Apan Desh | আপন দেশ

ভাষা স্বাধীন বলেই দেশ স্বাধীন

আবদুল আউয়াল ঠাকুর

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৯:১৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভাষা স্বাধীন বলেই দেশ স্বাধীন

প্রতীকী ছবি

কথা নতুন নয়।বলার প্রয়োজনীয়তা ও তাগিদ অনুভবের থেকেই লিখা। আমাদের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি কি? আসলে  একটি জাতি যখন নিজেদের স্বাধীন ভাবতে শুরুকরে তখনই তারা স্বাধীন হয়ে যায়। দমিত করা নির্যাতণ করা স্বাধীনতার স্বপ্ন বা কথা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা বুল ডোজার চালানো এসবই হচ্ছে, একটি স্বাধীনমতকে অবদমিত করার নির্মম অপপ্রায়াস।

আমরা  স্বাধীন হয়েছি মুক্তিযুদ্ধ করে। স্বাধীকার থেকে আমরা স্বাধীনতায় ধাবিত হয়েছি। এটি কোন স্তর অতিক্রমণ নয় বরং লক্ষ্যে পৌঁছার কৌশল।আমরা দুবার স্বাধীন হয়েছি। প্রথম বৃটিশ থেকে পরে পাকিস্তান থেকে। দুটি স্বাধীনতাই নানা আলোচনার সূত্রপাত করে কারণ আমরা বৃটিশ মুক্ত হবার সময়েই স্বাধীন হতে পারতাম এবং সেটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতো। কেন হতে পারিনি সেসব ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। কেউ মানুক না মানুক সত্যি এটাই যে সাম্প্রদায়িক উগ্র হিন্দু রা জনীতিকদের অরাজনীতিক আচরণ এবং আমাদের রাজনীতিকদের স্বার্থপরতা আমাদের সেদিন একটি স্বাধীন জাতি  হবার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল। সে কারণে এ অঞ্চলের বাংলাভাষীরা বর্তমান পশ্চিমপাকিস্তানের সাথে মিলে কলাগাছে ভোট দিয়ে পাকিস্তান করেছিল। সেই পাকিস্তান আমাদের জন্য শেষ পর্যন্ত ঐক্যের কোন ভিত্তি করতে পারেনি কারণ পাকিস্তানীদের শোষণ এবং পূর্ব পাকিস্ব্যাতানীদের সাথে বিমাতাস্বরূপ আচরণ। আমরা তাই সংগঠিত হয়েছিলাম ভাষাকে নিয়ে। কৌশলটা খুবই

প্রাজ্ঞাচিত ছিল। কথাটা এ কারণে বলছি, ভারতে কোনো রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিলনা। অথচ হিন্দীকে তারা মেনে নিয়েছে। কারণ তারা ভেবেছে জাতীয় অস্তিত্বের জন্য অনেককিছু মানতে হয়। ভারতে কোন নববর্ষ নেই। তারা মহোৎসবে ইংরেজী বর্ষকেই মেনে নিয়েছে। দোলকে অনেকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করেছে। কারণ তারা ভারতীয় ঐক্যে সমর্পিত। ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে, নিজেদের ঐক্যবদ্ধ মনেকরা। আমরা শীশাঢালা প্রাচীর অথবা ইদুরে  খাওয়া ঐক্যের কথা যেটাই বলি না কেন কথা এটাই। তাহলো অস্ত্র ভয়ভীতি  দিয়ে ঐক্য টিকিয়ে রাখা যায় না। কেবলমাত্র ঐক্যবদ্ধ  থাকতে চাই এই ধারণা বদ্ধমূল হলেই ঐক্য সম্ভব । সারা বিশ্বের  যেসব মানুষ আজও মার্কিণযুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হচ্ছে তাদের মনে বড় বেদনা দেশে থাকতে পারলাম না। আমাদের অনুভূতি বোধ বিশ্বাস সবকিছু নিয়েই আমরা মূলত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত থাকা অংশেই বাংলাদেশ রূপে স্বাধীন পতাকা উড়িয়েছি। সে বিবেচনায় আমাদের ভাষার ধারণা এবং গণআলোচনা কোন বিবেচনাতেই এক নয় ।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের দ্বিজাতিতত্ত্বেও ধর্মের কথা ছিল না। পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক নামক একটি স্ববিরোধি সজ্ঞায় যুক্ত করে একে ইসলামিক রূপ দেয়া হয়েছিল। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আমাদের অনেকেই সেই সূত্রধরে বলছেল, ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রত্যাখাত হয়েছে। সে অন্য আলোচনা। জাতিস্বত্ত্বার মূলে  যেসব উপাদান এখনো কার্যকর তারমধ্যে মানুষের আচরণ বিদ্যমান। শরীরে কোন কাঁটা ঢুকলে তা সুস্থশরীরে তিন দিনের বেশি অবস্থান করতে পারে না কারণ শরীরের ভেতরের প্রতিরোধ শক্তি অনাহুতকে বের করে দেয়। তেমনি দেশের সাধারণ মানুষের অসহ্য অপছন্দনীয় যেকোন আচরণই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না।এটিই স্বাভাবিক  চরিত্র। অনেকেক বলেন গা সওয়া করে নেয়া। আসলে ব্যাপরটি সেরকম নয়।

যে কথা বলছিলাম তাহোল  ভাষা। আমাদের ভাষা আমাদের স্বাধীকার অন্দোলনের মূল ভিত্তি। তাহলে এ অঞ্চলে এই ভাষার যে ক্ষমতা তা অন্য অঞ্চলে নেই। পশ্চিমবাংলায় বাংলার স্থান করে নিয়েছে হিন্দী। এমনকি এখন বাংলাদেশেও অনেকে ‘বান্দী’ ভাষা ব্যবহার করছেন। এটি হচ্ছে ভাষার আগ্রাসণ। এই আগ্রাসণের সূত্রপাত কবে থেকে  সেটি না জানলে-না খুঁজলে মূল ভাষার পরিচিতি পাওয়া যাবে না। আর সেটি পাওয়া না গেলে আমাদের স্বকীয়তা স্বাধীনতার মূল ভিত্তি  অরক্ষিতই থেকে যাবে। আমরা যখন বলি ভাষা আমাদের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি -তাহলে অবশ্যই ভাষার আমিত্ব যদি প্রমাণিত না হয় তাহলে আমাদের স্বাধীনতার যৌক্তিকতা অপ্রমাণিত থেকে যাবে। আমাদের ঐতিহ্যমন্ডিত  সভ্যতাকে কিভাবে সংস্কৃতায়ণ করা হয়েছে  সেটিকে যারা চেপে যেতে চান অথবা সংগত বলে মনে করেন তারা প্রকারান্তরে আমাদের স্বাধীনতাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং পক্ষান্তরে অর্থহীন প্রমাণিত করতে চান। লিখিত রূপের সাথে যে ব্যাকরণের সম্পর্ক তার সাথে আমাদের ভাষা এবং তার বিকাশের কোন মিল নেই। এই ভাষায় যে প্রতিরোধ এবং সংহতকরণের সম্পর্ক রয়েছে তার সাথে সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুরূপ করেতৈরি বাংলা ব্যাকরণের কোন ম্পর্কই নেই বরং এটি ভাষাকে জটিল ও দুরূহ করে তুলেছে।

ভাষাকে সাধারনের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। প্রবাহমানতাকে বেঁধে দিয়েছে। যেভাবে ভারত উজানে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্য ন্যায্য পানির হিস্যা আটকে দিয়েছে। মূল সভ্যতা ধ্বংসকারি আর্যরা আঘাত হেনেছে আমাদের বর্ণবাদহীন সমাজ ব্যবস্থায়। সৃষ্টি করেছে বর্ণবাদ। ভাষাকে তৈরি করেছে বর্ণবাদী রূপে। এই সমাজে শ্রেণীভেদ প্রথাছিল না।মানুষের সাথে মানুষের কোন বৈষম্য ছিলা। পেশার দ্বারা মানুষের কোন পরিচয় ছিল না। অথচ আর্য বিধ্বংসী তান্ডবে সমাজকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়ে এখন নানা কথার প্রলেপ দেয়া হচ্ছে আর দোষী প্রমাণের চেষ্টাকরা হচ্ছে ,বাংলায়-ভারতে মুসলমানদের আগমনকে। বাস্তবতা হচ্ছে, ভারত বা বাংলাদেশের সমাজ মানসে যতটুকু বর্ণবৈষম্যবাদের নিরসন হয়েছে সেটুকু মুসলমানদের অবদান। আর্যানুরুপীদের বেদনা সেখানেই কারণ তাদের শিকার হাতছাড়া হয়ে গেছে।

আমাদের ভাষাতকে তার স্বমর্যাদায় আনতে হলে তার আদি ও পূর্ণরূপে  ফিরিয়ে আনতে হবে। এর শব্দ  ব্যবহার সবকিছুতেই মূল চরিত্র ঠিক রেখে আধুনিকায়ন করতে হবে। করা প্রয়োজনীয়। পরাজিতদের নিয়ন্ত্রিত ভাষার অনুকরণ তাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির গলদঃকরণের মধ্যে বাংলাভাষার প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশের কোন সুযোগ নেই ।এটিও মনেকরার কোন কারণ নেই যে, ভাষার প্রকৃত র্চ্চা জনপ্রিয়তা পাবে না। সাহিত্যে  রাজনীতিতে  চিন্তায় চেতনায় মানুষ তাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখতে ভালবাসে। এটিই  তাদের কাছে প্রিয়।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয়  প্রত্যেক লেখক- কবিই কাজ করেছন মাটি ও মানুষকে নিয়ে। দুঃখের সাথেই বলতে হয়, ভাষা আন্দোলনের যারা প্রকৃত গর্ভধারণকারি সেই ভাষা মতিন  শ্রদ্ধেয় মতিন ভাই বা তার সহযোগীরা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতেন বা আসতে পারতেন তাহলে হয়ত ভাষা তারা অপন বৈশিষ্টে  ফিরে আসতে পারত। কারণ তারা পদলেহী ছিলেন না ।পদলেহন দাসানুবৃত্তি অবদমিত চিন্তা থেকেই বাংলাভাষাকে সংস্কৃতের সাথে সম্পর্কিত করার ভাবনা বিস্তৃত। বাংলা একটি স্বাধীন ভাষা। সে কারণেই বাংলাদেশ একটিনস্বাধীনদেশ। যারা ভাষার প্রতি যথাযথ সম্মাণ দেখান তারাই স্বাধীনতার প্রতি যথাযথ সম্মাণ দেখান বা দেখাতে পারেন। বাংরেজী বান্দী বা বাংদু যেকোন ভাষাই বাংলা নয়। বাংলা বাংলাই।
লেখক:   আব্দুল আউয়াল ঠাকুর

(আপন দেশ -এর সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের আপন কথার মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার আপন দেশ ডটকম  নেবে না।)

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়