Apan Desh | আপন দেশ

জাতিসংঘে বিএনপির চিঠিতে যেসব অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১২:২০, ১ জানুয়ারি ২০২৪

জাতিসংঘে বিএনপির চিঠিতে যেসব অভিযোগ

ফাইল ছবি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ভোট বর্জন করার জন্য দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিদিন লিফলেট বিতরণ করছেন। এ ছাড়া একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকাস্থ দূতাবাস পাঠানো হয়েছে এ চিঠি। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- জাতিসংঘের মহাসচিবের দফতর চিঠি গ্রহণ করেছে।

জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে বিএনপি জানিয়েছে, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি বিতর্কিত নির্বাচনের পটভূমিতে, আবারো আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনমূলক ও সহিংস কারচুপির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথাকথিত এই ডামি নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে নাশকতা চলছে, তাতে শুধু গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-কাঠামোতে, বিশেষত বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে, জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা-স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশ।

সহিংসতার বিষয় উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান অগ্নিসংযোগের প্রতিটি ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার একমাত্র বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র, আর প্রধান ভুক্তভোগী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ কোনো তদন্ত, তথ্য বা সূত্র ছাড়াই প্রতিটি ঘটনার পরপর অবলীলায় ও একই সুরে অগ্নিসন্ত্রাসের দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। নিজেদের সুপরিকল্পিত এই ধ্বংসযজ্ঞকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নকে উসকে দিচ্ছেন, যা শেখ হাসিনার প্রতিহিংসামূলক বক্তব্যে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। 

গত ১৯ ডিসেম্বর ট্রেনে মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় চলন্ত ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং চারজন যাত্রী মারা যান। ঘটনার বিশ্লেষণে প্রতীয়মান যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশে এই নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের দুই দিন আগেই, ১৯ ডিসেম্বরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিশেষভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, এই নির্দেশনাটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। ডিএমপির এই প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ কেন নেয়া হয়েছিল, নাশকতার সুস্পষ্ট তথ্য ও পরিকল্পনা তাদের কাছে কীভাবে এল এবং তারপরও এটি রোধে কেন তারা কোনো ব্যবস্থা নিলেন না, জনমনে এসব প্রশ্ন রয়েছে। 

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি যতবার জনগণকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, আওয়ামী লীগও একই দিনে পরিকল্পিত নাশকতার উদ্দেশ্যে কর্মসূচি আহ্বান করেছে। আমরা দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বদা একটি অহিংস আন্দোলন বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছি এবং সকল উসকানি এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। গত ২৮ অক্টোবর আমরা ঢাকায় একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিলাম, যেখানে সারা দেশ থেকে গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আবারো প্রমাণ করেছিল, বিএনপির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে এবং একটি সত্যিকারের নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বিব্রতকর পরাজয় অনিবার্য। আর তাই, আমাদের মহাসমাবেশকে বানচাল ও চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, সেদিন একটি ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ পুলিশের চিহ্নিত অংশ। 

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মুখোশধারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সহায়তায়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় এবং পুলিশ হাসপাতালের সামনে বাস ও গাড়িতে আগুন দেয়। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যাও করে, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশের কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি, যা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়। এই নৃশংসতার পর, বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলসমূহ, ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে জোরদারের প্রস্তুতি নিলে আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশজুড়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের এক নোংরা কৌশল অবলম্বন করে। অগ্নিসংযোগের ঘটনা বন্ধ করতে বা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারে, ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে, পুলিশের সহযোগিতায় ও পরিকল্পিতভাবে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে। অগ্নিসন্ত্রাসের সময় নীরব দর্শক হিসেবে পুলিশের মৌন সহযোগিতা, নাশকতা শেষে অপরাধীদের অবলীলায় ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়া এবং পরবর্তীতে এর দায়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রায় ২৫ হাজার গণগ্রেফতার ও ২৭ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা- গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের আলামত স্পষ্ট। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরা তালিকা করে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করছে। বিশেষত অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগে তারা ছাত্রদল ও যুবদলের সদস্যদের টার্গেট করছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। পুলিশের দাবি করা তথাকথিত সহিংসতার স্পট থেকে অনেক দূরে, ভিন্ন কোনো এক জায়গা থেকে গ্রেফতারের পর প্রতারণামূলকভাবে সেই গায়েবি ঘটনার সঙ্গে আমাদের ছেলেদের সম্পৃক্ত করে অভিযোগ বানাচ্ছে। 

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বানোয়াট অভিযোগ ও গায়েবি মামলাসমূহ সাজানো হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে বিএনপির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের যৌথ এই উদ্যোগ আসলে সরকারের মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। এটি আজ দৃশ্যমান যে, সরকার একটি সিস্টেম্যাটিক ফরমুলা অনুসরণ করছে। প্রথমে তারা মিডিয়া কাভারেজ দিয়ে নাশকতার ঘটনা তৈরি করে। এরপর বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহের ওপর দায় চাপিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রদান করে ও আমাদের চলমান আন্দোলনকে বিতর্কিত করার একটি হীন প্রচার চালায়। এই পরিকল্পনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো দেশব্যাপী অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং এই নাশকতাগুলোকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেয়া। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্বকারী দল বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, অবিশ্বাস্য এই হীন অপবাদ চাপিয়েই পুলিশ কাল্পনিক মামলা এবং বানোয়াট অভিযোগ নথিভুক্ত করে চলেছে। এমনকি ইতোমধ্যে বিএনপির যেসব সদস্য মারা গিয়েছেন বা গুমের শিকার হয়েছেন, সেসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। কোনো নিরপেক্ষ বা স্বাধীন সাক্ষী ছাড়াই মিথ্যা পুলিশি সাক্ষ্যকে একমাত্র প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বিচার বিভাগের ধারাবাহিক পূর্বপরিকল্পিত এই রায়সমূহ আইনের অনুশাসনের সার্বিক অবক্ষয়কে পুনঃপ্রমাণিত করে তুলছে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়