Apan Desh | আপন দেশ

বলিউড নায়িকাদের এত ডিপফেক ভিডিও কেন?

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০২, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

বলিউড নায়িকাদের এত ডিপফেক ভিডিও কেন?

ছবি : আপন দেশ

একজন বলিউড স্টার ক্যামেরার সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছেন, আরেকজন স্বল্পবসনা হয়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন। কিন্তু আদতে এর কোনকিছুই ঘটেনি। এগুলো আসলে সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল হওয়া অনেকগুলো ডিপফেক ভিডিওর মধ্যে দুটো। তাদের মধ্যে রাশমিকা মান্দানা, প্রিয়াংকা চোপড়া, জোনাস ও আলিয়া ভাটের মতো তারাকারা রয়েছেন। যাদের চেহারা বা কণ্ঠ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছে।

এক্ষেত্রে ছবিগুলো সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো থেকে নেওয়া হয় এবং অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়। বলিউডে এত এই ডিপফেক উত্থানের কারণটা কী? 

ডিপফেক আসলে আগে থেকেই আছে এবং বহুদিন ধরে তারকাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এসেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ আরতি সামানি বলেন, এতদিন হলিউডের নাটালি পোর্টম্যান বা এমা ওয়াটসনের মতো হাই প্রোফাইল অভিনেত্রীরা এর শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি এআই‘র যে উন্নতি সাধন করেছে, সেটা মানুষের ভুয়া অডিও ও ভিডিও তৈরি করার কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন>> সিনেমাপ্রতি কত টাকা নেন ঐশ্বরিয়া

মিজ সামানি বলেন, ‘গত ছয় মাস বা এক বছরে এই টুলগুলো আরও নিখুঁত হয়ে উঠেছে, এ কারণেই আমরা এই কন্টেন্টগুলো এখন অন্যান্য দেশেও বেশি দেখতে পাচ্ছি। অনেক টুলই এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, ফলে খুব সামান্য খরচে অথবা খরচ ছাড়াই হুবহু বাস্তবধর্মী ছবি তৈরি করা যায় এবং এটা এখন সবার হাতে হাতে।’

তিনি বলেন, ভারতে একটা বড় অংশ তরুণ, সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার এবং ‘বলিউডের সাথে সখ্য ও মারাত্মক রকমের তারকা সংস্কৃতি’। ফলে ভিডিওগুলো খুব দ্রুত ছড়ায় এবং সমস্যাটাও বেশি করে ধরা পড়ে। এরকম ভিডিও বানানোর পেছনে মূলত দুটি জিনিস কাজ করে। বলিউড তারকাদের নিয়ে যেকোন কিছু খুবই আকর্ষণীয় ক্লিকবেইটে পরিণত হয়, ফলে বিজ্ঞাপন থেকে অনেক অর্থ আসে। একই সাথে যারা এই ভিডিওগুলো দেখছে তাদের অজান্তেই তথ্য বিক্রি করার একটা সুযোগ তৈরি হয়।

ফেক বা ভুয়া ছবি প্রায়শই পর্নোগ্রাফি ভিডিওতে ব্যবহার হয়। আর এই ফেক ভিডিওগুলো যেকোনো কিছু থেকেই তৈরি করা সম্ভব। সম্প্রতি, ২৭ বছর বয়সী অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার একটা ইন্সটাগ্রাম ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে কালো পোশাক পরা এক মহিলার শরীরে তার চেহারাটা বসিয়ে দেয়া হয়।

সামাজিক মাধ্যমে এটা ব্যাপক ভাইরাল হয়ে পড়ে। তবে ফ্যাক্ট চেকিং প্ল্যাটফর্ম অল্ট নিউজের এক সাংবাদিক রিপোর্ট করে যে এই ভিডিওটি আসলে ডিপফেক। রাশমিকা এই ঘটনাকে ‘খুবই ভয়ের’ বলে বর্ণনা করেন এবং মানুষকে এ ধরনের জিনিস শেয়ার না করার অনুরোধ জানান।

আরেক মেগাস্টার প্রিয়াংকা চোপড়ারও একটা ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তার চেহারা নয় বরং কণ্ঠ বদলে দেওয়া হয়। যেখানে তিনি একটা ব্র্যান্ডের প্রচার চালাচ্ছেন এবং কীভাবে বিনিয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছিলেন। একই রকম ডিপফেকের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী আলিয়া ভাটও। এক ভিডিওতে দেখা যায়, তার মতোই দেখতে একজন ক্যামেরার সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছেন।

অন্যান্য তারকা যেমন ক্যাটরিনা কাইফও এর লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। এক্ষেত্রে টাইগার থ্রি চলচ্চিত্র থেকে তার একটা ছবি, যেখানে তিনি টাওয়েল পেঁচিয়ে আছেন, সেটাকে আরেকটা পোশাকে বদলে দেওয়া হয়েছে যাতে তার শরীর আরও বেশি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। 

শুধু বলিউড তারকাই নয় অন্যরাও এর শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি ভারতীয় শিল্পপতি রতন টাটার একটা ডিপফেক ভিডিও বানানো হয়, যেখানে তিনি বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সাধারণত নারীদেরই বেশি করে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেনসিটি এআই বলছে, এসব ডিপফেকের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই হলো অনুমতি বিহীন পর্ন। আর এর বেশিরভাগ শিকার নারীরা।

আরও পড়ুন>> ‘যদি তেমন কিছু করতে যাই দল ভেঙে যাবে’

ভারতীয় প্রযুক্তি সেবা ও কনসাল্টিং কোম্পানি উইপ্রো’র গ্লোবাল চিফ প্রাইভেসি অফিসার ইভানা বার্তোলেতি বলেন, ‘এটা ভয়ংকর’। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য এটা বেশি সমস্যার কারণ এগুলো ব্যবহার করে পর্ন বা সহিংসতার ভিডিও বানানো হয়, আর আমরা জানি যে এসবের একটা বাজার আছে। এই সমস্যাটা সবসময়ই ছিল, কিন্তু এখন দুশ্চিন্তার বিষয় হলো এসব টুলের সহজলভ্যতা ও কাজের গতি।’

মিজ সামানিও একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘ডিপফেকের সংকটটা নারীদের জন্য ভয়ংকর মাত্রার। নারীদের মূল্যায়নই করা হয় তার সৌন্দর্য দেখে এবং নারী শরীর হয় লক্ষ্যবস্তু। ডিপফেক সেটাকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে। অনুমতি ছাড়া ডিপফেকের এমন ব্যবহার নারীদের মর্যাদা ও নিজের শরীরের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে তা অপরাধীদের হাতকে শক্তিশালী করছে।’

ডিপফেক ভিডিও যখন আরও ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সরকার ও টেক কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বাড়ছে এ ধরণের কন্টেন্ট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। ভারতীয় সরকার নির্বাচন সামনে রেখে ডিপফেকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। মান্দানার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ডিপফেকের বিরুদ্ধে কথা বলেন দেশটির প্রযুক্তি মন্ত্রী রাজিব চন্দ্রশেখর।

তিনি বলেন, এগুলো হলো মিথ্যা তথ্যের একেবারে সাম্প্রতিক এবং আরও ভয়ংকর ও ক্ষতিকর উদাহরণ। আর এর বিরুদ্ধে প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভারতীয় প্রযুক্তি আইনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাইটগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে কোন ব্যবহারকারীর দ্বারা কোন মিথ্যা তথ্য পোস্ট করা হচ্ছে না। যেসব প্ল্যাটফর্ম এটা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে আইন অনুযায়ী তাদের আদালতে নেওয়া যেতে পারে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ