Apan Desh | আপন দেশ

অধরা লস্কর ধীরা, আতঙ্কে খুলনাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২৪ মার্চ ২০২৪

অধরা লস্কর ধীরা, আতঙ্কে খুলনাবাসী

আপন দেশ। ফাইল ছবি

শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা। নাম শুনলেই আতকে উঠেন খুলনার বাসিন্দারা। তটস্থ ব্যবসায়ীরা। গত ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ১৪ বিশিষ্টজনের ঘুম হারাম। লস্কর ধীরার ছোবল থেকে রক্ষা পেতে নিয়েছেন আইনের আশ্রয়। তার হাতে সাংবাদিক হতাহতের ঘটনা একাধিক- এ অভিযোগ খুলনার সাংবাদিকদের। লস্করের ফাঁসির দাবিতে শহরের অলিগলিতে সাঁটানো হয়েছে তার ছবিযুক্ত পোস্টার। কিন্তু তাতে সশস্ত্ররা ফুঁসে উঠেছে। আর ভুক্তভোগীরা প্রাণ বাঁচাতে দিশেহারা।

দক্ষিণাঞ্চল খুলনায় সাংবাদিক হতাহতের চিত্র ভয়ঙ্কর। এ অঞ্চলে আছে চরমপন্থিদের পদচারণা। সাধারণ মানুষের কানে আসে অস্ত্রধারীদের হুঙ্কার। সন্ত্রাসীদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে খুলনায় অর্ধডজন সাংবাদিককে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার বিএল কলেজ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম রফিক, খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অনির্বাণ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি নহর আলী ও শুকুর আলী, দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার ক্রাইম রির্পোটার হারুন অর রশিদ, দৈনিক সংবাদের খুলনা ব্যুরো চিফ মানিক চন্দ্র সাহা, খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু। 

এছাড়াও অনেকেই জীবনযাপন করছে পঙ্গুদশায়। তাদের কারও হাত নেই, কারও নেই পা, আবার কারও চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিচারের জন্য ঘুরছে। এক শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা আতঙ্কে জিডি করেছেন ১৪ জন। আবার কেউ করেছেন মামলা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নিহত সাংবাদিক পরিবারগুলো বিচার পায়নি আজও। জিডি-কারীদের ঘুম হারাম।

আরও পড়ুন>> সাংবাদিক সাব্বিরের ওপর হামলায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

বিশেষ করে খুলনার খ্যাতনামা সাংবাদিক শেখ বেলাল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকরা আজ অবধি বিচার পায়নি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি খুলনা শহরে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে নামে। আয়োজন করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার। সভায় সাংবাদিক হত্যায় ইন্ধনদাতা, অর্থ যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারীর বিচারের দাবি জানানো হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা নিরাপত্তার জোর দাবি জানান। সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এর আগে, সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনের স্বজন ও সাংবাদিকরা অন্যতম আসামি শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার ‘ফাঁসি’র দাবিতে খুলনা শহরের অলিগলিতে পোস্টার সাঁটায়। 

২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে সন্ত্রাসীদের রাখা রিমোট কন্ট্রোল বোমায় শেখ বেলাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। তিনি প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো চিফ ছিলেন। ভর্তি করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরদিন শারীরিত অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

খুলনা সদর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে দু’টি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্তে শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা, এখলাসুর রহমান এখলাস, চরমপন্থি নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে হাসান, ইকবাল হোসেন স্বাধীন, মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, রিকশাচালক গদা ইউনুসকে হত্যা মামলার আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।

সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনের ছোটভাই শেখ শামছুদ্দিন দোহা বলেন, এ মামলায় কয়েকজনকে নামমাত্র সাজা দেয়া হয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা ও অর্থ যোগানদাতাদের নাম আসেনি। ফলে আমার ভাইয়ের হত্যার প্রকৃত বিচার পায়নি।

আরও পড়ুন>> সাগর-রুনি হত্যা: প্রতিবেদন পেছালো ১০৬ বার

সাংবাদিক এহতেশামূল হক শাওন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দক্ষিণাঞ্চলের সাংবাদিকতা নজিরবিহীন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৫ জুলাই লস্কর ধীরাকে ঢাকা সিআইডি পুলিশ গ্রেফতার করে। দুই দিন রিমান্ড দেয়া হয়। মুখ না খোলায় আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। 

শাহাবুদ্দিন লস্কার ধীরা খুলনা ২৩ নং ওয়ার্ডের জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি। বিশেষ গ্রুপের নিয়ন্ত্রক। আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন তার নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। সংবাদ প্রকাশ করতে গেলে লস্কর ধীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বারবার আক্রমণও করেন।

চরমপন্থি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন প্রথম কলম ধরেন। ফলে প্রতিহিংসার শিকার হন। 

আরও পড়ুন>> ‘সরকার সাংবাদিকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির বিপক্ষে’

শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা তার ভাই ডাক্তার শওকাত আলী লস্করের সহায়তায় ঢাকায় হাউজিং ব্যবসা শুরু করেন। জিয়োপ্রপার্টিজ নামে হাউজিং কোম্পানির এমডি হন। একই সঙ্গে বায়োগ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিপিএল হাউজিংয়ের প্রজেক্ট ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেন। এ প্রজেক্টের অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। যা কোম্পানির তদন্তরিপোর্ট ও অডিটরিপোর্টে উঠে এসেছে। বৈধ-অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। 

এছাড়া হত্যা মামলার নাটক সাজিয়ে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১৪টি জিডি দায়ের হয়েছে। জিডিগুলোর মধ্যে রয়েছে জিডি নং ১২৩, তারিখ- ০৩/০১/২০২৪ (হাতিরঝিল থানা); জিডি নং- ২২০, তারিখ- ৫/০১/২০২৪ (রুপনগর থানা); জিডি নং- ১৩৮, তারিখ- ০৩/০১/২০২৪ (রুপনগর থানা); জিডি নং- ২২৬, তারিখ- ৩/০১/২০২৪ (মোহাম্মদপুর থানা); জিডি নং- ৭৫০, তারিখ ১১/০১/২০২৪ (মোহাম্মদপুর থানা); জিডি নং- ৭৩ তারিখ, ০২/০১/২০২৪ (আদাবর থানা); জিডি নং- ১৩০, তারিখ- ০৩/০১/২০২৪ (কলাবাগান থানা); জিডি নং- ১৫০৭, তারিখ- ৩১/১২/২০২৩ (কলাবাগান থানা); জিডি নং- ৫০৭, তারিখ ৮/০১/২০২৪ (মোহাম্মদপুর থানা); জিডি নং- ৪৪৬, তারিখ ০৯/০১/২০২৪ (ধানমন্ডি থানা); জিডি নং- ৪২৩, তারিখ- ১০/০১/২০২৪ (আদাবর থানা); জিডি নং- ৩৮৫, তারিখ- ১০/০১/২০২৪ (কলাবাগান থানা); জিডি নং- ৬৩৮, তারিখ- ১৫/০৩/২০২৪; জিডি নং- ৬৪৮, তারিখ ১১/০৩/২০২৪। কলাবাগান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলা নম্বর- ৫, তারিখ ০৭/০৩/২০২৪। 

পুলিশের দাবি, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজছে। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। 

অজ্ঞাত স্থানে থাকায় শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আপন দেশ/এবি/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়