Apan Desh | আপন দেশ

দেশে ডেঙ্গু টিকা ‘টিভি-০০৫’র সফল পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশে ডেঙ্গু টিকা ‘টিভি-০০৫’র সফল পরীক্ষা

ডেঙ্গুর টিকা

ঢাকা: দেশে যখন প্রতিদিনই মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা, ঠিক সেসময়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী টিকা আবিষ্কারের কথা জানা গেছে। এ নিয়ে নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আইসিডিডিআর,বি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই টিকার নাম দেয়া হয়েছে ‘টিভি-০০৫’ যা ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী।

বিজ্ঞপ্তিতেেআরও জানানো হয়, গবেষণায় ব্যবহৃত এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায়, এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে’ প্রকাশিত হয়েছে।

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মৃদু লক্ষণে জ্বর ও হাড়ের ব্যথা হয় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে শক, রক্তপাত ও অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে। সাধারণত ডেঙ্গুর চারটি ধরন (ডেন ১, ২, ৩, ৪) বা সেরোটাইপ এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে সক্রিয় থাকতে পারে। ডেঙ্গুর যেকোনো ধরন একজন মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। তবে অন্য কোনো ধরনে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি, এখানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত বেশ গুরুতর এবং ঢাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এটি ভয়ানক প্রভাব ফেলছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অনেক দেশে আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে তরল খাদ্য গ্রহণ এবং উপসর্গ নিয়ন্ত্রণই ডেঙ্গুর একমাত্র প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাই বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী টিকা উন্নয়ন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

গবেষকরা জানান, ২০১৫ সালে ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ (ডিডি) নামক গবেষণাটি শুরু করেন আইসিডিডিআর,বি এবং ইউভিএমের ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টারের গবেষকরা। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ২০১৫ থেকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল, ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ অবকাঠামো এবং প্রারম্ভিকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য আইসিডিডিআর,বিতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়।

দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেসে প্রকাশিত এই গবেষণাটি একটি দৈবচয়ন ভিত্তিক কাজ এবং ফেজ-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এর মাধ্যমে টিভি-০০৫ টেট্রাভ্যালেন্ট লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড ডেঙ্গু টিকার নিরাপত্তা, ইমিউনোজেনিসিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতা এবং তিন বছর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়িত্বের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে। গবেষকরা ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন বয়সের (বয়স ১- ৪৯ বছর) ১৯২ জন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীকে চারটি ভাগে ভাগ করে ৩ঃ১ টিভি-০০৫ টিকা বা প্লাসিবো দিয়েছেন। এরপর তারা পরের তিন বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, টিকা দেয়ার পর বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে চারটি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও গবেষণাটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করা যায়নি। গবেষণালব্ধ এই ফলগুলো ডেঙ্গুপ্রবণ জনগোষ্ঠীতে ব্যাপকহারে টিভি-০০৫ ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি, তৃতীয় ধাপের কার্যকারিতা ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সমর্থন জোগাড় করতে সহায়তা করবে।

এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির গবেষক ড. রাশিদুল হক বলেন, একটি কার্যকর এবং টেট্রাভালেন্ট ডেঙ্গু টিকা বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণে টিভি-০০৫ টিকার গবেষণা করতে পেরে আমরা গর্বিত। আশা করি আমাদের কাজ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর টিকা প্রাপ্তির বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করবে।

আাপন দেশ/এমএমজেড

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ