেতে একটু সময় লাগছে। এখন জনসম্পৃক্ততা বাড়ায় এমন কর্মসূচি দেব।’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তারা দুই দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে চেয়েছিলেন। ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ ও ঢাকার প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে তারা উভয় দল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়