Apan Desh | আপন দেশ

রেল আরও আধুনিক ও সমৃদ্ধ হচ্ছে

রায়হান উল্লাহ

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৩ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১০:৩৫, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

রেল আরও আধুনিক ও সমৃদ্ধ হচ্ছে

ছবি : সংগৃহীত

ক্রমশ বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অনেকটা বুঝি হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা। এভাবেই আবারো একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী রেলওয়ে পাব আমরা। বলা চলে, অনেকদিন ধরেই রেলওয়েকে আরও আধুনিক এবং সমৃদ্ধ করতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার।

এসবের অংশ হিসেবে আগামী এক বছরে রেলওয়ের বহরে যুক্ত হবে ৭০০-৮০০ কোচ ও লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। বুধবার (৩ এপ্রিল) রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম এ কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া রেলওয়ের জন্য ২০০ বগি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এদিন এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অনেকটা বদলে গেছে রেলওয়ে। বিগত ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। রেলের আওতায় এসেছে নতুন নতুন অঞ্চল। তাদের মতে, সরকারের নানা উদ্যোগে চলমান ঈদযাত্রাও নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন হচ্ছে। ঈদ যাত্রার চূড়ান্ত সমাপ্তি ও ফিরতি যাত্রা শেষে বুঝা যাবে আসলেই রেল বদলে গেছে কিংবা যাচ্ছে। 

এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগাম টিকিটে ঈদযাত্রার প্রথম দিন বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করে রেলপথ মন্ত্রী বলেন, রেলের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোচ আমদানি করা হচ্ছে। লোকোমোটিভ আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ২০০ বগি আমদানির অনুমোদন পেয়েছি। আশা করি এক বছরের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ কোচ এবং ইঞ্জিন আমদানি করে ট্রেনে যাত্রী ও মাল পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে পারবো।

ঈদযাত্রা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এবার যাত্রীরা যেন ঈদে নিরাপদে বাড়িতে যেতে পারে, সেজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আমরা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি। যারা আসন পাবেন না তারা যেন অন্তত দাঁড়িয়ে যেতে পারেন, সেজন্য আলাদা টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদে যত লোক বাড়িতে যাবে, তাদের সবাইকে তো আমাদের পক্ষে পাঠানো সম্ভব নয়। ঈদ ঘিরে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে এবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 

রেলে দুর্নীতির খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে জিল্লুল হাকিম বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না সেই সংস্থার মধ্যে দুর্নীতি থাকুক। কেনাকাটায় সব জায়গাতেই কিছু না কিছু...; অনেক বড় বড় জায়গায়ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে রেল অনেক ছোট জায়গা। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যেন আমাদের রেলে কোনো ধরনের এরকম কিছু না থাকে। আমরা চেষ্টা করব সব রকম দুর্নীতি বন্ধ করতে।

অন্যদিকে সরকার এক হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের জন্য ২০০ বগি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। সভা শেষে সভার সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান।

আরও পড়ুন <> ক্র্যাফটসম্যান ফুটওয়্যার নিয়ে প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীরা তৎপর

সচিব বলেন, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০ ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৬২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ১৯৫ টাকা। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিআইটিইএস লিমিটেড ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজগুলো সরবরাহ করবে।

এমন উদ্যোগে যাত্রীসেবা ও মালামাল পরিবহনে চিরায়ত স্বাচ্ছন্দের বাহন রেলকে মানুষ আরও বেশি প্রয়োজনে বেছে নেবে। স্মরণ করা যেতে পারে, গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, গত ১৫ বছরে দেশে ৯৪৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। রেলপথ বিভাগ থেকে মোট ৯৯টি নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প এবং তিনটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প অর্থাৎ মোট ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। 

এ ছাড়া, রূপকল্প ২০৪১ অর্জনসহ ৩০ বছর মেয়াদি রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী রেলওয়ে ডাবল লাইন ট্র্যাক নির্মাণ, গেজ একীভূত করা, আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম প্রবর্তন, সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন, আপগ্রেডেড লোকোমোটিভ প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এসবের মাঝে জানা যায়, ঈদযাত্রায় নিয়মিত ট্রেনের সঙ্গে প্রয়োজন হবে বাড়তি দুই শতাধিক কোচ। বাড়তি বগির জোগান দিতে নির্ধারিত সময়ের বাইরেও অতিরিক্ত সময় কাজ করে নষ্ট ও চলাচল অযোগ্য কোচগুলোকে সচল করে তুলেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা।

ইতোমধ্যে প্রস্তুত হওয়া ৮০টি ব্রডগেজ ও ৩০টি মিটারগেজ কোচ চলে গেছে পাকশী এবং লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের কাছে। এর মধ্যে আসনবিহীন যাত্রীদের জন্য দুটি কোচ বিশেষভাবে তৈরি করে ঈদের রেল বহরে সংযুক্ত করেছে কারখানাটি। 

নীলফামারীর সৈয়দপুর দেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই শহর অনেক আগে থেকে প্রসিদ্ধ হলেও অনেকের কাছে রেলের শহর হিসেবে বেশি পরিচিত। ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির উপর নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেল কারখানার ২৬টি উপ-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠার পর এখানে নতুন কোচ তৈরি হতো।

কিন্তু ১৯৯৩ সালে রেল সংকোচন নীতির আওতায় কোচ নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন রেলের ছোট বড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়। কারখানাটিতে স্বাভাবিক সময় প্রতিমাসে গড়ে ৩০টি কোচ মেরামত করা হয়। কিন্তু সারাদেশে ঈদের আগে ও পরের পাঁচদিন বিশেষ ট্রেন চলাচল এবং নিয়মিত ট্রেনেও অতিরিক্ত কোচ লাগানোর কারণে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এবার ৫১ কর্মদিবসের মধ্যে ১১০টি যাত্রী কোচ মেরামতের সিদ্ধান্ত হয়। ঈদযাত্রায় ১৬টি বিশেষ ট্রেনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২২ হাজার অতিরিক্ত মানুষ যাত্রা করতে পারবে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়