Apan Desh | আপন দেশ

তৃতীয় শ্রেণির জেমি বাবার ক্যানসারের কাছে অসহায়

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২০ এপ্রিল ২০২৪

তৃতীয় শ্রেণির জেমি বাবার ক্যানসারের কাছে অসহায়

ছবি : সংগৃহীত

পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসীর বাসিন্দা ১০ বছরের শিশু জেমি আক্তার। গরিব পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ভাগ্যহীন সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অন্য আট থেকে ১০টি শিশুর থেকে তার জীবন আলাদা।

পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় বাবার অসুস্থতার কারণে বইয়ের ব্যাগের পরিবর্তে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়েছে তার কাঁধে।

এ শিশুর চোখে-মুখে নানা স্বপ্ন থাকলেও, ক্যানসারে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসার টাকা যোগাড়সহ দুমুঠো ভাতের আশায় দেড় বছর ধরে উপজেলা পরিষদ মার্কেটে পরিচালনা করছে ‘জেমি জুই স্টোর’ নামের দোকানটি। টানা ১৩ ঘণ্টা বাবার দোকানটি পরিচালনা করে চালাচ্ছে সবার ভরণপোষণ।

শিশুটি জাহিরুল ইসলাম ও গোলাপী আক্তারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে সে বড়। সে মোলানি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়লেও পরিবারের দায়িত্ব পালন করছে।

স্থানীয়রা জানায়, পরিবারটি একটা সময় হাসি-খুশি থাকলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে কর্তা জাহিরুল। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে ক্যানসারের বিষয়টি অবগত হয়। এদিকে সুস্থতার জন্য বাড়িতে থাকা গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করে। এর মাঝে ভারতে চিকিৎসা শুরু করলেও টাকার সংকট দেখা দেয়। খাবারসহ টাকার সমস্যার কারণে বাবার একমাত্র দোকানটি পরিচালনা করছে শিশু জেমি।

আরও পড়ুন <> চাকরি পেয়ে লাপাত্তা প্রেমিক, বিয়ের দাবিতে অনশন

এদিকে মাঝে মধ্যে মাকে দোকানে রেখে বিদ্যালয়ে গেলেও দায়িত্বের কারণে অনেক সময় বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না তার। আর এ দোকান দিয়ে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনোমতে চিকিৎসাসহ পরিবার চলছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আলিয়ার রহমান বলেন, ‘অনেকদিন ধরে বাচ্চাটি এই দোকান করছে। আমরা চেষ্টা করি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তার দোকান থেকে নেয়ার।’

আমিরুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, ‘ছোট্ট বাচ্চা হয়ে যে কাজ করছে, এতে আমরা সবাই অবাক। তার বাবা অসুস্থ, এখন পরিবারটিকে চালাচ্ছে সে। আমরা যতটুকু পারি চেষ্টা করি তাদের সহায়তা করার।’

প্রতিবেশী দোকানিরা বলেন, ‘যে বয়‌সে বান্ধবীদের সঙ্গে খেলায় সময় কাটানোর কথা, স্কু‌লে যাওয়ার কথা। ঠিক সে বয়সে নিষ্ঠার সঙ্গে দোকানটি পরিচালনা করছে এ ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি। আমরাও তার দোকানের খোঁজখবর রাখছি, যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে।’

শিশুটির মা গোলাপী আক্তার বলেন, ‘চিকিৎসার পিছনে সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। এখন এই মেয়েটি ও দোকানটি আমাদের একমাত্র ভরসা। তবে এর মাঝে আমরা খুব মানবেতর অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছি। সহায়তার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমাদের।’

এদিকে, জাহিরুলের প্রথমে হাতে ক্যানসার ধরা পড়লেও, এখন সেটি বেড়ে গেছে। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বর্তমানে ভারতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেটিও বন্ধের পথে। 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়