Apan Desh | আপন দেশ

জাতিসংঘে বাংলায় বাধা নেই শর্ত আছে

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২২:২৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জাতিসংঘে বাংলায় বাধা নেই শর্ত আছে

ফাইল ছবি

জাতিসংঘে এখন পর্যন্ত ৬টি ভাষাকে নিজেদের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুরুতে ৫টি ভাষা থাকলেও পরে আরবিকেও সেখানে যোগ করা হয়। বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা হবে সপ্তম ভাষা। তাতে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বাধা নেই, তবে শর্ত হলো দাফতরিক করতে সদস্য দেশগুলোর যে খরচ হবে, তা বহন করতে হবে প্রস্তাবকারী দেশকেই। এ বাবদ প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে জাতিসংঘ। 

জাতিসংঘের সপ্তম দাফতরিক ভাষা হওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত শক্ত প্রতিযোগী রয়েছে। হিন্দি, তামিল এবং উর্দু ভাষাও জাতিসংঘের দাফতরিক মর্যাদা চায়। কিন্তু ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে সেগুলো বাংলার পেছনে। উইকিপিডিয়ার হিসাবে আমাদের আগে যে পাঁচটি ভাষা আছে, তার মধ্যে হিন্দিই কেবল জাতিসংঘের অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ নয়। দুই ভাষার পার্থক্য অবশ্য খুব বেশি নয়। কোনো কোনো হিসাবে বাংলাই বরং এগিয়ে আছে। ফোটিয়াস ডটকম নামে একটি তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ভাষা হিসেবে ব্যবহারকারী জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলা এখন বিশ্বের পঞ্চম ভাষা।

জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে।  ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে  ১৩৬ তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে। ওই  বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবর রহমান বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন।

সেই থেকেই বাংলাকে জাতিসংঘ সদর ফতরে দাফতরিক ভাষা হিসাবে  ব্যবহারের দাবি জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক  মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতি মিলেছে।

প্রতি বছরের মতো আজও মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একই দাবি। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দফতরে অন্তর্ভুক্ত করার। সরকারের সেতু ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি জানিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘের কাছে দাবি জানাব বাংলা ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার জন্য। বাংলাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ভাষার মর্যাদা দিতে হবে। 

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ইউস্কোতে দাবি উঠার পর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের স্বীকৃতি মেলে। এরপর চেষ্টা চালানো হয় কিন্তু জাতিসংঘের দাফতরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজটি টাকার জন্য আটকে আছে। এ জন্য বাংলাদেশের কাছে বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে জাতিসংঘ। বিপুল পরিমাণ এ অর্থের জোগান দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব বলে আপাতত ওই কার্যক্রমে সাড়া দিতে পারছে না বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক শক্ত তৎপরতা চালানো হয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানা গেছে। কিন্তু বাদ সেধেছে এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রস্তাবনা। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, বাংলা ভাষার বিষয়টি আমাদের আবেগের। এ ভাষাকে দাফতরিক ভাষা করতে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই। মূল সমস্যাটা অর্থায়ন নিয়ে। এত টাকা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আশা করছি, কোনো একদিন আমরা ধনী দেশ হতে পারলে, নিশ্চয় বাংলা হবে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা।

আজ সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি ) এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করতে হলে আর্থিক বাধা আছে। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করতে হলে বছরে ৮০০ কোটি টাকা খরচ হবে। বিবেচনা করতে হবে এত টাকা খরচ করা যুক্তিসঙ্গত হবে কি না। তবে এই সক্ষমতা একদিন বাংলাদেশেরও তৈরি হবে। তবে এই মুহূর্তে এটার পক্ষে বেশি মতামত আসবে না। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন। এখন বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা সকলের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এমনকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষার প্রতিও আমরা সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল।

আপন দেশ/ এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়