Apan Desh | আপন দেশ

পাবনায় দিনে দুপুরে লাখ টাকার গাছ লোপাট!

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৬ মার্চ ২০২৪

পাবনায় দিনে দুপুরে লাখ টাকার গাছ লোপাট!

ছবি: আপন দেশ

পাবনার সদর উপজেলা চত্বর কয়েক লাখ টাকার সরকারি গাছ লোপাট হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকতা কর্মচারীর বিরুদ্ধে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ও বন বিভাগের ব্যয়ের হিসাব ছাড়াই গাছগুলো সরিয়ে নেয়া হয় একটি স’মিলে। গাছ বিক্রি করা হয়নি। এমন দাবি করলেও, স’মিলে পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন কর্মচারীরা।

সূত্রে জানা যায়, উপজেলা চত্বর থেকে কেটে রাখা হয় প্রায় ৪০ গাছের গুড়ি। এগুলো ইউএনও বাসভবনের সামনে রাখা ছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগকে গাছগুলো মরা উল্লেখ করে গুড়ি, ডালপালা অপসারণে সরেজমিন পরিদর্শন করেন ইউএনও শামীমা সুলতানা। মূল্য পরিমাপের জন্য চিঠিও পাঠান। এর ভিত্তিতে বন বিভাগের একজন কর্মী গাছগুলো পরিদর্শন করেন। তবে পরিমাপ সম্পন্ন হয়নি। 

সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে গাছের গুড়িগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। 

চিঠির সূত্র ধরে উপজেলা বনবিভাগে গিয়ে কথা হয় জরিপে যাওয়া বন বিভাগের মালি শফিজ আলীর সঙ্গে। বলেন, অফিসের নির্দেশে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জরিপে উপজেলা কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে ৪০টিরও বেশি মেহগনি গাছের গুড়ি দেখতে পাই। প্রাথমিক জরিপ কাজ সঠিক না হওয়ায় ১৮ ফেব্রুয়ারি আবারও জরিপে গিয়ে গাছ পাইনি। ফেরত এসেছি। তবে গাছগুলো দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় কিছু কাঠ নষ্ট হয়েছে। এ থেকে অন্তত ২০০ সিএফটি কাঠ হওয়ার কথা। 

সরেজমিনে বুধবার (৬ মার্চ) সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের চত্বরে দেখা যায়, মাটিতে স্তুপাকারে রাখা গাছের দাগ আছে। কিন্তু সেখানে কোন গাছ নেই। নিরপত্তা প্রহরীরা জানান, কয়েকদিন আগে গাছগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শাহীন হোসেন মালিথা গাছগুলো স’মিলের লোকজনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে তারা বলেন, স’মিলের কাঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে গাছগুলো সরানো হয়েছে বলে শুনেছি। এর আগেও শাহীন উপজেলা প্রশাসনের গাছ নিলাম ছাড়াই লোক দেখানো নামমাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি দেখিয়ে পরে তা লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছে। তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে। মরা গাছ গুলো থেকে ২০০ সিএফটি কাঠ হলেও তার বাজার মূল্য কমপক্ষে তিন লাখ টাকা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, সদর উপজেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী শাহীন হোসেন মালিথা বলেন, এখানে কোন কাঠের গাছই ছিল না। কিছু মরা ডালপালা ছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য তা সরানো হয়েছে। ৪০ কাঠের গুঁড়ি কোথায় সরানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। বন বিভাগের বক্তব্য ও প্রমাণ দেখানোর কথা জানালে তিনি গাছগুলো স’মিলে পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অবান্তর অভিযোগ মন্তব্য করে অভিযোগকারীর পরিচয় জানতে চান। আইনগত প্রক্রিয়ায় সব কাজ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য মরা গাছগুলো উপজেলা চত্বরের পেছনে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে নিলাম করার জন্য প্রক্রিয়াও করা আছে। বন বিভাগের নির্ধারিত মূল্য জেলায় অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি।

তবে ইউএনও’র বক্তব্যের সঙ্গে মেলেনি উপজেলা বন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদের বক্তব্য। তিনি জানান, ইউএনও’র চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মরা গাছেরগুলোর মূল্য পরিমাপের জন্য আমাদের অফিস আদেশ হয়। এতে পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি অফিসের মালি শফিজ আলীকে গাছগুলো পরিদর্শনে পাঠানো হয়। 

পরিমাপ সঠিক না হওয়ায় প্রতিবেদন না দিয়ে পুনরায় পরিমাপের নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে অফিসের পরিদর্শক দল পরিমাপে গিয়ে সেখানে গাছগুলো আর পায়নি। ফলে আমরা প্রাক্কলন প্রতিবেদন দিতে পারিনি। উপজেলা প্রশাসনও আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।

পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান ডিসি সম্মেলনে জেলার বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফ আহমেদ বলেন, প্রাক্কলন অনুমোদন ও নিয়মতান্ত্রিক নিলাম প্রক্রিয়ার আগে সরকারি সম্পদ স্থানান্তরের সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়