Apan Desh | আপন দেশ

হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে নিহত বেড়ে ২৪০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৬, ১২ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১১:১৫, ১২ অক্টোবর ২০২৩

হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে নিহত বেড়ে ২৪০০

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি সশস্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাত আজ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। যুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছে। ভাগ হয়ে পড়েছে বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা তৈরির প্রবল শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গাজা। সেখানে মানবিক সংকট তৈরির শঙ্কা তীব্র হচ্ছে। 

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সবশেষ ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় আরও প্রায় পাঁচ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছেন। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান হতাহতের কারণে গাজাজুড়ে হাসপাতালগুলোতে মরদেহ রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।

অপরদিকে সবশেষ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় কমপক্ষে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহতের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

যুদ্ধ থামাতে অবিরাম ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নেতা সৌদি আরব। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এসপিএ। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এসপিএকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো যে কোনো মূল্যে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো  এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানি থামানো। আমরা চাই, দু’পক্ষের মধ্যে যেসব সমস্যা রয়েছে— সেগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সমাধান করা।’

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে বিরল এক ফোনালাপে কথা বলেছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বুধবার এই দুই নেতা ফোনে কথা বলেন বলে জানিয়েছে তেহরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। সাত বছরের বৈরি সম্পর্কের মধ্যে এটি তাদের প্রথম ফোনালাপ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোনালাপে ইব্রাহিম রাইসি ও যুবরাজ সালমান ‘ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজন’ নিয়ে কথা বলেছেন। সৌদি যুবরাজ আশ্বস্ত করেছেন, ‘স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলে চলমান সহিংসতা থামানোর সব রকম চেষ্টা করছে সৌদি আরব।’

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাসৌদি প্রেস এজেন্সিরন প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ বারবার যুদ্ধে বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন <> ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার প্রিমিয়ার প্রদর্শনীর উদ্বোধন

এদিকে জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। গাজায় মানবিক সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা করছেন অনেকে। গাজার হামলা জোরদার করতে এবং উত্তরাঞ্চলে হিজবুল্লাহর হামলা ঠেকাতে রিজার্ভের তিন লাখ সেনা তলব করেছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের প্রথম চালান ইসরায়েলে পৌঁছেছে। বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি যুদ্ধকালীন ঐকমত্যের সরকার। গাজা সীমান্তের কাছে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিবিসির কূটনীতিক প্রতিনিধি পল অ্যাডামস জানান, এটি অনেকটা নিশ্চিত যে শিগগির ঘনবসতিপূর্ণ গাজা দখলের চেষ্টা চালাবে ইসরায়েল।

সর্বশেষ খবরে ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় আরও ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণারয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ওই হামলায় নতুন করে আহত হয়েছে ২৮১ জন। গাজার জেইতুন, সাবরা, আল-নাফাক ও তেল আল-হাওয়া আবাসিক এলাকায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ইউসেফ আবু আল-রিশ বলেছেন, ধ্বংসস্তুপের নিচে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, সর্বোচ্চ ধ্বংসাত্মক মনোভাব নিয়ে নেমেছে ইসরায়েল, এজন্যই আবাসিক এলাকাগুলো পুরোপুরি মিশিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে জাতিসংঘ  মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, গাজা উপত্যকায় খাদ্য, জ্বালানি এবং পানির মতো জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় জিনিসের অবশ্যই প্রবেশ করার অনুমতি দিতে হবে।

ইসরায়েল গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করছে। জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এই সর্বাত্মক অবরোধকে যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভল্কার তুর্ক মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি এমনিতেই খারাপ ছিল। ফলে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপে সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে যুদ্ধে নিহত মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। এ ছাড়া এখনো ১৭ জন আমেরিকান নাগরিকের কোনো খোঁজ মিলছে না। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে কমপক্ষে ২২ মার্কিন নাগরিকের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। আরও ১৭ জন মার্কিনি নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে নিহত আমেরিকান নাগরিকদের সংখ্যা গত মঙ্গলবার ১৪ জন বলা হলেও বুধবার তা ২২ জনে পৌঁছায়।

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের বিধ্বংসী বোমা হামলা অব্যাহত থাকায় গাজায় তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ঘনবসতিপূর্ণ এই অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। ইসরায়েলের হামলা ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠছে এবং এই পরিস্থিতিতে গাজার ফিলিস্তিনিদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ