Apan Desh | আপন দেশ

গাজায় নিহত ৩০ হাজার ছুঁই ছুঁই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

গাজায় নিহত ৩০ হাজার ছুঁই ছুঁই

ছবি : সংগৃহীত

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা এবং বুধবার সকালের মধ্যেই ৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে সেখানে নিহতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৯৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। খবর এএফপি, আল জাজিরা।

এদিকে নতুন করে আরও প্রায় ১১০ জন আহত হয়েছেন। ফলে এখন পর্যন্ত গাজায় আহত হয়েছে ৭০ হাজার ৩২৫ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান এবং আল-শিফা হাসপাতালে পানিশূন্যতা এবং অপুষ্টিতে ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অন্য শিশুদের অবস্থাও গুরুতর। ওই দুই হাসপাতালে আরও তিন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে সংস্থাটির এক জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। জরুরি উদ্যোগ না নেয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে। খবর রয়টার্স।

বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম বলেন, ‘সহিংসতা অব্যাহত থাকলেও তা বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে আমরা আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি নিরাপত্তা কাউন্সিলকে আরও জানান, গাজার দুই বছরের কমবয়সী প্রতি ছয় শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে, গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির সবাই প্রয়োজনের তুলনায় ‘খুবই সামান্য’ খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন, যা তারা ত্রাণ হিসেবে পান।

রাজাসিংঘাম জানান, জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাদের ‘গাজায় ন্যূনতম ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতেও চূড়ান্ত পর্যায়ের বাধাবিপত্তির মুখে পড়তে হয়।’ এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছে সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা, চলাচল ও যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা, দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, অবিস্ফোরিত মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরক এবং গোলযোগ।

অপরদিকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের উপ-রাষ্ট্রদূত জনাথান মিলার আশ্বাস দিয়েছেন, ইসরায়েল গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি জানান, কী পরিমাণ ত্রাণ কত দ্রুত গাজায় পৌঁছাবে, তা জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।

মিলার নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বলেন, ইসরায়েল বিষয়টি তাদের নীতিমালায় স্পষ্ট করেছে। গাজার বেসামরিক জনগোষ্ঠীর কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই।

অবশ্য হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রধান বাসেম নাঈম বলেছেন, একটি সত্যিকারের যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে এখনো আমাদের দূরত্ব অনেক। দুপক্ষেরই নিজেদের অনেক দাবি আছে। আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবির কথা জানিয়েছি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী স্বভাবের কারণে সব কিছুই ঘোলাটে হয়ে গেছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, তারা একদিকে যেমন যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে চায় অন্যদিকে নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দেয়।

আরও পড়ুন <> নাভালনির শেষকৃত্য শুক্রবার

জাতিসংঘে গায়ানার রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন রড্রিগেস-বারকেট ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলে বলেন, ‘যুদ্ধ-কৌশল হিসেবে মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখা একটি অবৈধ কাজ এবং যারা গাজার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই অস্ত্র প্রয়োগ করছে, গায়ানা তাদের প্রতি নিন্দা জানায়।’

জাতিসংঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা বলেন, ‘(এই যুদ্ধ) ফিলিস্তিনি বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত শাস্তি। আমরা চুপ থেকে (ইসরায়েলের হাতে) ফিলিস্তিনি জনগণকে অনাহারে রাখা ও হত্যা করার লাইসেন্স তুলে দিয়েছি।’

এদিকে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে এখনো অনেক পথ বাকি রয়েছে।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, তিনি আশা করছেন, আগামী সোমবারের মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তিনি বলেন, আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন যে, আমরা যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি আছি।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৩৮ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে লড়াইয়ে অংশ নেয়া গিভাতি ব্রিগেডের ২৫ বছর বয়সী এক মেজর এবং ২৪ বছর বয়সী এক ক্যাপ্টেন নিহত হয়েছেন।

ওই একই ইউনিটের আরও সাত সেনা সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। তাদের অবস্থা গুরুতর। চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য তাদেরকে গাজা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক পোস্টে জানানো হয়েছে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়