Apan Desh | আপন দেশ

জ্যোতির ঘাতক স্বামী নিক্কি আগরওয়ালা গ্রেফতার

সৈয়দপুর, নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৩:২৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

জ্যোতির ঘাতক স্বামী নিক্কি আগরওয়ালা গ্রেফতার

গ্রেফতারকৃত নিক্কি ইনসেটে জ্যোতি

সৈয়দপুরে গৃহবধূ জ্যোতি আগারওয়ালা আত্মহত্যার ঘটনায় স্বামী স্বামী সুমিত কুমার আগরওয়ালা নিক্কিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে একটি মামলা হয়েছে। মামলার অপর আসামিরা পলাতক রয়েছে। 

মামলায় আসামি করা হয়েছে মৃতের স্বামী সুমিত কুমার আগরওয়ালা নিক্কি (৪৬), শ্বাশুড়ি উমা দেবি (৬৩), দেবর অমিত কুমার আগরওয়ালা ওরফে রিক্কি (৪২) ও তার স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমার আগরওয়ালা (৩৫)। এ ঘটনায় গত রোববার রাতে গৃহবধূর স্বামী সুমিত কুমার আগরওয়ালা নিক্কিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মৃত জ্যোতি আগরওয়ালা ওরফে (ববি)'র বড় ভাই বিমল কুমার জাজোদিয়া বাদি হয়ে সৈয়দপুর থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় রোববার বিকালে রংপুর মেট্রোপলিটন থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়া স্বামী সুমিত কুমার আগরওয়ালাকে সৈয়দপুর থানায় আনা হয়। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে নীলফামারী আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সুমিতকে আটকের পর সৈয়দপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত)  মফিজুল হকের নেতৃত্বে এসআই সাহিদুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স রংপুরে যান। সেখানে আইনী প্রক্রিয়া শেষে সুমিতকে সৈয়দপুর থানায় আনা হয়। অপরদিকে মৃত জ্যোতির মরদেহও সৈয়দপুরে আনা হয়।

আরও পড়ুন<<>> সুইসাইড নোটে গৃহবধূ জ্যোতির লেখা, ‘আমার হত্যার চিবার চাই’

মামলার বাদি মৃতের বড় ভাই বিমল কুমার জাজোদিয়া জানান, তার বোনের সুইসাইড নোটে লেখা অভিযুক্ত চারজনকেই আসামি করা হয়েছে। তিনি তার বোনের আত্মহত্যার প্ররোচনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মামলায় অপর পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়া দুই সন্তানের জননী গৃহবধু জ্যোতি আগরওয়ালা ওরফে ববি তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রবিবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। পরে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানা পুলিশ ওইদিনই লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ মৃতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এদিকে এ ঘটনায় বিকেলে মৃতের স্বামী অভিযুক্ত সুমিত কুমার আগরওয়ালাকে আটক করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক ইন্দ্র মোহন রায় বলেন, গ্রেফতার হওয়া মামলার প্রধান আসামি সুমিত কুমার আগরওয়ালাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মৃতের মোবাইল ফোন, তার হাতে লেখা একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে জ্যোতির আত্মহত্যার বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে নানারকম তথ্য মিলেছে। ওইসব তথ্যের বিষয়ে মৃতের ঘনিষ্ঠজন ও এলাকাবাসির কথায় মিল পাওয়া গেছে।

সূত্রটি জানায়, সুমিত ও জ্যোতি দম্পতির দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় পুত্রের নাম রাঘব আগরওয়ালা (১৯) ও ছোট পুত্র ইয়াস আগরওয়ালা ওরফে ফান্টুস (১১)। স্বামীর পরকিয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সবসময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। এনিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার বৈঠকে বসে বিষয়টির সমাধানও করে দেন। কিন্তু তারপরও বদলায়নি স্বামীর পুরোনো অভ্যাস। ফলে এনিয়ে প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এ নির্যাতনে যোগ দিত শ্বাশুড়ি উমা দেবী, দেবর অমিত ও তার স্ত্রী অমৃতা কুমারী। ফলে এসব সইতে না পেরে কয়েকদিন আগে তার উপরে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দুই পৃষ্ঠার চিঠি লিখে তা ছবি তুলে সৈয়দপুর হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় জ্যোতি।

এনিয়ে কেউ বিষয়ে সুরাহা করতে না পারায় গত  ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে  শহরের শহীদ ডা. বদিউজ্জামান রোডের ভাড়া বাসায় মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এলাকার সুত্র জানায়, ঘটনাটি জ্যোতির ছোট পুত্র ফান্টুস টের পোয়ে বাড়ির সকলের কাছে জানিয়ে তার মায়ের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে আকুতি জানালেও স্বামী নিক্কি আগরওয়ালাসহ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা দেয় নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালার স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল।

পরে  অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার বিকেলে জ্যোতিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে গত তিনদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা অবস্থায় রবিবার সকালে মারা যান তিনি। সুত্রগুলোর অভিযোগ বৃহস্পতিবার গভীররাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১৩/১৪ ঘন্টা পর্যন্ত হাসপাতালে না নিয়ে কেন বাসায় রাখা হয়েছিল জ্যোতিকে। এমনকি ঘটনা শুনে প্রতিবেশিরা শুক্রবার সকালে তার বাসায় গেলে তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। ফলে তাদের এমন আচরণে যথেস্ট সন্দেহের সৃস্টি হয়েছে সর্বমহলে।

উল্লেখ্য ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের মেয়ে জ্যোতি আগারওয়ালের বিয়ে হয় সৈয়দপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত সুশীল কুমার আগরওয়ালার ছেলে সৈয়দপুর উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুমিত কুমার আগরওয়ালা ওরফে নিক্কির। 

 

আপন দেশ ডটকম/ আবা
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়