Apan Desh | আপন দেশ

শোকের দিনে উল্লাস করছে বিএনপি, ভালো নেই দেলোয়ারপন্থিরা

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ০১:২১, ১৬ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৩:৫৭, ১৬ মার্চ ২০২৩

শোকের দিনে উল্লাস করছে বিএনপি, ভালো নেই দেলোয়ারপন্থিরা

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত শব্দ ‘ওয়ানইলেভেন’। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার অপচেষ্টা ছিল দেশের উচ্চাবিলাসী একটি মহলের। দুই নেত্রীকেই কারাবন্দি করা হয়। তাদের সাচ্চা ও বিশ্বাসী সিনিয়র নেতাদেরকেও বন্দি রাখা হয় একজেলে। 

২০০৭ সালের এই সময়ে আওয়ামী লীগের অনৈক্য দেখা না গেলেও বিএনপিতে দুটি গ্রুপ তৈরী করা হয়। একটি সংস্কারপন্থি আরেকটি খালেদাপন্থি।

বিএনপি থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন তারা; যাদের সংস্কারপন্থি বলা হয়। আর সংস্কারপন্থিদের বিপরীতে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন তাদেরকে ‘খালেদাপন্থি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। তখন খালেদা জিয়া ছিলেন সাব-জেলে। সংস্কারপন্থিদের দখলে ছিল বিএনপি। বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসসহ দল সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই। দলের অস্থায়ী চেয়ারম্যান হয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান ও মহাসচিব নিযুক্ত হন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন দলের সাবেক ১২৭ জন এমপি-মন্ত্রী। যারা এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন।  

রাজনীতিতে কঠিন সময়ে এই খালেদাপন্থিদের কাণ্ডারী ছিলেন তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি নানামুখি চাপ সামলে দলের একনিষ্ট নেতা-কর্মীদের আগলে রেখেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন আ স ম হান্নান শাহ। 

২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাসচিব হিসেবে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিরোধীতা করেছিলেন কিন্তু জোটের শরিক জামায়াতের টানাটানিতে নির্বাচনে অংশ নেন খালেদা জিয়া। ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে পেয়েছিল ৩০টি। পরে এই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা সমাবেশে স্বীকার করেন খালেদা জিয়া। এরকম অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে মতের মিল হয়নি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের। দলীয় স্বার্থে দেলোয়ার হোসেন ছিলেন আপোষহীন। দলের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিতেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে একের পর এক সংস্কারপন্থি, অযোগ্য লোকদেরকে দলের উচ্চপদে আসীন করার বিপক্ষে অবস্থান নেন খোন্দকার দেলোয়ার। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সভা থেকে বাকবিতণ্ডা করে বের হয়ে আসার ঘটনা রয়েছে।

জানা যায়, ওয়ানইলেভেনের সময় ন্যাম ভবনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যারা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম রুহুল কবির রিজভী, অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, মহিউদ্দিন খান মোহন, ছাত্র দলের সাবেক সহসভাপতি ড. শামসুজ্জামান মেহেদী, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, নারী নেত্রীদের মধ্যে সাবেক এমপি শিরিন সুলতানা, নিলুফার চৌধুরী মনি, রেহানা আক্তার রানু, শাম্মী আখতার, ফাহিমা হোসেন জুবলি, নেওয়াজ হালিমা আর্লিরা ছিলেন। ডা. আরিফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম রতন, হাজী ইউসুফসহ আরো কয়েকজন।

ওই সময় দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা একমাত্র সদস্য আ স ম হান্নান শাহ-অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে যে চিঠি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া; হান্নান শাহ ওই চিঠির আলোকে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন।

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের জীবদ্দশায় তিনিসহ তার অনুসারিদের ললাটে অপমান, অবহেলা আর বঞ্চনা নেমে আসে। তার মৃত্যুর পর আরো করুণ পরিণতিতে দেলোয়ারপন্থিরা।

অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, শিরিন সুলতানা, মনি চৌধুরীসহ উল্লিখিতরা সাবেক সংসদ সদস্য হলেও গত নির্বাচনগুলোতে দলীয় মনোনয়ন তো দূরের কথা দলের নির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পাননি। অবজ্ঞার শিকার হয়ে কেউ কেউ রাজনীতিই বাদ দিয়েছেন। রুহুল কবির রিজভী দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব হলেও আছেন সংস্কারপন্থিদের ষডযন্ত্রের ডেরায়।

এদিকে দলের বহিষ্কৃত মহাসচিব কেএম ওবায়েদের কন্যা শ্যামা ওবায়েদকে সাংগঠনিক সম্পাদক কিন্তু আমৃত্যু মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর স্থান হয়নি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। দলীয় মহাসচিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। দেলোয়ার কেন্দ্রি পৃথক কোনো কর্মসূচি না থাকলেও উল্টো আছে আনন্দ-উল্লাসের সভা। এই দিনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের জেলা মানিকগঞ্জে ডাকা হয়েছে যুবদলের কর্মীসভা। তাতে থাকছে আনন্দ-উল্লাসের আয়োজন। অতীতে এই দিনে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী মানিকগঞ্জে প্রিয় নেতার কবর জিয়ারত করতেন, ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতেন। আর হান্নান শাহর মৃত্যুদিনে উল্লাস করা হয়েছে মহিলা দলের কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হান্নান শাহ মারা যান। ওইদিন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মিষ্টি বিতরণ করা হয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। ওইদিন সমালোচনা ও আক্ষেপ ছিল দেলোয়ারপন্থিদের- মৃত্যু সংবাদ শুনার পরও কেন কমিটি আর উল্লাস। একদিন বাদেও তো কমিটি দেয়া যেত।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি আপন দেশ’কে বলেন, দলের যখন চরম দুঃসময়, ভাঙ্গাচুড়া হচ্ছিল তখন কাণ্ডারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বাস ও আমানত রক্ষা করেছেন জীবন দিয়ে। এমন একজন নেতাকে গভীরভাবে স্মরণ করা আমাদের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

খোন্দকার দেলোয়ার হেসোনের ছেলে ড. আকবর হামিন বাবলু বলেন, এই দিনে মানিকগঞ্জে হাজার হাজার নেতাকর্মী আব্বার কবর জিয়ারত করতেন। দোয়া করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় মুত্যুদিনে যুবদলের সম্মেলন ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। কেন্দ্র থেকে যুবদল নেতারা এ উপলক্ষে আসবেন জেনে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নয়নকে ফোন করে জানিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। একটা দিন পেছানোর সুযোগও মেলেনি।   

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়