Apan Desh | আপন দেশ

প্রাইভেট খাত কেন তথ্য অধিকারের বাইরে

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২ নভেম্বর ২০২২

প্রাইভেট খাত কেন তথ্য অধিকারের বাইরে

ফাইল ছবি

দেশের প্রাইভেট খাত পুরোপুরি তথ্য অধিকার আইনের আওতার বাইরে। এতে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা যাচ্ছে না তাদের। আইন বলছে, তারা তথ্য দিতে বাধ্য না। যে কারণে জন-সম্পৃক্ত বিষয়ে তথ্য চেয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদকর্মীসহ নাগরিকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

প্রাইভেট খাত কেন তথ্য অধিকারের বাইরে?
অথচ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য জানার অধিকার আছে দেশের প্রতিটি নাগরিকের। যদিও জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়গুলো এর বাইরে থাকছে।

জতিসংঘ বলছে, চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে তথ্যের স্বাধীনতা। ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের প্রস্তাবেও সেই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার ১৯ নম্বর ধারায়ও তথ্যের স্বাধীনতার স্বীকৃতি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের মতামত পোষণ ও প্রকাশের অধিকার রয়েছে। অবাধে মত পোষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যে কোনো মাধ্যমের মারফতে ভাব ও তথ্য জ্ঞাপন, গ্রহণ ও সন্ধানের স্বাধীনতা এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার দেয়া হয়েছে। যদিও তথ্য অধিকার নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।
 
দেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে ২০০৯ সালে। এক যুগেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু মানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তথ্যের অবাধ প্রবাহ অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, প্রাইভেট খাত তথ্য অধিকারের মধ্যে পড়ে না। প্রাইভেট খাতের তথ্য দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুধু সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে তথ্য দেয়ার সুযোগ আছে আমাদের আইনে। বেসরকারি বলতে এনজিও ছাড়া আর কারও তথ্য পাওয়ার অধিকার নেই।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো প্রাইভেট প্রপার্টি অ্যাক্টের মাধ্যমে চলে। তারা তো তথ্য দেবে না। তবে হ্যাঁ, যেসব প্রতিষ্ঠানে জনগণের টাকা-পয়সা লেনদেন হয়, যেমন- প্রাইভেট স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট হাসপাতাল।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষকে সেবা কিনতে হয়। জনগণের টাকা-পয়সার লেনদেন হয়। এগুলোকে তথ্য অধিকারের আওতায় আনা যায় কিনা; এ ধরনের একটি প্রস্তাব আমি একবার করেছিলাম।

এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে জনগণ সেবা নেন অর্থের বিনিময়ে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার। কিন্তু বর্তমানে তারা জবাবদিহিতার মধ্যে নেই। এতে প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছামতো বেতন নিচ্ছে। তারা যা খুশি তা-ই করছে। অথচ তারা আইনের আওতার বাইরে। লাইসেন্স বা অনুমতি নিয়ে তারা ব্যবসা করছে, অন্য প্রাইভেট কোম্পানির মতোই। আইন অনুসারে তারা আমাদের কোনো তথ্য দিতে বাধ্য না।

তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা যায় কিনা; তা নিয়ে আমার একসময়ে ভাবনা ছিল। কারণ তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসলে মানুষ আরও ভালো সেবা পেতেন। এখন যেটা পাচ্ছেন না।

মাথাব্যথা নেই তথ্য কমিশনের
ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য অধিকার আইনের বাইরে থাকলেও এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তথ্য কমিশনের। এ নিয়ে জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ। এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন যেন তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া একজন প্রতিবেদকের জন্য অসমীচীন।

তিনি শুধু বলেন, যেখানে পাবলিক মানি (জনগণের অর্থ) খরচ হয়, সেটা সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি, সেটা তথ্য অধিকার আইনের আওতায়। যেখানে পাবলিক মানি খরচ হয় না, সেটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। তা তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আসবে না।

এটুকু বলেই অযাচিতভাবে ফোনকল কেটে দেন তিনি। আইনের ত্রুটি ও অপব্যবহারের কারণে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে যথাযথ তথ্য যাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বেশি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছেন সংবাদর্মীরা। তারা বলছেন, মন্থর গতি ও সময়-ক্ষেপণ প্রক্রিয়ার কারণে এ আইন তাদের খুব একটা কাজেও আসছে না।

যে কারণে অনেকেই আইনটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তথ্য অধিকার আইন আরও ফলপ্রসূ ও কার্যকর করতে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সরবরাহের সুযোগ আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য অধিকার আইনে যা আছে
তথ্য আইন অনুসারে, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সব নাগরিকই তথ্য পাওয়ার অধিকার রাখেন। কোনো নাগরিক যদি অনুরোধ করেন, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন।

আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫ (১) ধারায় বলা আছে, তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে যাবতীয় তথ্যের ক্যাটালগ ও ইনডেক্স প্রস্তুত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ রাখতে হবে।

পাঁচের দুই উপধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কর্তৃপক্ষ যেসব তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণের উপযুক্ত বলে মনে করবে, সেসব তথ্য, যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করবে। তথ্য পেতে সুবিধার জন্য সব দেশে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এটির সংযোগ স্থাপন করবে।

আইনের তৃতীয় অধ্যায়ে আছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথা। এত তথ্য সরবরাহে কর্তৃপক্ষের প্রতিটি ইউনিটের জন্য একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার কথা বলা আছে।

তথ্য অধিকারকে বাস্তবিক রূপ দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার দ্রুতই। এছাড়া যৌক্তিক কারণ ছাড়া তথ্য চেয়ে নাগরিকের অধিকার প্রত্যাখ্যান কিংবা অস্বীকার করাও উচিত না।

বহু দেশে তথ্য অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত করতে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ষোলোতে তথ্য অধিকারের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের শতাধিক দেশ বিভিন্ন সংস্করণে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন করেছে।

আপন দেশ ডটকম/ এমএবি

 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়