Apan Desh | আপন দেশ

ইদানীং ভূরাজনীতির প্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশ শ্যাম রাখি না কুল রাখির দ্বিধাদ্বন্দ্ব-ধান্দায়

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ৮ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৬:০৮, ৮ মার্চ ২০২৪

ইদানীং ভূরাজনীতির প্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশ শ্যাম রাখি না কুল রাখির দ্বিধাদ্বন্দ্ব-ধান্দায়

ছবি: আপন দেশ

আসিয়ান দেশগুলোর একটি অন্যতম ব্যস্ত ব্যবসাবাণিজ্য, পর্যটন ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। বাংলাদেশের চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে ব্যাংকক এবং ভারতের মুম্বাইকে ঘিরে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গড়ে তোলা, একটি আন্তঃসহায়তাকারী শিল্প বাণিজ্য বিপণন, গ্লোবাল ডিসট্রিবিউশন সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার প্রস্তাব ছিল জাপানের। ১৯৯৫ সালের জাইকা বাংলাদেশকে প্রদত্ত প্রতিবেদনে সে পরিকল্পনার ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছিল। বাংলাদেশ সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাসময়ে ইতিবাচক সাড়া দিতে সক্ষম হয়নি।

ইদানীং ভূরাজনীতির প্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশ শ্যাম রাখি না কুল রাখির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও ধান্দায়। বাংলাদেশ দিনকে দিন এমন সব আন্তঃদেশীয় রশি টানাটানির অসুখন্ডবিসুখে (কর্মফল) ভুগতে বসেছে যে, তার অনেক স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে গেছে, কোনো কোনো স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হচ্ছে। দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অর্থনীতি তথা সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় যেমন চ্যালেঞ্জ, আমাদের পারিবারিক সে ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার স্বরূপ সন্ধানে আমরা এখন ব্যাংককে। দেশ ও জাতির আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা-ব্যবস্থার সমস্যাদির সঙ্গে, ব্যক্তি ও পরিবারের স্বাস্থ্যসহ বিবিধ সমস্যার সাযুজ্য সহসা কিংবা সময়ের অবসরে মিলছে।

গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য ও আয়-ব্যয় বৈষম্য বিহারী আর্থসামাজিক রাজনৈতিক সমস্যার পরস্পর প্রযুক্ত ব্যক্তি, পরিবার, দেশ ও সমাজ জীবনে। সংসারের সদস্য সুস্থতায় ও উপযুক্ত শিক্ষায় সম্পদে পরিণত হলে সাবলম্বী পরিবার সুখের মুখ দেখতে পারে। পরিবার সুখী হলে সমাজ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারে আর তাতে দেশ বহিরারোপিত নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তি ও সাহস অর্জন করে টেকসই উন্নয়ন উন্নতির পথে এগোতে পারে। নানান দৈব দুর্বিপাক সত্ত্বেও উপযুক্ত ও দক্ষ মানবসম্পদের কারণে বহু দেশ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে।

আবার কোনো কোনো দেশ উল্টো পথে হেঁটে, দেশ বা রাষ্ট্রকে সবল সক্ষম ও দক্ষ করতে গিয়ে তার বিরূপ প্রভাব সমাজ পরিবার ও ব্যক্তির জীবনে ফেলছে। ক্ষমতাবানদের হাত শক্তিশালী করতে গিয়ে ব্যক্তি ও পরিবার আয়বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনার এর কোনো একটি ক্ষেত্রে যদি বৈকল্য বা বিড়ম্বনা দেখা যায় তাহলে তা ওপরে এবং নিচে নানান ক্ষত সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে তা গোটা দেশ ও জাতিকে জরা-ব্যধিগ্রস্ত করে ছাড়ে। এর নিরাময়ের একমাত্র উপায় ব্যক্তির সুস্থতা, সমাজের সুস্থতা তথা গোটা দেশের নৈতিক সুস্থতা। মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো। এখন অবস্থা যদি এমন হয়, ব্যক্তি উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে গোল্লায় যায়, তাহলে তাকে নিয়ে পরিবার কী করবে? তাতে হতবিহ্বল পরিবার দুর্দশাগ্রস্ত হলে সমাজ কী করবে? দেশ ও রাষ্ট্রেরও বা করণীয় কী? সেসব চিন্তার খোরাক পাচ্ছি এবারের এই ব্যাংকক সফরের সময়।

আমরা ব্যাংককে এসেছি পরিবার সদস্যদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য-সুস্থতার পথে বাদ সাধছে এমন জটিল রোগের প্রকৃত সমাধান পেতে। অর্থাৎ এসব রোগের ডায়াগনসিস ও চিকিৎসা ব্যবস্থা  বাংলাদেশে বিদ্যমান থাকা এবং ক্রমে তার উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আস্থার সঙ্গে সমস্যা শনাক্তকরণে সক্ষম বা চিকিৎসায় দক্ষতার পরিচয় দিতে সময় নিয়েছেন। রোগীর কাছে সঠিক শনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত হওয়া যেমন জরুরি, এ কাজে বিপুল অর্থব্যয়ের সামর্থ্য অর্জনও আবশ্যক। বাংলাদেশে আয়বৈষম্য এত বাড়ছে যে, পুঁজিবাদী চিকিৎসার ফাঁদে মধ্যবিত্ত (নিম্নবিত্তের এখানে ঢোকার কোনো পথ বা ব্যবস্থা নেই) পরিবারের রোগীকে পা দিতে হয় অতি সন্তর্পণে। চিকিৎসাসেবায় সুশাসন না থাকলে রোগীকে মাঝেমধ্যে আম-ছালা দুটোই খোয়াতে হয়। মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত সমাজে উচ্চবিত্তদের দাপটে সুচিকিৎসা পাওয়া জটিল তো বটেই, তাদের পুঁজিবাদী চিকিৎসা খরচের ফাঁদে পড়ে দেশে, এমনকি দেশের বাইরে আসতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা অসাম্য সমাজে উচ্চবিত্তদের কাছে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া ফ্যাশন হলেও মধ্যবিত্তদের কাছে তা অস্তিত্বের সংগ্রামে নামার শামিল হয়ে দাঁড়ায়।

ব্যাংককের যে বেসরকারি হাসপাতালে আমরা সেবা পেতে এসেছি তার সুনাম ও সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের, এখানে যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছি তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বেশ ব্যাপক। যে প্রটোকল বা টেকনোলজিক্যাল ডিভাইসে রোগ শনাক্তকরণ তা অতি আধুনিক তো বটেই তবে সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় আমাদের এই যে, একই ব্যবস্থাপনা ও ডিভাইস বাংলাদেশের বিশেষ প্রকৃতির কয়েকটি হাসপাতালে গড়ে উঠলেও ‘ম্যান বিহাইন্ড দ্য প্লাউ’ সেই দক্ষ বিশেষজ্ঞ, ইমেজ রিডার ইন্টারপ্রিটকারীর সংখ্যা অপ্রতুল। ঠিক এ পর্যায়ে আমাদের এখনো বিদেশে দক্ষ ও করিৎকর্মা হাসপাতাল, চিকিৎসক ও ডিভাইসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

যারা উচ্চবিত্ত তারা সামান্য কারণেও বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেন। দেশের হাসপাতালগুলোতে অসামর্থ্যবানরা নির্ভরশীল হচ্ছেন। তাদের  উন্নত সেবা কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। দেশে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে বিদেশি ব্যবস্থাপনা, দক্ষ বিশেষজ্ঞ ও ডিভাইস ব্যবহারের জন্য চিকিৎসা ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় রোগীরা সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে দোটানায়। পদে পদে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা ও বাণিজ্যিকীকরণের অভিযোগ উঠছে। অগত্যা বাইরের ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা পেতে ফরেন কারেন্সির সংকটে থাকা অর্থনীতিকে তিনগুণ ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে। আমরা এমন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারব না যে, বিদেশিরা আমাদের জন্য ফরেন কারেন্সি নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসবে। আমরা আমাদের অর্থ আমাদের দেশেই যেন রাখতে পারি, তেমন অবকাঠামো গড়ে তুলতেই হবে।

বাংলাদেশে তিন ধরনের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষায়িত হাসপাতালে উচ্চমূল্যে নিশ্চিত সেবা, মধ্যম মানের সেবাধর্মী হাসপাতালে এফোরডেবল কস্টে সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখানে স্বাস্থ্যসেবা প্রার্থীর সংখ্যা বেশি দাবিদারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেবার মান বজায় রেখে উপযুক্ত সেবা দেওয়ায় চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। তৃতীয় পর্যায়ে লো কস্টে বিপুল সংখ্যক রোগীকে সামান্য সেবা দিতে হয় বা পেতে হয়। সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোয় এবং বহুল উচ্চারিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে অপ্রতুল এ সেবা পেতেও রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়।

এসব হাসপাতালে সরকারি অর্থব্যয়ে উন্নত ডিভাইস আনা হলেও তা যথাসময়ে (হাসপাতালে ডিউটির সময়) যথাব্যবহার ও বিশ্লেষণযোগ্য চিকিৎসক কাগজে-কলমে থাকলেও তাদের সেখানে পাওয়া যায় না, তারা বেসরকারি ক্লিনিকে বসেন। এ ধরনের ত্রিশঙ্কুল পরিবেশ পরিস্থিতিতে দক্ষ চিকিৎসা জনবল তৈরি ও পদায়নে, সুশাসনে দায়িত্বশীল হতে হবে সরকারি-বেসরকারি খাত সবাইকে। এখানে কোটারী-ক্ষমতাধর পেশাজীবী সমিতি সংগঠনগুলোর  দৌরাত্ম্য দূর কিংবা চিকিৎসাসেবার নীতি ও দর্শন আচারি হিসেবে পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

চিকিৎসাসেবায় ভালো বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারলে, মধ্যবিত্তের বিদেশগামিতা কমে আসবে। প্রকারান্তরে অর্থনীতিতে ব্যক্তি চিকিৎসা ব্যয়বৃদ্ধি রোধ করা যাবে। এতে ফরেন কারেন্সি সাশ্রয় হবে। একজন রোগীর সঙ্গে দু-তিনজনকে বিদেশে যেতে হয়। এসব কমাতে দেশে দক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারি বিনিয়োগ হবে ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে জাতীয় সঞ্চয় ও জনসম্পদ উৎসারিত আয় বৃদ্ধি বা ব্যয় সাশ্রয়ীকরণ।

চিকিৎসাসেবা সূত্রে বিদেশি অর্থনীতিতে পর্যটন, বাণিজ্য ও মানবসম্পদ ব্যবহারের সুযোগ অবারিত হয়। বাংলাদেশে অনুরূপ বিশেষজ্ঞ তৈরি, তাদের দায়িত্বশীল আচরণ এবং ডিভাইসগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে আখেরে জনস্বাস্থ্যসেবার পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় সংস্কার উত্তর সুফল পাওয়া যাবে। জনমিতির অর্থনীতিতে দক্ষ সবল সুস্থ জনবলের সার্বিক উন্নতি অনিবার্য হয়ে উঠবে।        

মূলত এবং মুখ্যত আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পদ্ধতিতেও কার্যকর পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এই পরিবর্তন সর্বজনকে আওতাভুক্ত করতে বা আনতে জনস্বাস্থ্য সেবাকে দেশব্যাপীকরণে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির কমপ্রিহেনসিভ ডিজিটাল হেলথকেয়ার  (সিডিএইচসি) কর্মসূচিটির কথা এখানে আপাতত উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা ইউনিয়ন বা থানা হেলথ কমপ্লেক্সে আধুনিক চিকিৎসাসেবা দানের অবকাঠামো ও প্রক্রিয়াগত অপ্রতুলতাজনিত কারণে, সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনায় যে অসম্পূর্ণতা রয়েছে, তাকে পূর্ণতা প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকায় সশাসিত ও স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি খাতের এই ভূমিকা পালন দেশের স্বাস্থ্য খাতকে অধিকতর সেবামুখী করতে পারে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি সরকারি খাতের পরই বেসরকারি খাতে  বৃহত্তর পরিসরে স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক রয়েছে দেশব্যাপী। সেই সেবা ব্যবস্থাপনায় ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি টেস্টিং, মেডিকেল ইমেজিং, রোগী-চিকিৎসকের পরামর্শ, এমনকি ছোটখাটো অস্ত্রোপচার পদ্ধতিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করার এই উদ্যোগ।

প্রসঙ্গত যে, মোবাইল প্রযুক্তির বিবর্তনের ফলে রোগী-চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো ইত্যাদির মতো সামাজিক অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে। রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষা এখন সঠিক এবং দ্রুত ফলাফল প্রদানের জন্য কমভোগ্য সামগ্রীসহ ছোট সরঞ্জাম ব্যবহার করে পরিচালিত হতে পারে। পোর্টেবল হ্যান্ড-হোল্ড ডিভাইসগুলো শব্দ, আল্ট্রাসাউন্ড, রক্তনালিতে তরল প্রবাহ এবং ইসিজির মতো ইলেকট্রনিক রেকর্ডিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। পোর্টেবল হ্যান্ড-হোল্ড ডিভাইসের সংমিশ্রণ, দ্রুত-পরীক্ষা ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম এবং সামাজিক অ্যাপগুলোর সঙ্গে অডিও-ভিজ্যুয়াল যোগাযোগের ব্যবহার রোগী এবং ডাক্তার উভয়ের জন্য টেলিমেডিসিন কার্যক্ষমতা ও অভিজ্ঞতাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে পারে।

লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়