Apan Desh | আপন দেশ

বঙ্গমাতা : জাতির পিতার প্রেরণাদায়ী ও মমতাময়ী সহচর

খায়রুল আলম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৮ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ২২:৪৩, ১৮ আগস্ট ২০২২

বঙ্গমাতা : জাতির পিতার প্রেরণাদায়ী ও মমতাময়ী সহচর

ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

 একজন নারী । যিনি তার সারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন দেশ ও জাতির তরে। যার ত্যাগের কারণেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ ও একজন নেতা। যিনি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন।

খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য তিনি আর কেউ নন। তিনি আমাদের নারী জাতির অহংকার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যিনি সোনার বাংলা বির্নিমানে আড়ালে অন্তরালে থেকে রেখেছেন অসামান্য অবদান। 

যিনি কখনো নিজের সুখ সাচ্ছ্যন্দ ও ভোগ বিলাসের কথা ভাবেনি। ভেবেছেন দেশ, দেশের মানুষ আর নেতা কর্মীদের কথা। বঙ্গবন্ধুর বন্দি জীবনে দক্ষ হাতে সামলিয়েছেন ছেলে মেয়ে, সংসার এবং ভেবেছেন নেতা কর্মীদের কথা। সেই দক্ষ সংগঠক মহিয়সি নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। 

তিনি এক মহীয়সী নারীর অনন্য উদহারণ। যিনি নিজের ও পরিবারের স্বার্থ ত্যাগ করে কাজ করেছেন বাঙ্গালী জাতির জন্য। যেমন বলা যায় এই লেখাটির অংশবিশেষে: ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন,দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ,আপনি নিশ্চিত মনে সেই কাজে যান,আমার জন্য চিন্তা করবেন না।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থাকাকালে তার স্ত্রীর লেখা একটি চিঠির অংশ। এভাবেই স্বামীর পাশে থেকে সারাজীবন উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বিজয়লক্ষী নারী জাতির পিতার অর্ধাঙ্গীনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গমাতার মহান ত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্মর হয়ে আছে। পিতৃ-মাতৃহারা এক অনাথ শিশু জীবন শুরু করেছিলেন শত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে। নিজের আন্তরিকতা, প্রচেষ্টা ও মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি।  

১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট । শেখ মোহাম্মদ জহুরুল হক এবং হোসেন আরা বেগমের কোল আলো করে শ্রাবণের দুপুরে জন্ম নিল এক মহিয়সী নারী ফজিলাতুন্নেছা যার ডাক নাম রেনু। মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি তার পিতাকে হারান। তারপরে দু’বছরের মাথায় তার মাকে ও হারান। বড় বোন জিনাতুন্নেছা, ডাকনাম জিন্নি ও ছোট বোন ফজিলাতুন্নেছা এই দুই অনাথ শিশুর দায়িত্ব নেন বঙ্গমাতার দাদা শেখ মো. আবুল কাসেম। দাদার ইচ্ছায় মাত্র তিন বছর বয়সের ফজিলাতুন্নেছার সাথে দশ বছরের শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়ে হয়। শাশুড়ি সায়রা খাতুন এবং শ্বশুর শেখ লুৎফর রহমানের কাছে তিনি বাড়ির বউ হয়ে থাকেননি, থেকেছেন নিজের সন্তান হয়ে। শিশু অবস্থায় বিয়ে হলেও বঙ্গমাতার সংসার শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর এন্ট্রান্স পাশের পর ১৯৪২ সালে। 

ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্থানীয় একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হলেও তার স্কুল জীবনের পড়ালেখা বেশি দূর এগোয়নি। তিনি ঘরে বসেই পড়ালেখা শিখেছেন। তারা যখন সংসার শুরু করেন, তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ১৯ বছর আর ফজিলাতুন্নেছার বয়স ১০ বছর। স্বামী বাইরে থাকাকালীন ফজিলাতুন্নেছা অবসর সময়ে বিভিন্ন রকমের বই পড়তেন, গান শুনতেন।

বাংলাদেশের মুক্তির দীর্ঘ সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও দেশ গঠনে, উচ্চারিত নাম মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার নামের সাথে শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত নামটি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যখনই আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলি তখনই বঙ্গমাতার নাম চলে আসে। 

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণের সঙ্গে বঙ্গমাতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জন বাঙালি নৌ ও সেনাবাহিনীর সদস্য এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। বঙ্গবন্ধু এ মামলায় বিচলিত না হয়ে আইনিভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আইনজীবীদের অর্থ জোগানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। এ মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবিতে বাঙালি রাস্তায় নামে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজপথ বিক্ষোভে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। 

বঙ্গবন্ধু কলকাতায় লেখাপড়া ও রাজনীতি করতেন, দফায় দফায় কারাবরণ করেছেন। এই নিয়ে কোন অভিযোগ ছিলনা তার। বঙ্গবন্ধু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন, “রেনু খুব কষ্ট করত কিন্তু কিছুই বলতোনা। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকা পয়সা জোগাড় করে রাখত। যাতে আমার কষ্ট না হয়।”

১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের প্রথম সন্তান জন্মের সময় মারা যায়। দুই কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে ’৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন কন্যা শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৯ সালে পুত্র শেখ কামাল, ১৯৫৩ সালে শেখ জামাল, ১৯৫৭ সালে কন্যা শেখ রেহানা, ১৯৬৪ সালে পুত্র রাসেল জন্মগ্রহন করে।

অনন্য মানবিক গুণাবলী ছিল তার। ঘরে বসে নিজেই স্কুল খুলে মেয়েদের লেখাপড়া ও সেলাই শেখাতেন। গরীব ছেলেমেয়ে, এতিম, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতামাতাকে অর্থ সাহায্য করতেন। দলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসার খরচ যোগাতেন। সংগঠন ও আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজন মেটাতে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিতেন। তার কাছ থেকে কেউ কোনদিন রিক্ত হস্তে ফেরেনি।

এ প্রসঙ্গে কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,“বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনীতিক জীবন, লড়াই, সংগ্রামে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে, কিন্তু কখনো মাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। যতো কষ্টই হোক আমার বাবাকে কখনোই বলেননি যে তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও বা সংসার কর বা খরচ দাও। আব্বা যে পদক্ষেপ নিতেন সেটাকেই সমর্থন করতেন তিনি।”

নিজের জমানো টাকা ও আবাসন ঋণ নিয়ে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ি নির্মান করেন। এ প্রসঙ্গে বেবী মওদুদ ‘মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “সব কাজ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করতেন। খরচ বাঁচানোর জন্য নিজের হাতে পানি দেয়া, ইট ভেজানোসহ বহু শ্রম, যত্ন ও মমতা দিয়ে বত্রিশ নম্বরের বাড়িটি নির্মান করেন।”

জাতির এক সন্ধিক্ষণে বঙ্গমাতা মুজিবের একটি সিদ্ধান্ত বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্যারলে মুক্তি নিতে চাপ দেওয়া হয়। মাকে ভয় দেখানো হয়েছিল ‘পাকিস্তানিদের শর্ত না মানলে তিনি বিধবা হবেন।’ কিন্তু মা কোনো শর্তে মুক্তিতে রাজি হননি। আব্বাও প্যারলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। শেষ পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।”

১৯৬৬ এর ৫ ফেব্রুয়ারি, বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। ৮ মে নারায়নগঞ্জে ছয়দফার সমর্থনে জনসভা করে ঘরে ফেরার পর গভীর রাতে গ্রেফতার হন। ঐ সময় ছয়দফা না আটদফা বিভ্রান্তিতে অনেক নেতাও আটদফার পক্ষে কথা বলেন। ছয়দফা থেকে একচুলও নড়া যাবে না- বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ বাস্তবায়নে বঙ্গমাতা ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখেন। ছয়দফার সমর্থনে বোরকা পরে জনসংযোগ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ক্ষেত্রেও রয়েছে বঙ্গমাতার বুদ্ধিমত্তার ছাপ। ওইদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গমাতার জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চ ভাষণের আগে কতজনের কত পরামর্শ, আমার আব্বাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে! সবাই এসেছে-এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে। আমার মা আব্বাকে খাবার দিলেন, ঘরে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। আব্বাকে সোজা বললেন, তুমি ১৫টা মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবা। অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারা জীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছ, তুমি জেল খেটেছ। তুমি জান কী বলতে হবে? তোমার মনে যে কথা আসবে, সে কথা-ই বলবা।

৭১ এর ২৫মার্চ, দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বত্রিশ নম্বর বাড়ি আক্রমন করে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানী সেনারা। বঙ্গমাতা ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রথমে পাশের বাসায় আশ্রয় নেন। বত্রিশ নম্বর বাড়ি তছনছ করে, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মা বাবার সামনে বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। বড় ছেলে শেখ কামাল ২৫ মার্চ রাতেই মুক্তিযুদ্ধে যান, আটক অবস্থায় শেখ জামাল ও যান। উনিশবার জায়গা বদল করেও রেহাই পেলেন না, একদিন মগবাজারের বাড়ি থেকে ছেলে-মেয়ে সহ বঙ্গমাতাকে গ্রেফতার করে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে রাখে পাকসেনারা, বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন কিনা জানতেন না। বন্দি অবস্থায় কন্যা শেখ হাসিনার সন্তান জন্ম নেয়ার সময় তাকে একবারের জন্যও ঢাকা মেডিক্যালে যেতে দেয়া হয়নি। 

কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ‘একজন আদর্শ মায়ের প্রতিকৃতি’ লেখায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন,“জুলাই মাসের শেষ দিকে হাসু আপা হাসপাতালে গেল। মা যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েও যেতে পারলেন না। সৈন্যরা তাকে যেতে দিলনা। বলল, ‘তুমি কি নার্স না ডাক্তার যে সেখানে যাবে’ মা খুব কষ্ট পেয়ে সারারাত কেঁদেছিলেন।” বন্দি অবস্থায় তিনি অসুস্থ্য শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করান তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (যা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়), সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন, খবরাখবর আদান প্রদান করতেন।

তাদের যুদ্ধ দিনের বন্দীদশার অবসান ঘটে ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তি পেয়ে বঙ্গমাতা বাড়ির ছাদ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে টুকরো টুকরো করে আগুন ধরিয়ে দেন। জয় বাংলা শ্লোগান দেন। এসময় হাজার হাজার জনতা ছুটে আসে।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর সেখান থেকেই লন্ডনে যান। লন্ডন থেকেই বেগম মুজিবের সঙ্গে তার প্রথম কথা হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অবসান ঘটে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার দীর্ঘ প্রতীক্ষার। এরপর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবন দেন।  

স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশ্যে বঙ্গমাতা বলেন, ‘আমি তোমাদের মা।’ তিনি বলেন, ‘এই বীরাঙ্গনা রমণীদের জন্য জাতি গর্বিত। তাদের লজ্জা কিংবা গ্লানিবোধের কোনো কারণ নেই। কেননা তারাই প্রথম প্রমাণ করেছেন যে, কেবল বাংলাদেশের ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও আত্মমর্যাদাবোধে কী অসম্ভব বলীয়ান। (দৈনিক বাংলার বাণী, ১৭ ফাল্গুন, ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ)। ’

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা অবিছিন্ন সত্তা ছিলেন। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ গ্রন্থে মযহারুল ইসলাম লিখেছেন, “আমি বঙ্গবন্ধুর অনাবিল সাক্ষাতকার লাভ করেছি। একবার তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে দুটো বৃহৎ অবলম্বন আছে-- একটি আমার আত্মবিশ্বাস, অপরটি --- তিনি একটু থেকে আমাকে বললেন, অপরটি বলুন তো কি?’ হঠাৎ এ-রকম একটি প্রশ্নের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি একটু মৃদু হেসে বললেন,‘অপরটি আমার স্ত্রী, আমার আকৈশোর গৃহিণী।”

তিনি বঙ্গবন্ধুকে শক্তি, সাহস, মনোবল, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, বঙ্গবন্ধু ‘জাতির পিতা’ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জীবনে যত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন সবটাতেই বঙ্গমাতা তাকে ছায়ার মত সাহায্য করেছেন। ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম বলেন,“রেণু ছিলেন নেতা মুজিবের Friend, Philosopher and Guide.”।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির জীবনে নিকষ কালো অধ্যায়। খুনী মোশতাক, খুনী জিয়া বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গমাতা সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে ঘাতকদের বলেন,“তোমরা আমাকে এখানেই মেরে ফেল।” জীবনের মত মরণেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী হলেন এই মহাপ্রাণনারী।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং শ্রেষ্ঠ স্মরনীয় মানবী। বিশ শতকের প্রথমার্ধে নারীর অবরোধের বেড়াজাল উপেক্ষা করে সাহসী পদক্ষেপে বেরিয়ে আসেন তিনি। সহধর্মিণী হিসেবে নয়, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন প্রিয়তম স্বামী শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়াসঙ্গী ছিলেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়ক শেখ মুজিবের অনুপ্রেরণাদায়িনী হয়ে পাশে ছিলেন। বাঙালি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে ধাপে বঙ্গমাতার অবদান রয়েছে। আর সেটা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে নয়, একজন দক্ষ নারী সংগঠক হিসেবে। যিনি ধূপের মতো নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত হতে সহায়তা করেছেন। 

 

লেখক : যুগ্ম সম্পাদক , ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)

( আপন দেশ ডটকমের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের আপন কথার  মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার আপন দেশ ডটকম নিবে না।)

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়