Apan Desh | আপন দেশ

২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার

দুই বছরের মধ্যে বেশি রেমিট্যান্স এলো জুলাইয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১২:৪৮, ১ আগস্ট ২০২২

দুই বছরের মধ্যে বেশি রেমিট্যান্স এলো জুলাইয়ে

ফাইল ছবি

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার। একক মাস হিসেবে গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এল গত মাসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, এসময়ে আগের অর্থবছরের একই মাস জুলাইয়ের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে গত বছরের জুলাইয়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন এক দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের মাস জুনের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ওই মাসে এসেছিল এক দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

২০২০ সালের জুলাইতে সবচেয়ে বেশি দুই দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি রেমিট্যান্সে খারাপ সময় কাটবে বলে আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সরকার বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রবাসীদের বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দিয়ে আসছে। আগের চেয়ে বেশি দর পাওয়ায় প্রবাসীরা উৎসাহী হয়ে জুলাই মাসে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

ঈদের পর রেমিট্যান্স বাড়ার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।

তিনি বলেন, এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

চলতি জুলাইয়ের শুরুর দিক থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বাড়ছিল। প্রথম ২১ দিনেই জুনের পুরো মাসের আয় ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২১ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক গড়ে সাত কোটি ৮৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। মাস শেষে তা দাঁড়ায় দৈনিক গড়ে সাত কোটিতে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে যখন নানা হতাশার তথ্য সে সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন অব্যাহত থাকলে দেশ অনেকটাই চাপমুক্ত হবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে, ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরও অব্যাহত আছে। এটিও আরেক ইতিবাচক দিক।

এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং এই অর্থবছরে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ লোক কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা ইতোমধ্যে অর্থ পাঠাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই ইতিবাচক ধারা বছরজুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।

দেশে গত ১০ জুলাই ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ঢল নামে। ঈদে ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরে ১৮ দিনে আসে একশ পাঁচ কোটি ডলারের কিছু বেশি।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত রোববার প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো একশ চার-একশ পাঁচ টাকা দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করায় প্রবাসীরা হুন্ডিতে আগ্রহী হচ্ছেন না সেভাবে। এর কারণ এই দরের সঙ্গে নগদ প্রণোদনার দুই টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে একশ সাত টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারের ডলারের দরও একই।

রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি কারণের কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন। দেশে ডলারের সংকট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।

আপন দেশ ডটকম/আরইউ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়