Apan Desh | আপন দেশ

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে, তবুও বাজারে ইলিশের দাম লাগামছাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫২, ৭ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ১২:৫৩, ৭ নভেম্বর ২০২২

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে, তবুও বাজারে ইলিশের দাম লাগামছাড়া

ছবি-সংগৃহীত

নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। তবে তিন হাত ঘুরে এই ইলিশ যায় ক্রেতার হাতে। প্রথমে জেলে মাছ দেন আড়তদারদের কাছে। সেখান থেকে কিনে নেন পাইকার। এরপর মাছ যায় খুচরা বিক্রেতার কাছে। তারপর যায় ক্রেতার হাতে। যার ফলে খুচরা পর্যায়ে লাগামছাড়া হচ্ছে ইলিশের দাম।

আড়তদার ও খুচরা বাজার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশেই ইলিশের দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি ইলিশ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর ৫০০ থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে হাজার টাকায়। এছাড়াও ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আড়তদার ও পাইকারি পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে ৪-৫ গুণ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ আড়ত থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বের হয়ে খুচরায় কয়েকবার হাতবদল হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবহন খরচ। ফলে ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে ইলিশের দাম হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মেঘনা নদী সংলগ্ন হাতিয়ার হরনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানঘাটে। সেখানে আড়তদাররা ডাকের মাধ্যমে পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা আবার চাদঁপুরসহ বিভিন্ন জেলার পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

ফলে ৫০০ গ্রাম ওজনের যে ইলিশ চেয়ারম্যানঘাটে বিক্রি হয় প্রতি পিস ৬৮-৮০ টাকায়, সেই মাছ খুচরা বাজার থেকে ক্রেতা কেনেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। শতাধিক আড়তদারের মাধ্যমে এই ঘাটে মাসে কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে মেসার্স মেঘনা বহন মুন স্টার মৎস্য আড়তের মালিক ফয়সাল বলেন, ‘সাগর থেকে ট্রলারে মাছ আনার পর জেলেদের কাছ থেকে আমরা মাছ কিনি। পরে আমরা সেগুলো ডাকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পন হিসেবে বিক্রি করি বিক্রি করি। ৮০ পিস মাছে এক পন ধরা হয়। তবে আকার ছোট হলে ৮৮ পিসে এক পন ধরা হয়। মাছ ছোট হলে একটু বেশি দিতে হয়, ব্যাপারীদের একটু পুষিয়ে দিতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘ছোট আকারের প্রতি পন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। এই হিসাবে প্রতি পিসের দাম পড়ে ৬৮ টাকার মতো। পাইকাররা এটা ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে ইলিশের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে খুচরা পর্যায়ে। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেনা দাম থেকে কয়েকগুণ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করছেন।’

বাজারে ইলিশের বাড়তি দাম প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেশি দামে মাছ বিক্রি করে সুবিধা নিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মাঝারি আকারের ইলিশ পাইকারদের কাছ থেকে কেনার পর খুচরা ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। কিন্তু তারা সেগুলো বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায়। বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকলেও কম আছে এমন কথা বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুবিধা নেন। এছাড়া অনেক সময় তারা গুদামজাত করেও ইলিশের দাম বাড়ান।’

হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসাইন বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী মাছের দাম ওঠানামা করে। মাছ বিক্রি করে পাইকার ও আড়তদাররা খুব বেশি লাভ করেন না। কিন্তু অন্যান্য খরচ যেভাবে বেড়েছে তাতে ইলিশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে।’

চেয়ারম্যানঘাট থেকে কিছু দূরে মাইজদী, সুবর্ণচর, চরভাটাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, মেঘনার ইলিশ সরাসরি তারা খুব একটা পান না। চাদঁপুর ঘাট হয়ে তাদের কাছে ইলিশ আসে। চলতি বছর ইলিশ ধরার মৌসুম শুরুর পরেই আগস্ট মাসে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম কার্যকর হয়। ফলে মাছ ধরার ট্রলারের খরচ ছাড়াও বেড়েছে ইলিশ মাছের পরিবহন খরচ। এছাড়া কয়েক হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে ইলিশের দামে।

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ইলিশ শিকারে যাওয়া শুরু করেন জেলেরা। জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই ভালো মাছ পাচ্ছেন তারা।

মনির উদ্দিন নামের এক জেলে বলেন, ‘ইলিশ বিক্রি করে আবার দ্রুত সাগরে ফিরে যাচ্ছেন তারা। এখনও বড় আকারের ইলিশ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি আগামীতে জালে বড় ইলিশ উঠবে।’

চেয়ারম্যানঘাটের মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, ‘বড় মাছ কম আসছে। একটা জেলে যদি ৪০-৫০ হাজার টাকার মাছ আনেন তার মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বড় মাছ আসে। বাকিগুলো ছোট। মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। ডিম ছাড়ার পর মা ইলিশ নদীতে থাকে না, সাগরে চলে যায়। ফলে নদীতে বড় মা ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ছোট, এতে লাভ কম।’

তিনি বলেন, ‘বড় ইলিশ বেশি পাওয়া যায় নিষেধাজ্ঞার আগে। ইলিশের প্রজনন বাড়াতে প্রতি বছর ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এ সময় ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযান চালায় প্রশাসন। তবে অভিযানের আগেই বড় ইলিশ বেশি ধরা পড়ে।’

হাতিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসাইন বলেন, ‘কেউ কেউ ভালো মাছ পায়, কেউ আবার কম পায়। মেঘনা নদীতে পোয়া মাছ বেশি, ইলিশ তেমন নেই। মেঘনায় এখন বেশি পাওয়া যাচ্ছে পোয়া ও পাঙাশ। তবে গভীর সমুদ্রে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ছোটবড় সব আকারের ইলিশই পাওয়া যাচ্ছে।’

আপন দেশ ডটকম/এমএবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়