Apan Desh | আপন দেশ

হারিয়ে গেছে যে সাগর

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৮ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১২:৪১, ২৮ মার্চ ২০২৪

হারিয়ে গেছে যে সাগর

ছবি: সংগৃহীত

আরাল সাগর। নামের সঙ্গে সাগর শব্দটি থাকলেও এটি মূলত হ্রদ ছিল। তবে বিশালতার কারণে আরবদের কাছে এ হ্রদটি পরিচিত ছিল সাগর হিসেবে। ভূগোলের পরিভাষায় আরাল এখনও সাগর। তবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সাগর। এখন আরাল সাগর ছোট জলাশয়ে রূপ নিয়েছে।

১৯৬০ সালের দিকে আরাল সাগর পৃথিবীর বুকে চতুর্থ বৃহত্তম হ্রদ ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এর বয়স প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন বছর। এ সাগরের জলরাশি কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ায় বিস্তৃত ছিল। উত্তর থেকে সির দরিয়া, দক্ষিণ থেকে আমু দরিয়া নদীর পানি এসে মিলিত হতো আরালের বুকে।

১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৬৭ হাজার বর্গ কিমি আয়তনের হ্রদটির প্রায় ৭০ শতাংশ শুকিয়ে গেছে। আর এ হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আরাল সাগরের শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্তমান পৃথিবীর জন্য এক অশনিবার্তা।

আরাল সাগর। ছবি: এমডিপিআই

এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলা চাষকে। সোভিয়েত তখন আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রেমলিন বনাম হোয়াইট হাউসের হিমশীতল লড়াই চলছে। বিশ্ববাজারে তুলা উৎপাদনের শিরোপা ধরে রাখতে মরিয়া সোভিয়েত। এ কারণে তুলা চাষের ওপর বড়সড়ো নজর দেয়। 

বর্তমান কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান সে সময়ে সোভিয়েতের অধীন ছিল। সোভিয়েত সরকারের আদেশেই শুরু হয় তুলার চাষ। সোভিয়েত সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, আমু এবং সির দরিয়ার পানি তুলাক্ষেতে সেচের জন্য ব্যবহার করা হবে।

১৯৫৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কারাকুম খাল খনন করে। যার দৈর্ঘ ছিল ১৩৭৫ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম সেচ খাল। এ খাল দিয়েই আমু ও সির দরিয়ার পানি কারাকুম মরুভূমির ভেতর দিয়ে তুলাক্ষেতে প্রবাহিত করা হতো। এ দীর্ঘ পথে ৩০ শতাংশ পানি অপচয় হতো।

আরও পড়ুন>> এনামূল হকের শস্যচিত্র

আরালের মাছ ধরে অনেক অধিবাসী জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু, ১৯৬০-৭০’র দিকে বিশাল হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে যেতে থাকে। এরপর ১৯৮০ সালে আমু দরিয়া নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। ১৯৮৭ সালে হ্রদের পানি শুকিয়ে দুই ভাগ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে যায়।

পরবর্তীতে হ্রদের পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আবহাওয়ায় বড় রকমের পরিবর্তন ঘটে। ঝড়-তুফানের পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণে। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণাগারের রাসায়নিক বর্জ্য, বিষাক্ত কীটনাশক, শিল্পকারখানার বর্জ্য আরাল সাগরের পানিতে নিষ্কাশন করা হতো। পরবর্তী সময়ে আরালের অধিবাসীরা উপায় না দেখে অন্য প্রদেশে চলে যেতে থাকেন।

এছাড়াও আরও বিভিন্ন বাঁধ ও খাল খনন করা হয় সে সময়। যার মাধ্যমে নদির গতপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় হ্রদের পানিতে লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যার ফলে হ্রদের মাছ সব মরে যায়। সেই সঙ্গে কৃষি কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। আরাল সাগরের ধ্বংসের শুরুটা এখানেই।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়