Apan Desh | আপন দেশ

বালিয়াকান্দির পান যাচ্ছে বিদেশে

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

বালিয়াকান্দির পান যাচ্ছে বিদেশে

ছবি : সংগৃহীত

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির মিষ্টি পান দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে। ফলে বছরে ৭০ কোটি টাকার বেশি আয় করছেন উপজেলার পানচাষিরা।সাচি ও মিষ্টি এই দু’ধরনের পান উৎপাদন করেন এখানকার চাষিরা। 

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির আগে এই উপজেলার পান আটটি দেশে রফতানি করা হত। তবে এখন যাচ্ছে চার দেশে। তাতে স্থানীয় ও বিদেশের বাজার থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭০ থেকে ৭৬ কোটি টাকার পান বিক্রি করছেন চাষিরা।

তিনি জানান, এ বছর ৮৫ হেক্টর জমিতে মোট ৮১৪টি পানের বরজ রয়েছে। যার মধ্যে ৫১৬টি সাচি পান ও ২৯৮টি মিষ্টি পানের বরজ। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ঢাকার বাজারে দুই ধরনের পানেরই চাহিদা থাকলেও শুধু মিষ্টি পানই বিদেশে যাচ্ছে।তবে রফতানি থেকে আয়ের সঠিক অঙ্ক জানাতে পারেননি এই কৃষি কর্মকর্তা।

বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, স্বর্প বেতেঙ্গা, খালকুলা, বালিয়াকান্দি, বহরপুর এলাকায় পানের বরজ বেশি দেখা যায়।

সরেজমিনে এসব এলাকায় দেখা যায়, পান বরজ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ পান রোপণের জন্য বরজ তৈরি করছেন, কেউ পুরাতন বরজ মেরামত করছেন, কেউবা আগাছা পরিষ্কার করছেন। অনেক চাষিই পান পাতা সংগ্রহ করছেন বাজারে বিক্রির জন্য।

চাষিরা জানান, প্রতি শতকে প্রায় ৫০০ গাছ থাকে। প্রতিটি গাছ থেকে সপ্তাহে দু’বার দুই থেকে তিনটি করে পাতা সংগ্রহ করা হয়।

পান পাতা বাজারে বিক্রি হয় পণ হিসেবে। প্রতি পণে ৮০টি পাতা থাকে। স্থানীয় বাজারে প্রতি পণ পানের দাম পাওয়া যায় ৪০ থেকে ১২০ টাকা। অর্থাৎ আকার ভেদে প্রতিটি পাতা ৫০ পয়সা থেকে দেড় টাকায় বিক্রি হয়। এসব পান রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান পাইকাররা।

তবে রফতানির জন্য বাছাই করা ভালো মানের পান পাতা প্রতিটি দুই টাকা করে বা প্রতি পণ ১৬০ টাকায়ও বিক্রি হয়।

আড়কান্দি গ্রামের পানচাষি স্বপন কুমার দে জানান, পান গাছ একবার রোপণ করলে অন্তত দশ বছর পাতা সংগ্রহ করা যায়। এক পাখি জমিতে খরচ হয় এক লাখ টাকার বেশি।

অন্যদিকে পান গাছের রোগ বালাই একেবারেই কম, পরিচর্যাও কম করতে হয়। শুধু বছরে একবার করে বরজের মাচা মেরামত করতে হয়।

কৃষক মো. আজিজুল শেখ জানান, কয়েক বছর আগে তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে পান চাষ শুরু করেছেন। পানের মাচা তৈরি থেকে শুরু করে, সার-বীজ, বেড়া দেয়াসহ খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। প্রথম বছরেই সেই টাকা উঠে আসে।

তবে বাজারে এখন দাম ভালো থাকায় মাঝে মধ্যেই বরজ থেকে পান চুরি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারাও দিতে হচ্ছে বলে জানান এই চাষি।

আরও পড়ুন <> ‘সরিষাগ্রাম’ কাছাড়ীপাড়া

একই সমস্যার কথা জানালেন স্বপন কুমারও। তিনি বলেন, পান চুরি ঠেকাতে প্রশাসন মাঝে মধ্যে টহলের ব্যবস্থা করলে পানচাষিরা আরও লাভবান হবেন।

এই কৃষকরা আরও জানান, পান চাষে কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ দেয়।  কিন্তু রফতানিমুখী এই ফসলের উৎপাদন ও পাতার গুণগত মান বাড়াতে যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু তা তারা পাচ্ছেন না।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার আগে এই উপজেলার পান ভারত, পাকিস্তান, ভূটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া- এই আটটি দেশে রফতানি করা হত। করোনায় এলসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রফতানিও বন্ধ ছিল।

তিনি বলেন, আবারো পান রফতানি শুরু হয়েছে। বতর্মানে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতসহ চারটি দেশে পান রফতানি হচ্ছে। 

বালিয়াকান্দি থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চাষিদের পান চুরির বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ