Apan Desh | আপন দেশ

সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান, রাজশাহীতে লিটন মেয়র পদে জয়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২১ জুন ২০২৩

আপডেট: ২৩:২০, ২১ জুন ২০২৩

সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান, রাজশাহীতে লিটন মেয়র পদে জয়ী

ফাইল ছবি

শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের পর সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই মেয়র জয়ী হয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। 

অপরদিকে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনই টানা দ্বিতীয়বারের মতো নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন।

বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। 

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রত্যাশিত বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকার দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ৬৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে পরাজিত করেছেন। নৌকার আনোয়ার পেয়েছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৬১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার বাবুল লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩২১ ভোট। 

সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস অডিটোরিয়ামে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির। 

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন ও কাউন্সিলর পদে ৩৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যাদের মধ্যে ২৭২ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে মোট ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সিলেট নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন, নারী দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ছয় জন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৪৬ শতাংশ। তবে অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর আনন্দ নিকেতন স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর এই অভিযোগ করেন তিনি। 

সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এখানে মেয়র পদে আট জন এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৩৬০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ এক হাজার ৩৬৪টি। এর মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১৯৭০ সালের ১ জুন সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম তিলাপাড়া গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নৌশা মিয়া চৌধুরী এবং মায়ের নাম মোছা. গহিনুন্নেছা চৌধুরী। কৈশোরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে এবং তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তিনি বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

প্রবাসে গেলেও দেশ ও মানুষের প্রতি তার টান এতটুকুও কমেনি। প্রবাসে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি প্রথমে লন্ডন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে  কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। যুবলীগের রাজনীতি থেকে তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং বিভিন্ন সময় অন্তবর্তীকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সিলেট সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। 

১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে সিলেট পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার টানা ১২৪ বছর পরে ২০০২ সালের ২৮ জুলাই প্রতিষ্ঠা হয় সিলেট সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিসিকের চতুর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

অপরদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে পাওয়া সব কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৫৯  হাজার ৭৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ১৩ হাজার ৩৯৩ ভোট।   

রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। 

বিএনপিহীন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট চারজন প্রার্থী ছিলেন। তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা) আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাকি তিনজন হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টি মনোনীত লতিফ আনোয়ার (গোলাপফুল)।

রাজশাহী সিটিতে সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডে ১১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবার রাজশাহী সিটিতে মোট ভোটার তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এরমধ্যে নতুন ভোটার ৩০ হাজার ১৫৭ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ছয় জন।

আজকালের খবর/আরইউ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়